জাগো জবস

লক্ষ-কোটি ডলার আয় করা সম্ভব : শেখ রাজিব

শেখ রাজিবুল ইসলাম পেশায় সিনেমাটোগ্রাফার। বুয়েটে পড়ে ইঞ্জিনিয়ার না হয়ে নিজেকে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে। বহুদিন ধরেই সুনামের সাথে বিজ্ঞাপনসহ নানা ধরনের ফিলমোগ্রাফি, ডকুমেন্টারি, শর্টফিল্ম এবং টেলিভিশন নাটক তৈরিতে কাজ করছেন ক্যামেরার পেছনে। তিনি গ্রামীণফোনের ‘অসম্ভবকে সম্ভব করা’ ও ‘ডিম বেচা’র বিজ্ঞাপন, গাজী টিভির ‘আমি যা দেখি তুমি কি তা দেখো’, এখানেই ডটকমের প্রথম বিজ্ঞাপন, ক্রাউন সিমেন্ট, ডোজ ইন্টারনেট এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বিজ্ঞাপনে ক্যামেরায় চোখ রেখে হয়েছেন প্রখ্যাত। এখন পর্যন্ত মোট কাজ করেছেন দুইশ’রও অধিক বিজ্ঞাপনে। আধুনিক সময়ের ভিন্ন ও চ্যালেঞ্জিং এ সিনেমাটোগ্রাফি ক্যারিয়ার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয় জাগো জবসের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গোলাম রাব্বী।জাগো জবস : শুরুতেই আপনার পড়াশোনা নিয়ে যদি কিছু বলতেন-শেখ রাজিবুল ইসলাম : আমি মূলত আর্কিটেচার বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছি বুয়েটে। তবে অনেকেই আমার বর্তমানের ভালো মানের কাজ দেখে মনে করে আমি বোধহয় ফিল্ম, মিডিয়া বা ফটোগ্রাফি টাইপের কিছুতে পড়ালেখা করেছি। তবে হ্যাঁ, এটা সত্য সিনেমাটোগ্রাফার হওয়ার আগে ফটোগ্রাফি-ভিডিওগ্রাফি নিয়ে হাতে-কলমে আমি অনেক অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান নিয়েছি। জাগো জবস : সিনেমাটোগ্রাফার হওয়ার পেছনের বিভিন্ন কোর্স বা কর্মশালা নিয়ে যদি বলতেন-শেখ রাজিবুল ইসলাম : বেগ আর্ট ইনস্টিটিউশন থেকে ফটোগ্রাফি নিয়ে ডিপ্লোমা করেছি। এছাড়াও সেন্ট্রাল এশিয়ান আর্টস অ্যান্ড কালচারাল সেন্টার থেকে ফটোগ্রাফির উপর বেসিক কোর্স করি। আর বুয়েটে আমার নিজের ডিপার্টমেন্টের ফটোগ্রাফি ক্লাব ‘আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট ফটোগ্রাফি সোসাইটি’তে যুক্ত ছিলাম। তবে মূলত কাজের সুবাদে আমি দেশ এবং দেশের বাইরে কিছু বড় মাপের ডিরেক্টর অফ ফটোগ্রাফারের (ডিওপি) সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, যা আমাকে এ পর্যায়ে পৌঁছাতে সহযোগী ভূমিকা পালন করেছে।জাগো জবস : আপনার প্রথম বিজ্ঞাপন কোনটি?শেখ রাজিবুল ইসলাম : প্রথম বিজ্ঞাপনটা ছিলো একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির। ওই কাজটিতে পরিচালক ছিলাম আমি নিজেই। ওখানে ডিওপি মানে ডিরেক্টর অফ ফটোগ্রাফি ছিলেন রাশেদ জামান।জাগো জবস : ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েও ক্যামেরার পেছনে যুক্ত হলেন কীভাবে?শেখ রাজিবুল ইসলাম : আমি ক্রিয়েটিভ তথা নতুন বা ভিন্ন টাইপের কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। আমার জায়গা থেকে কাজটা আর্কিটেকচারে করা কঠিন ছিল। তাই ক্যামেরার পেছনে আসা। তবে বর্তমানে এ ক্যামেরার পিছনে থাকতে পারাতেই আমার যত ভালোলাগা।জাগো জবস : শুরুর দিকের কোনো অভিজ্ঞতা যদি শেয়ার করতেন-শেখ রাজিবুল ইসলাম : তখন আমি বুয়েটে পড়ি। আগেই বলেছি, সেসময় থেকেই আমি ফটোগ্রাফি করতাম। দীর্ঘ আট বছর ফটোগ্রাফি করেছি। সেই সুবাদে আমার এক বন্ধু আমাকে জানাল, স্পেন থেকে দু’জন আসছেন চট্টগ্রাম শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের ওপর একটি ডকুমেন্টারি বানাতে। আমি আর আমার বন্ধু চলে যাই তাঁদের সাহায্য করতে। গিয়ে শুনলাম, শিপ ইয়ার্ডে বিদেশিদের ঢুকতে দেয়া হবে না। রাতে হোটেলে ফিরে তারা খুবই হতাশ। পরে চিন্তা করে আমাকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করতে বলল। ওদিকে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে কাজ করার পূর্ব কোনো ধারণাই আমার ছিল না। পরে কাজ উদ্ধারের জন্য ওরা আমাকে ভিডিওগ্রাফি কিছুটা শিখিয়ে দিল, কোন বাটনের কী কাজ। আমি কাজ শুরু করলাম। আমার ফটোগ্রাফির জ্ঞান দিয়ে শুট করলাম। তারা আমার ফুটেজ দেখে খুশি হলো।জাগো জবস : কার অনুপ্রেরণায় সিনেমাটোগ্রাফার হয়ে গেলেন?শেখ রাজিবুল ইসলাম : আসলে আমি নিজে থেকেই কাজটা পছন্দ করতাম। আর ক্যামেরা নিয়ে চলাফেরা, কাজ করাটা ছিলো আমার স্বপ্ন। সেখান থেকেই এ পেশা যুক্ত হওয়া। আর আজ অবধি নিরন্তর চলছে ছুটে চলা।জাগো জবস : ক্যামেরার কাজ করতে গিয়ে যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়-শেখ রাজিবুল ইসলাম : আমাদের দেশে ক্যামেরার পেছনে কাজ করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। আমরা খুব একটা টেকনিক্যাল সাপোর্ট পাই না। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হয়। তবে এটা ঠিক, চ্যালেঞ্জ নেয়া ছাড়া কোনো ভালো কাজও কিন্তু হয় না।জাগো জবস : আপনার এগিয়ে থাকার রহস্যটা একটু যদি বলতেন-শেখ রাজিবুল ইসলাম : শুরুতেই বলে নেই- আমাদের এখানে আমার মতো অনেকেই আন্তর্জাতিক মানের কাজ করছেন। দেশের বিজ্ঞাপনশিল্প অনেক এগিয়েছে। আমাদের বিজ্ঞাপনের মানও অনেক ভালো হয়েছে, হচ্ছে। মূলত বিজ্ঞাপনে সবার ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। এটা আসলে একটা টিমওয়ার্ক। আমি একজন প্রোডাকশন বয়কেও কাজের সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি; তাই হয়তো।জাগো জবস : পেশা হিসেবে সিনেমাটোগ্রাফি কেমন?শেখ রাজিবুল ইসলাম : আমাদের এখানে ভালো ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফির (ডিওপি) চাহিদা অনেক। আমরা সংখ্যায় খুব বেশি নই। আমি দেশে এবং দেশের বাইরে অনেক কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও করব। আমাদের তরুণ প্রতিভাবানদের এ পেশায় আরও এগিয়ে আসা উচিত।জাগো জবস : আপনার প্রফেশনে আয় ও সুযোগ-সুবিধা কেমন?শেখ রাজিবুল ইসলাম : আমার প্রফেশনে আয়ের চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারি। নিজের পছন্দ ও সময় অনুযায়ী কাজ নিয়ে আয় বাড়াতে বা কমাতে পারি। আর ডিরেক্টলি বললে, আধুনিক সময়ের এ বিজ্ঞাপনীয় যুগে আপনি নিজের যোগ্যতা-দক্ষতা-ক্রিয়েটিভিটি দেখাতে পারলে এ পেশায় টাকা নয় কেবল লক্ষ-কোটি ডলারও আয় করা সম্ভব।জাগো জবস : যারা এ পেশায় আসতে চান তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?শেখ রাজিবুল ইসলাম : প্রথমত- পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত- ক্যামেরা সম্পর্কিত পড়ালেখা করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারেন। তৃতীয়ত- যে যাই বলুক, লেগে থাকার মানসিকতা থাকতে হবে।জাগো জবস : পেশা নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা-শেখ রাজিবুল ইসলাম : আমি এখন বিজ্ঞাপনসহ ভিডিওগ্রাফির নানা জায়গার কাজ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করছি। আর এই শিক্ষাটা কাজে লাগাতে চাই চলচ্চিত্রের জন্য। চলচ্চিত্র নিয়ে আমি ভালো কিছু কাজের অনেক স্বপ্ন দেখি।এসইউ/এবিএস

Advertisement