বর্জ্য। রাজধানী ঢাকার নিত্যদিনের এক সমস্যা। এ সমস্যায় নাগরিক জীবন যেন ওষ্ঠাগত। নগরের দায়িত্বে যিনিই এসেছেন, তিনিই নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু উদ্যোগ-উদ্দীপনা ঘোষণাতেই আটকে থেকেছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চিত্র বদলেছে রাজধানীরও। তবে বর্জ্য সমস্যা থেকেছে আগের মতোই। বিভক্ত নগরীর দুই মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দিতে নানা চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন এসেছেও বটে। কিন্তু মানুষ তাতে ভরসা রাখাতে পারছে না। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বর্জ্য অপসারণ এখনও এই শহরের মৌলিক সমস্যাগুলোর একটি। বর্জ্য, বর্জ্য অপসারণ, অপসারণে অব্যবস্থাপনা, বর্জ্য থেকে জীবিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু, নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সুব্রত মণ্ডল। আজ থাকছে তৃতীয় পর্ব: ঢাকার ‘তরল বিপদ’ঢাকায় সবুজের বিস্তারে সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন সময়ে কম উদ্যোগ নেয়নি। সেসব উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত উদ্যোগই থেকে গেছে। প্রায় দুই কোটি মানুষের এই শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় বসানো হয়েছে মিনি ডাস্টবিন। চলতি পথে সবাই ব্যবহার না করলেও অনেকেই এখন পানির বোতল, বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট সেই ডাস্টবিনে ফেলছেন। ফলে পরিচ্ছন্ন ঢাকার পথে এক ধাপ এগোনো সম্ভব হচ্ছে। এ ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কিছুটা গতি এলেও তরল বর্জ্য নিয়ে নাগরিকদের তেমন কোনো আশার আলো দেখাতে পারছে না ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ঢাকার তরল বর্জ্যের একটা বড় অংশ এখনো গিয়ে মিশছে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগে। এভাবে নদীর পানি দূষিত হতে হতে তা দিন দিন হয়ে উঠছে বিষাক্ত। খুব দ্রুতই সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে এই নদীর পানিই হবে বিষাক্ত গ্যাসের আধার। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, এখানে প্রায় দেড় কোটি মানুষের বসবাস। কেবল দক্ষিণের এই দেড় কোটি মানুষের বতসবাড়ি, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারাখানা থেকে দৈনিক ২৪শ টনের মতো বর্জ্য তৈরি হয়। এ বর্জ্য রিসাইক্লিং না করাতে আপাতত তেমন কোনো অসু্বিধা দেখছে না সিটি কর্পোরেশন। তবে তরল বর্জ্য রাজধানী ঢাকার জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীতে পয়ঃবর্জ্যের পরিমাণ দৈনিক ১৪ লাখ ঘনমিটার। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন পাগলা পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগারের মাধ্যমে মাত্র ৫০ হাজার ঘনমিটার পরিশোধন করা হচ্ছে। বাকি ১৩ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য অপরিশোধিত অবস্থায় সরাসরি নদীতে গিয়ে মিশছে। ফলে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। মাছ ও জলজ প্রাণীর ক্ষতি হচ্ছে। শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি ও গৃহস্থালী কাজে তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠছে। পরিবেশবাদী সংগঠন পবার তথ্য মতে, হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো থেকে দৈনিক ২২,০০০ ঘন মিটার অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে পতিত হয়েছে কিছু দিন আগেও। এসব বর্জ্যে রয়েছে ক্রোমিয়াম, লেড, সালফিউরিক এসিড ইত্যাদি। ট্যানারি থেকে নির্গত বিষাক্ত তরল ও কঠিন বর্জ্য শুধু বুড়িগঙ্গার পানিকেই দূষিত করছে না, নদীর তলদেশ ও উভয় পাড়ের মাটি এমনকি বাতাসকেও ভয়াবহভাবে দূষিত করছে। নদীপাড়ের মানুষগুলো পানি ও বায়ুবাহিত নানারোগে ভুগছেন। ট্যানারিগুলো সাভার ও কেরানীগঞ্জে চামড়া শিল্প নগরীতে সরানোর কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন না হওয়ায় নদী দূষণ চলছেই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, রাজধানীতে বর্জ্য সমস্যা একদিনের নয়। নগরের অনেক কিছুই অপরিকল্পিভাবে গড়ে উঠেছে। আজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যে গতি এসেছে, তা কয়েক বছর আগেও ছিল না। সম্মিলিত উদ্যোগ না নিলে এককভাবে নগর পরিচ্ছন্ন করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, নদী দূষণমুক্ত করতে হলে আরো কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে এবং সিটি কর্পোরেশন সেভাবেই পরিকল্পনা নিয়েছে। এএসএস/এনএফ/এবিএস
Advertisement