বিশেষ প্রতিবেদন

রেলে ৫ বছরে লোকসান ৪২৩১ কোটি টাকা

সাধারণ হিসাব অনুযায়ী, আয় বুঝে ব্যয় করার কথা থাকলেও তা খাটছে না বাংলাদেশ রেলওয়ের বেলায়। সেবার মান ও রাজস্ব আয় না বাড়লেও বছর বছর বেড়েই চলেছে সংস্থাটির পরিচালন ব্যয়, যা এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনের পিছনেই খরচ হচ্ছে বেশি।  আয়ের চেয়ে দ্বিগুণ ব্যয়ের কারণে ভারী হচ্ছে লোকসানের পাল্লা। চলতি বছরের প্রতিষ্ঠানের লোকসানের অংক হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। রেলওয়ে সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।সূত্র জানায়, সেবার মান ও লোকসান কমানোর জন্য বাড়ানো হয় রেলের ভাড়া। এতে যাত্রীদের পকেট থেকে দুই দফায় ৬০ শতাংশ বেশি অর্থ আদায় হলেও প্রতিষ্ঠানটির লোকসান কমেনি। বরং গত ৫ বছরে লোকসান দিয়েছে ৪ হাজার ২৩১ হাজার কোটি টাকা।তবে লোকসান কাটিয়ে রেলকে লাভে নিয়ে যাওয়া কথা জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, রেলের উন্নয়নে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মেগা প্রকল্প নেয়াসহ রেলে নতুন কোচ যুক্ত হয়েছে, নতুন ইঞ্জিন এসেছে, টাইম শিডিউল ঠিক হয়েছে, কোচের ভিতরের আসনও উন্নত হয়েছে। তাছাড়া ডাবল লাইন নির্মাণ, রেল সেতুগুলোতে সংস্কারও করা হচ্ছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে রেল লাভে চলে আসবে।অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যে দেখা গেছে, ২০১০-১১ সালে ভাড়া বাড়ানোর আগের বছর রেলের আয় ছিল বছরে ৭৪৭ কোটি টাকা, ভাড়া বাড়ানোর পর ২০১২-১৩ সালে আয় হয়েছে ৮০৪ কোটি টাকা। বেড়েছে মাত্র ৫৭ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অর্থাৎ, ওই সময় ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়লেও আয় বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে রেলের ভাড়া বেড়েছে।এদিকে সেবা ও আয় না বাড়লেও ঠিকই বছর বছর বাড়ছে রেলের ব্যয়। ২০০৯-১০ অর্থবছরে রেলের ব্যয় ছিল ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকায়। এরপর ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১ হাজার ৬০১ কোটি টাকা এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্যয় হয় ১ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ চলতি বছরের সবর্শেষ ব্যয়ের হিসেব ১ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা, যা বছর শেষে আরো বাড়বে।সূত্র আরো জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে আয় ৭৪৭ কোটি টাকা, লোকসান ৯৫৮ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে আয় ৭২৬ কোটি টাকা, লোকসান ৮৪১ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে আয় ৮০৪ কোটি টাকা, লোকসান ৭৫৮ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আয় ৮০০ কোটি টাকা, লোকসান ৮০১ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আয় ৯৩৫ কোটি টাকা, লোকসান ৮৭৩ কোটি টাকা। আর চলতি বছরে আয় ৯৪০ কোটি টাকা, লোকসান ৯৫৮ কোটি টাকা।গত ৫ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে রেলওয়ের উন্নয়নে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হলেও তার সুফলও মিলছে না। রেলওয়েতে বর্তমানে প্রায় ৪৯টি উপপ্রকল্প চলামন রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে সুফল পাবেন যাত্রীরা, আশ্বাস মন্ত্রণালয়ের। আবার সড়ক ব্যবস্থার পাশাপাশি রেলপথকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে ২০ বছরের মাস্টার প্ল্যান নেয়া হয়েছে। এতে খরচ করা হবে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা।তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সঠিক সময় ট্রেন না ছাড়া, টিকিট না পাওয়া, টিকিট কাটতে গিয়ে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হওয়া, যত্রতত্র ট্রেন থামা, বগির বেহাল দশাসহ নানা কারণে রেলে ভ্রমণে মানুষ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। রেলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে হলে এসব সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।এমইউএইচ/জেএইচ/এবিএস

Advertisement