বিশেষ প্রতিবেদন

৪ হাজার টন বর্জ্যের জন্য মাত্র দুটি ডাম্পিং স্টেশন

বর্জ্য। রাজধানী ঢাকার নিত্যদিনের এক সমস্যা। এ সমস্যায় নাগরিক জীবন যেন ওষ্ঠাগত। নগরের দায়িত্বে যিনিই এসেছেন, তিনিই নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু উদ্যোগ-উদ্দীপনা ঘোষণাতেই আটকে থেকেছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চিত্র বদলেছে রাজধানীরও। তবে বর্জ্য সমস্যা থেকেছে আগের মতোই। বিভক্ত নগরীর দুই মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দিতে নানা চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন এসেছেও বটে। কিন্তু মানুষ তাতে ভরসা রাখতে পারছে না। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বর্জ্য অপসারণ এখনও এই শহরের মৌলিক সমস্যাগুলোর একটি। বর্জ্য, বর্জ্য অপসারণ, অপসারণে অব্যবস্থাপনা, বর্জ্য থেকে জীবিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু, নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সুব্রত মণ্ডল। আজ থাকছে পঞ্চম পর্ব।একটু বৃষ্টি হলেই রাজধানীর উত্তরের ডোবা-নালার পানি মিশে যায় তুরাগ নদীতে। তবে এখন শুধু পানিই মিশছে না, পানির সঙ্গে আমিনবাজার ডাম্পিং স্টেশনের বর্জ্য এবং বর্জ্য থেকে বেরিয়ে আসা পানিও মিশে যাচ্ছে তুরাগ নদীতে। ডাম্পিং স্টেশনে বাউন্ডারি বা সীমানা প্রাচীর থাকার কথা। কিন্তু সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে কোনো প্রকার বাউন্ডারি দেখা যায়নি। আদৌ এখানে বাউন্ডারি ছিল কি না তার কোনো আলামতও পাওয়া যায় নি।তবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এর প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন (বিএন) বিপন কুমার সাহা বলেন, বাউন্ডারি আছে এবং বর্জ্যের পানি নদীতে মেশার কথা নয়।রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ফেলার জন্য রয়েছে মাত্র দুটি ডাম্পিং স্টেশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সব আবর্জনা যাত্রাবাড়ির পাশে মাতুয়াইলে এবং উত্তরে আমিনবাজার ডাম্পিং স্টেশনে স্তুপ করা হয় ।মাতুয়াইলের ডাম্পিং স্টেশনের বয়স প্রায় সাড়ে তিন দশক। শত একর জমির উপর এই ডাম্পিং স্টেশনের ধারণ ক্ষমতা এ বছরই শেষ হওয়া কথা। অপরদিকে মাতুয়াইলের স্তুপের ওপর চাপ কমানোর জন্য ২০০৮ সালে গাবতলীর অদূরে আমিনবাজার সংলগ্ন এলাকায় ৫০ একর জমির ওপর দ্বিতীয় ডাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হয়। যে বিধিমালা এবং পরিবেশ আইনের ওপর একটি ডাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হয় তার অনেক কিছুই অনুপস্থিত এ ডাম্পিং স্টেশনটিতে। আমিনবাজার ডাম্পিং স্টেশনের বর্জ্য খুব সহজেই তুরাগ নদীর পানিতে পানিতে মিশে যাচ্ছে। অথচ সুরক্ষিত সীমনাপ্রাচীর দিয়ে এই বর্জ্য এবং এর পানি আটকানোর কথা ছিল। ডাম্পিং স্টেশনের গেটে দাঁড়িয়ে কথা হয় সেখানে দায়িত্বে থাকা সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মচারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি আগে মাতুয়াইলের ডাম্পিং স্টেশনে কর্মরত ছিলাম। মাতুয়াইলের ডাম্পিং স্টেশন থেকে পানি যেভাবে নিষ্কাশন করার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে সেভাবে হয় না। সীমনা প্রাচীরও আর দেখা যায় না। কোন পাশে প্রাচীর রয়েছে আপনি তা দেখতে পাবেন না। এ কারণেই স্তুপ থেকে ময়লা উপচে পড়ে নদী, নালার পানিতে মিশে যাচ্ছে এবং ভয়ঙ্করভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।    ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এর প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন (বিএন) বিপন কুমার সাহা অবশ্য অন্য কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘স্তুপের পাশ ঘিরে সীমানা প্রাচীর রয়েছে এবং নদীর পানিতে বর্জ্য মিশছে না। এ ব্যাপারে উত্তর সিটি প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক এবং ডাম্পিং স্টেশনটি পরিবেশবান্ধব করে তুলতে সর্বাত্বক চেষ্টা করা হচ্ছে।’এএসএস/এএস/এআরএস/এবিএস

Advertisement