বছরের পর বছর ধরে স্থবির রয়েছে ৩৬টি উন্নয়ন প্রকল্প। গত ৬ থেকে ১০ বছর ধরে এসব প্রকল্প শুধু বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিকে (এডিপি) ভারি করেছে। এ অবস্থায় আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এডিপিতে এসব প্রকল্প আর অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাগো নিউজকে বলেন, এসব প্রকল্প বেশ কয়েক বছর থেকে স্থবির হয়ে রয়েছে। অর্থ থাকলেও নানা কারণে ব্যয় করতে পারছে না মন্ত্রণালয়গুলো এ অবস্থায় এগুলোকে বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন (আইএমই) বিভাগের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব প্রকল্পের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের সর্বোচ্চ ১১টি , রেলওয়ের ৯টি এবং সড়কের ৪টি প্রকল্প ছাড়াও আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এসব প্রকল্প নানা কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এর মধ্যে বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়া, অর্থছাড় না হওয়া, দফায় দফায় দরপত্র আহ্বান করে কোনো সাড়া না পাওয়া, যন্ত্রপাতি সংগ্রহে বিলম্ব, চার বছর ধরে টেন্ডার ডকুমেন্ট প্রক্রিয়াকরণ এসবের কারণে প্রকল্পগুলোর কোনো উন্নতি নেই।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে মাঝপথে এসে প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়া এক ধরনের অপচয়। কেননা অর্থ কিছু না কিছু হলেও ঠিকই ব্যয় হয়েছে। কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন দেয়া হয়েছে। প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেলে এ থেকে জনগণ কোন সুফল পাবে না। তারমানে রাষ্ট্রের অর্থের গচ্চা দেয়া হলো।এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ৩৬ প্রকল্পে এ পর্যন্ত কত টাকা ব্যয় হয়েছে তা জানা নেই। তবে আমরা মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে জুলাইয়ে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেব। তিনি আরো বলেন, অনেক প্রকল্প আছে যা গ্রহণের সময় প্রয়োজন ছিল, এখন নেই। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে বাস্তবায়নের আগেই। এজন্য এসব প্রকল্প চালু রাখার কোনো মানে হয় না।আইএমইডির তথ্যানুযায়ী, আগামী ২০১৭ সাল পর্যন্ত মেয়াদের মন্থর অগ্রগতি, ৫ শতাংশ বা কম অগ্রগতি এমন এবং গত ৬ থেকে ১০ বছর ধরে এডিপিতে রয়েছে এমন মোট ৪১টি প্রকল্প আগামী এডিপিতে রয়েছে। আবারো ওই সব স্থবির প্রকল্প এডিপিতে নেয়া হয়েছে। এদের বেশির ভাগ প্রকল্পের অগ্রগতি নেই বললেই চলে।জানা গেছে, ৫৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পশুর চ্যানেলের আউটার বারে ড্রেজিং প্রকল্পটি ২০০৬ সাল থেকে চলমান আছে। তবে কোনো অগ্রগতি নেই। প্রকল্প অনুমোদনের পর পাঁচবার দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র বিক্রি হলেও কেউ তা দাখিল করেনি। ২০০৮ সালে ষষ্ঠবার দরপত্র আহ্বান করলে ফ্রান্সের একটি ড্রেজিং কোম্পানি মেসার্স ইনডেপো দরপত্র দাখিল করে। এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই।বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো কারিগরি কাজের জন্য যে প্রকল্প নেয়া হয়েছে ২০০৭ সালে সেটা আজো চলছে। ২০০৯ সালে শেষ করার কথা থাকলেও তার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৩ সাল পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু বাড়তি সময়েও প্রকল্পের কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। বিশ্বব্যাংকের ১৮ কোটি ৩১ লাখ টাকাসহ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ২০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। বলা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিশ্চিত হয়নি। গত ৯ বছরে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার টাকা।বড় আকারের অর্থব্যয়ের প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ের গ্রেটার ঢাকা সাসটেইন্যাবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট। ২০১২ সালে অনুমোদন দেয়া হয়। গত ৪ বছরে অগ্রগতি মাত্র ৩ শতাংশ। ব্যয় হয়েছে ১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। গত চার বছরে শুধু দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আর কিছুই হয়নি। এক হাজার ১০৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনের ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ। এতে প্রকল্পসহায়তা ছিল ৯০২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে আজো প্রকল্পের কাজ শুরুই করতে পারেনি রেল মন্ত্রণালয়।এক হাজার ৯৪৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে রেলের জন্য ৭০টি মিটারগেজ ইলেক্টিভ লোকোমোটিভ কেনার প্রকল্পটিও স্থবির হয়ে আছে। ২০১১ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। ২০১৫ সালে এসে আবার প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। মাত্র ২ কোটি ২ লাখ ৫১ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পটিও একই গতিতে চলছে। ১৪৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি ২০০৭ সালে শুরু করা হয়। ৯ বছরে জানানো হয়, ঠিকাদার নিয়োগের বিষয় প্রক্রিয়াধীন আছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১০ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।২০১১ সালে নেয়া আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নৌবন্দর স্থাপন প্রকল্পটি গত ছয় বছরে অগ্রগতি মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট এই প্রকল্পে সাহায্যের পরিমাণ হলো ২৫১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আর প্রকল্পব্যয়ের পরিমাণ ২৭৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সমীক্ষার কাজ সম্পাদন ও ডিটেইল প্রজেক্ট রিপোর্ট চূড়ান্ত করতে বিলম্বিত হয়েছে, যার কারণে প্রকল্পটি যথাসময়ে বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৩ সালে প্রকল্পটি শেষ করার কথা থাকলেও মাঝপথে এসে সময় বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত নেয়া হয়। কিন্তু তাতেও প্রকল্প শেষ হবে না।এমএ/এসকেডি
Advertisement