শিশুরা সারাবছর ধরে ঈদের দিনটির জন্য অপেক্ষা করে। আর নতুন পোশাক কেনার বায়না শুরু হয়ে যায় রমজানের আগেই। এ বায়না বড়দের ঈদ আনন্দের একটা অংশ হয়ে গেছে। কারণ ছোটদের আনন্দের মধ্য দিয়েই তারা শিহরিত হন।বরাবরের মতো এ বছরও শিশুদের জন্য বিশাল আয়োজন নিয়ে হাজির হয়েছে শপিংমলগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর মিরপুরের বুটিক পল্লী, বসুন্ধরা সিটি, ধানমন্ডির রাপা প্লাজা, জেনেটিক প্লাজা, অর্কিড প্লাজা, মেট্রো শপিং মল, আড়ং, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, গাউছিয়া মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, ইস্টার্ন মল্লিকা, মৌচাক মার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, মাসকাট প্লাজা, বনানী, গুলশান ও উত্তরার অভিজাত ফ্যাশন হাউসগুলোর প্রতিটি দোকানে বড়দের পাশাপাশি হাতের কাজ করা ছোটদের বাহারি রং ও ডিজাইনের পোশাক সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নিউমার্কেট, পল্টন, মিরপুর, গুলিস্তানসহ সব বাণিজ্যিক এলাকা সংলগ্ন রাস্তায়ও ব্যবসায়ীরা সাজিয়ে রেখেছেন বাচ্চাদের পোশাক।ঈদ আয়োজনে মেয়েদের জন্য রয়েছে ফ্রক, টপ স্কার্ট, থ্রি পিস, বেবি টপস স্কার্ট, ডিভাইডার, জিনস প্যান্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি ও গেঞ্জি সেট। আর ছেলেদের জন্য রয়েছে জিনস প্যান্ট, নরমাল প্যান্ট, থ্রি কোয়ার্টার সেট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, বাবা সেট, গেঞ্জি, শার্ট ও গেঞ্জি সেট।আকর্ষণীয় নামে পোশাক : এবার ঈদে বড়দের পাশাপাশি ছোটদের জন্যও এসেছে মাসাক্কালি, দিল্লি-সিক্স, ঝিলিক, হাসি, খুসি পুতুল, পাড়ি, চাক্কি, পার্টিফ্রক, টাইস ও টপস, দুইপার্টের আনারকলি চাকলী চামেলীনামের গর্জিয়াস পোশাক। এ সব বাহারি নাম তাদের বেশ আকৃষ্ট করছে। অন্যদিক চড়া দামের কারণে পছন্দের পোশাকটি শিশুদের কিনে দিতে কোনো কোনো অভিভাবককে হিমশিম খেতে হচ্ছে।নিউ মার্কেটের আসা সুমাইয়া আফরোজ জানান, ছয় বছরের মেয়ে আলোকে নিয়ে পোশাক কিনতে এসেছেন। দোকানগুলোতে নানান ডিজাইনের পোশাকও দেখা হয়ে গেছে। তবে মেয়ের পছন্দের জামা ‘মাসাক্কালি’ কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি বলেন, বড়দের পোশাকের যে দাম, ছোটদের পোশাকেরও একই দাম। তারমধ্যে আগের বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম অনেক বেশি। একজনের কিনলে তো আরেকজনের জন্য সম্ভব নয়।
Advertisement
পিছিয়ে নেই কার্টুনের টি-শার্ট : বসুন্ধরার রিফেক্সে পাওয়া যাচ্ছে থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা বাচ্চাদের প্রিয় ডরেমন কার্টুনের টি-শার্ট। ডরেমন টি-শাটের দাম ৮৫০ টাকা, বেনটেনের দাম ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা, স্পাইডারম্যান ৭শ’ থেকে ৭৫০ টাকা। টি-শার্ট কিনতে আসা রুপশ্রী জানান, নতুনত্ব ও ডিজাইনের জন্য এখানে প্রতিটি পোশাকের দাম অতিরিক্ত রাখা হচ্ছে। ৬শ’ টাকার টি-শার্ট এক দাম ৮শ’ টাকা।আজিজ সুপার মার্কেট : আজিজ সুপার মার্কেটের বাঙ্গালে পাওয়া যাচ্ছে শিশুদের জন্য নজরকাড়া সব পোশাক। এখানে এক মাসের বাচ্চার পোশাকও পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন ডিজাইনের এসব পোশাকে ব্যবহার করা হয়েছে লেইস, চুমকি, পুঁতি, ব্লক, পট্টি, এমব্রয়ডারি, কারচুপি, অ্যাপলিক, কুচি ও হরেক রকমের সুতোর বুনন। এ ছাড়া আরামদায়ক পোশাকের জন্য অ্যান্ডি কটন, তাঁতের কাপড় ও বৈচিত্র আনার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে লাল, নীল, মেরুন, সবুজ, ফিরোজা, ম্যাজেন্টা, কমলা ও গোলাপিসহ নানা উজ্জ্বল রঙের কাপড়। বাঙ্গালে বিভিন্ন বয়সী শিশুদের পোশাক ১৭০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।ফ্যাশন হাউস দেশালের বিক্রয় কর্মী রোমিও আদিত্য বলেন, ঈদ উপলক্ষে শিশুদের জন্য দেশাল নতুন কালেকশন এনেছে। এসব পোশাকের মূল্য ৪৫০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে।পাইকারি মার্কেটেও চলছে ক্রেতাদের ভিড় : পলওয়েল মার্কেটসহ গাজী ভবনের বুশরা এন্টারপ্রাইজ, সুস্মিতা এসএম এন্টারপ্রাইজ, ফারুক এন্টারপ্রাইজ, সিকদার এন্টারপ্রাইজ, খাদি ও ক্লিওপেট্রা শপে শিশুদের জন্য তোলা হয়েছে বিদেশী পোশাক। এসব পোশাক সাড়ে ৩শ’ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।পোশাকে প্রিন্টের কাজ : এবার শিশুদের পোশাকে প্রিন্টের অনেক রকম কাজ রয়েছে। হাতের কাজ, কারচুপি, অ্যাপ্লিক, রিবনের প্রভাব রয়েছে কমবেশি। প্রজাপতির ডানা, কাপড়ের ফুল, টুনটুনি পাখি, সবই দেখা গেছে মোটিফ হিসেবে। শিশুর যা কিছু ভালো লাগে তাই প্রাধান্য পাচ্ছে এবার।ছেলেদের পোশাক : ছেলেদের পোশাকেও এসেছে ভিন্নতা। প্রায় ফ্যাশন হাউসে ছেলেদের শার্ট বা ফতুয়ায় প্রাধান্য পাচ্ছে হাফহাতা ও হাতাছাড়া কাট। লং প্যান্টের বদলে কোয়ার্টার। সাদা পাঞ্জাবির পাশাপাশি রঙিন পাঞ্জাবি বেশ পছন্দ ছেলেদের।মেয়েদের বাহারি সাজ : অনেক শিশুই ঈদের দিন বড়দের মতো করে সাজতে ভালোবাসে। মা-খালাদের মতো সালোয়ার-কামিজ ও শাড়ি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বড় বোনের মতো লং স্কার্ট বা টপসও চাই শিশুদের। বয়স কম হলেও শখ তো আর কম নয়। তাই শিশুদের ফাঁকি দেওয়ার জো নেই। এদিকে অনেকে বিভিন্ন পত্রিকার ঈদ ফ্যাশনের পাতা নিয়ে মা-বাবার কাছে নির্দিষ্ট নকশার পোশাকটির বায়না ধরছে।পোশাকে আবহাওয়ার ছাপ : এবার গরম আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে ঈদ বাজারে প্রাধান্য পেয়েছে সুতি পোশাক। ফ্যাশন হাউস কে-ক্র্যাফটের ডিজাইনার শাহনাজ খান বলেন, শিশুদের ক্ষেত্রে আরামের জন্য আমরা মনোযোগ দিয়েছি সুতিতে। নানা রকম সুতির ব্যবহারটাই প্রাধান্য রেখেছি এবারের সংগ্রহে। ভয়েল, বেক্সি ভয়েল, কটন জর্জেট, অ্যান্ডির কালেকশন আছে। পাশাপাশি কালার প্যালেটেও ভিন্ন এনেছি। তিনি আরও বলেন, এবার শিশুদের ঈদ পোশাকে কন্ট্রাস্ট কালার খুব চলছে। পিংক, পার্পেল, ফিরোজা, ম্যাজেন্টা, লাল, নীলের সব কালারেই চলছে মিক্সম্যাচের খেলা। প্রিন্টও বেশ পছন্দ করছেন অভিভাবকরা। এখানে শিশুদের পোশাক পাওয়া যাবে ৫০০ থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকার মধ্যে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যান্ডে শিশুদের পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে হাজার টাকার মধ্যে।শিশুদের পোশাক তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান শৈশবে পাওয়া যাচ্ছে নতুন ডিজাইনের পোশাক। বসুন্ধরা সিটির আউটলেটে দেখা যায় আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই কাপড় ও রঙের পোশাক এনেছে প্রতিষ্ঠানটি।