বিশেষ প্রতিবেদন

রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগেই জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটছে

দেশে প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে হত্যা ও গুপ্তহত্যা। এসব দমনে চলছে পুলিশের বিশেষ অভিযান। তবে হত্যা, গুপ্তহত্যা ও অভিযান নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। এছাড়া দেশের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিশ্বমহলেও। দেশের এমন পরিস্থিতিসহ নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাগো নিউজ মুখোমুখি হয়েছে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের। সাক্ষাৎকারে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগেই দেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটছে বলে মত দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত। এছাড়া সম্প্রতি শেষ হওয়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনের নানা অসঙ্গতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সায়েম সাবু। আজ থাকছে এর প্রথম পর্ব।  জাগো নিউজ : সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ। কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বিষয়টি? সাখাওয়াত হোসেন : চলমান হত্যাকাণ্ডে সমাজে উদ্বিগ্নতা বাড়লেও সাধারণ মানুষ হয়ত এখনো সেভাবে উদ্বিগ্ন নন। এর প্রধান কারণ হচ্ছে সাধারণ মানুষ এখনো এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়নি। যেমন- শিয়াদের মিছিলে হত্যাকাণ্ডে যে পরিমাণ উদ্বেগ বাড়িয়েছিল, টার্গেটকৃতদের হত্যায় সে উদ্বেগ বাড়ায় না। তবে শহরে যারা থাকেন, তাদের মধ্যে উদ্বেগ ক্রমশই বাড়ছে। তবে প্রাথমিক স্তরে নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়টি শহরের মানুষ এখন অনুভব করছেন। জাগো নিউজ : কিসের ভিত্তিতে বলছেন নিরাপত্তার ঘাটতি প্রাথমিক স্তরে? সাখাওয়াত হোসেন : যাদের হত্যা করলে সমাজে বিশেষ বার্তা পৌঁছাবে তাদেরই হত্যা করা হচ্ছে। এমন হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশ-বিদেশে বিশেষ সাড়া পড়বে। তাই হচ্ছে। হত্যাকারীদের কাজ হচ্ছে প্রথমত. এর মধ্য দিয়ে শক্তি জানান দেয়া। দ্বিতীয়ত. তারা এসব ঘটনাকে বিশাল প্রোপাগাণ্ডার আওতায় এনে মূল্যায়ন করছে। অর্থাৎ হত্যাকারীদের আদর্শের বাইরের মানুষের কাছে বার্তা দেয়া যে, আমরা আছি এবং ধীরে ধীরে আরো শক্তিমান হচ্ছি। এছাড়া সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডগুলোর দায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস স্বীকার করছে। আইএস-এর মুখপাত্র দাবিকেও এ অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম নিয়ে ইঙ্গিত দিয়ে নানা প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। এখানে যা ঘটছে, তা আইএসও করতে পারে আবার তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসীরাও করতে পারে। অনেকেই বলছেন, দেশীয় জঙ্গিরা করছে। দেশীয় জঙ্গি বলতে কোনো শব্দ নেই। জঙ্গির কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই।জাগো নিউজ : দেশীয় প্রেক্ষাপট দিয়েও তো মূল্যায়ন করার সুযোগ আছে? সাখাওয়াত হোসেন : সে মূল্যায়ন আপনি করতেই পারেন। কিন্তু এদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর যে সম্পর্ক নেই, তা বলা যাবে না। শুধু ইসলামি মিলিট্যান্সির সঙ্গেই এদের যোগাযোগ আছে এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। ভারতের চরমপন্থী সংগঠন মাওবাদী বা উলফাদের সঙ্গেও এদের বিস্তর যোগাযোগ থাকতে পারে। অস্ত্র, মাদকসহ নানা স্বার্থই এখানে গুরুত্ব পেতে পারে। জাগো নিউজ : কিন্তু জঙ্গি বিস্তারের এমন কথা তো সরকার স্বীকার করতে চাইছে না? সাখাওয়াত হোসেন : স্বীকার করা না করা সরকারের ব্যাপার। কিন্তু বাস্তবতা তো স্বীকার করতেই হবে। প্রতিনিয়ত খবর বেরুচ্ছে। বিশ্ব সংবাদেও গুরুত্ব পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিকে আপনি আলাদা করে দেখতে পারেন না। জাগো নিউজ : আপনি জঙ্গিদের পক্ষ থেকে বার্তা দেয়ার কথা বললেন। আসলে এই বার্তার মধ্য দিয়ে তারা কী প্রতিষ্ঠা করতে চায়? সাখাওয়াত হোসেন : প্রথমত. তাদের শক্তির জানান দেয়া। দ্বিতীয়ত. সরকার এবং সমাজকে দুর্বল করা। ছোট পরিসরে হলেও সরকারকে তো হয়রানি করতে পারছে। আজ পুরোহিত হত্যা হচ্ছে। কাল সেখানে পুলিশকে পাহারা দিতে হচ্ছে। পরশু মসজিদে পাহারা দিতে হবে। এটিই হচ্ছে এখন। জঙ্গিরা সর্বনিম্ন খরচে সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারছে। জাগো নিউজ : এভাবে সুবিধা নেয়া যায়? আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা সংগঠনের কী-ই-বা সুবিধা থাকতে পারে? সাখাওয়াত হোসেন : সাঁড়াশি অভিযান চলছে। পুলিশ হেড কোয়ার্টারে জিজ্ঞেস করুন যে, এ অভিযানের খরচ কত? এই অভিযানগুলোর খরচ নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ হয় না। যারা হত্যা করছে, তারা মৃত্যুর প্রতিজ্ঞা নিয়েই আসছে। তাদের খরচ দুটো চাপাতির দাম। আর রাষ্ট্রের খরচ লাখ লাখ টাকা। এখানেই তাদের লাভ-ক্ষতির হিসাব। রাষ্ট্র, সমাজকে তারা অস্থির রাখতে পারছে, এটি প্রতীয়মান। জাগো নিউজ : যারা এমন প্রতিজ্ঞা নিয়ে আসছেন, তাদের তো প্রতিহত করাও কঠিন?সাখাওয়াত হোসেন : অবশ্যই কঠিন। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিহত করতে না পারলে পরবর্তীতে আরো কঠিন হয়ে যায়। কেউ পারেনি এদের প্রতিহত করতে।জাগো নিউজ : প্রতিহত হচ্ছেও বটে? সাখাওয়াত হোসেন : সফল না হলে এই ধরনের সংগঠন দুই-এক বছরের মধ্যেই বিলীন হওয়ার কথা। অনেক সংগঠন বিলীনও হয়েছে। কিন্তু জেএমবি বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এখনো টিকে রয়েছে। জেএমবি হয়ত পাঁচ বছর নিষ্ক্রিয় ছিল। কিন্তু এখন আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরছে। আদর্শিক কারণে সমর্থন আদায় করতে না পারলে এরকম সংগঠন দীর্ঘদিন চলতে পারে না। এ কারণেই চিন্তার সময় এসেছে এই সংগঠনগুলো এতদিন চলছে কীভাবে? অর্থাৎ কেউ না কেউ তাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তারা যে টার্গেট নিচ্ছে, তার পেছনে অনেকেরই মৌন সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হচ্ছে। এ ব্যাপারে তো কোনো স্টাডি নেই। সরকারের কাছে কোনো ধারণাও নেই। যারা আলোচনা করছে, তাদের কাছেও এ ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য নেই।  জাগো নিউজ : জঙ্গিদের প্রতি সমর্থনের কথা বলছেন। অভিযোগ আছে রাষ্ট্রীয় নানা সংস্থার বিরুদ্ধেও?   সাখাওয়াত হোসেন : আপনি কাঠামোগত সমর্থনের কথা বলছেন। তবে এই আলোচনা অনেকটাই ধারণার ভিত্তিতে। এর কোনো স্বচ্ছ প্রমাণ নেই। জাগো নিউজ : আপনি দীর্ঘদিন সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেছেন। হিজবুত তাহরীর নিয়ে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার ব্যাপারে আলোচনা আছে। আপনার কাছে কী মনে হয়? সাখাওয়াত হোসেন : আমার কাছে তা মনে হয়নি। হয়ত একেক সরকারের সময় একেক নীতির ওপর গুরুত্ব দিতে হয়। অনেকেই গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে হিজবুত তাহরীর রেডিকেল কথা বলছে। কিন্তু রেডিকেল কোনো ভায়োলেন্স তৈরি করেনি। হিজবুত তাহরীর হেডকোয়ার্টার লন্ডনে। সেখানে এই সংগঠন নিষিদ্ধ নয়। ভায়োলেন্স তৈরি না করলে একটি সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে গিয়ে ভাবতে হয়। জাগো নিউজ : এদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা আছে কিনা?সাখাওয়াত হোসেন : আমার কাছে তা মনে হয়নি। তবে কোনো কোনো সময় সমর্থনের বিষয়টি সামনে চলে আসে। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অনেক কিছুই তো দেখতে পেলাম। সিআইএ প্রত্যক্ষ সমর্থন দিয়ে আল কায়েদা বানিয়েছে। তালেবান তৈরির পেছনেও বিশ্ব রাজনীতি গুরুত্ব পেয়ে আসছে।এএসএস/এএইচ/এসএইচএস/আরআইপি

Advertisement