দেশজুড়ে

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু সেতু পাড়ের বালু উত্তোলন

দেশের বৃহত্তর স্থাপনা বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানোর পরও বালু উত্তোলন চলছেই। সেতুর পূর্বপাড়ে বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস সীমানার উত্তরে ৩ কিলোমিটার জুড়ে সারি সারি ড্রেজারে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে গাইড বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়াসহ হুমকির মুখে পড়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ের উত্তরে ভূঞাপুর ও দক্ষিণে কালিহাতী উপজেলার অংশে পৃথক দুইটি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পরিবহন করছে। এরমধ্যে উত্তর অংশে ভূঞাপুর উপজেলার সিরাজকান্দি, নিকরাইল ও গোবিন্দাসী এলাকায় ৮টি পৃথক স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালী আ. হাই মো. ফিরোজ, আ. সামাদ, মাসুদ মেম্বার, হাবিব মাস্টার, ফেরদৌস প্রামাণিক, মো. দুলাল চকদার ও আ. মতিন সরকার সেতু বিভাগের পুকুরের পাড় দিয়ে বালু পরিবহনের রাস্তা তৈরি করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও সরবরাহ করছে।অপরদিকে, পূর্বপাড়ের দক্ষিণাংশে সেতু সীমানার প্রায় ৩০০ গজ দক্ষিণে কালিহাতী উপজেলার শ্যামশৈল, চরসিঙ্গুলী ও আলীপুর মৌজায় ড্রেজার বসিয়ে আড়াই মাস ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ীর বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার, প্রভাবশালী হান্নান হাজী, ছোট আ. হাই আকন্দ ও লিয়াকত আলী তালুকদারের নেতৃত্বে একাধিক স্পটে পৃথক ৪টি ঘাট স্থাপন করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও সরবরাহ করা হচ্ছে। উত্তোলন করা বালুভর্তি ট্রাক গুলো সেতু সংলগ্ন গ্যাস ফিল্ডের ওপর দিয়ে যাতায়াত করছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।এদিকে, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন-৩ শাখার এক পত্রের প্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ উল্লেখিত এলাকায় বালু উত্তোলন ও সরবরাহ বন্ধে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের কাছে পত্র দিয়েছে। সেতু বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহমুদ ইবনে কাসেম স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বালু উত্তোলন বা স্তুপের জন্য কোনো জমি কখনো ইজারা দেয়নি বা দেয়া হয়না। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের আপত্তি ও মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বালু পরিবহন কাজে কন্ট্রাক্ট-৭ সড়কের পুকুরের মধ্যবর্তী পাড়গুলোর ইজারা বন্ধ রাখা হয়েছে।এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর জেলা প্রশাসনের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়ছার খসরুর নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে গ্রেফতার করে। গত ১ জুন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ২১ লাখ টাকা জরিমানা ও ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। প্রশাসনের এহেন ব্যবস্থা গ্রহণে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা ২-৩ দিন বালু উত্তোলন বন্ধ রেখে পুনরায় বালু উত্তোলন ও সরবরাহ করছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, অতি স্পর্শকাতর (কেপিআই) এলাকা হলেও সেতু সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু সেনানিবাসের সীমানা ঘেষা নদী তীরে উত্তর দিকে ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কোনো নৌ-ঘাট না থাকলেও সারি সারি ড্রেজার মেশিন ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে। এক নজর দেখলেই বুঝা যায়, তীরে বেধে রাখা ড্রেজার মেশিনগুলো রাতে ব্যবহার করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, এসব ড্রেজিং মেশিনগুলো চালু করায় রুহুলী, কুকাদাইর ও মাটিকাটা অংশে বঙ্গবন্ধুসেতু রক্ষা গাইড বাঁধের স্টিলনেট, পাথর, জিও টেক্সটাইল ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। প্রমত্তা যমুনার করাল থাবা শুরু হলে সেতু রক্ষা গাইড বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ও বৃহত্তর স্থাপনা বঙ্গবন্ধুসেতু হুমকির মুখে পড়েছে।এ ব্যাপারে ভূঞাপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামান জানান, এতদাঞ্চলের মধ্যে শুধুমাত্র ভূঞাপুরের গোবিন্দাসীতে একটি নৌ-ঘাট রয়েছে, যদিও সেটা এখন প্রায় মৃত। বালু উত্তোলন, স্তুপ বা সরবরাহ বন্ধে সরকারি নির্দেশনা সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। তবে, সরেজমিন পরিদর্শন করে নৌ-পরিবহন বিধিমালা অনুসারে ড্রেজারগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।এফএ/পিআর

Advertisement