খেলাধুলা

আম্পায়াররাও রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ : মাশরাফি

তার অভিধানে হতাশা, দুঃখ-বেদনা আর খারাপ লাগা শব্দগুলোর অস্তিত্ব নেই। কিংবা থাকলেও বহিঃপ্রকাশ খুব কম। তাই যদি থাকতো, তাহলে অনেক আগেই আক্ষেপ করে বলতেন, ‘হে ইনজুরি আমার যে স্বর্ণ সময় কেড়ে নিয়েছ, দাও ফিরিয়ে সেই সব সোনালী দিন। কিন্তু মাশরাফি বিন মর্তুজার মুখ দিয়ে আজ পর্যন্ত অমন একটি কথাও বের হয়নি। বারবার অপারেশনের ধাক্কায় অধিনায়কত্ব হারানো ও জাতীয় দলের বাইরে ছিটকে পড় মাশরাফিকে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কান্নায় ভেঙে পড়েতে দেখা গেছে মোটে একবার- ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলতে না পেরে। আর এবার ভারতের মাটিতে সেটা বিশ্ব টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার সাথে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে তাসকিন ও আরাফাত সানিকে হারানোর পরও তার চোখের কোনে জল চিক চিক করেছিল। ক্যারিয়ারের বাকি সময় হাজারো না পাওয়া, অতৃপ্তি ও অপ্রাপ্তিতে হাতাশা নেই যার, সেই চিত্রা নদীর ঢেউয়ে সাঁতার কেটে বড় হওয়া ক্রিকেটযোদ্ধা প্রিমিয়ার লিগের সুপার সিক্স খেলতে না পেরে হতাশায় মুষড়ে পড়বেন তা কি হয়? তবে কি এবার সুপার লিগ খেলতে না পেরে কোনই হতাশা নেই তার? খুব জানতে ইচ্ছে তাই না। তাহলে শুনুন, বাস্তববাদি মাশরাফির কথা, ‘হ্যা একদম খারাপ যে লাগেনি, তা নয়। আমরা, মানে কলাবাগান ক্রীড়া চক্র সুপার লিগ খেলতে না পারায় দুঃখবোধ আছে অবশ্যই। ১২ পয়েন্ট নিয়েও হেড টু হেডে পারলাম না। সমান পয়েন্ট নিয়েও তো এক দল সুপার লিগ খেলছে; সেজন্য খারাপ তো লেগেছেই। তবে বাস্তবতা বাস্তবতাই।’ রোববার মিরপুরে শেরে-ই বাংলায় মোহামেডান-লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন। এক ফাঁকে একাডেমি ভবনে গিয়ে অনুজপ্রতিম মুস্তাফিজের সঙ্গেও সময় কাটিয়ে এলেন। তারও আগে ক্রিকইনফোর প্রতিনিধি সির্দার্থ মঙ্গাকে ইন্টারভিউ দিলেন। এক ফাঁকে কিছু সময় কথা বললেন জাগো নিউজের সঙ্গেও। সেখানে অনেক কথার ভিড়ে মাশরাফির কাছে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয়। যার প্রথমটাই ছিল সুপার লিগ খেলতে না পারায় হতাশা কতটা? তার উত্তর জানা হয়ে গেছে। প্লেয়ার্স বাই চয়েজ না থাকলে হয়ত কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের বদলে  কাগজে কলমে আরও বড় দলের তকমাধারী কোন দলে খেলা যেত। তখন নিশ্চয়ই সুপার লিগ খেলার সুযোগ থাকতো। অবচেতন মনে কি কখনো অমন চিন্তা বাসা বেঁধেছে? মাশরাফির নির্লিপ্ত জবাব, ‘ওভাবে ভাবতে চাই না। তা নিয়ে এখন বলারই বা কী আছে?’ মাশরাফির বিশ্বাস, তার দল কলাবাগান কেসির সুপার লিগ খেলার সামর্থ্য ছিল পুরোপুরি; কিন্তু কেন মাঠে সামর্থ্যরে প্রমাণ মেলেনি? অধিনায়কের ব্যাখ্যা, মুলতঃ মিডল অর্ডার ব্যাটিংটা সময়মত জ্বলে না ওঠাই কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, ‘শুরু থেকে মাঝ পথ পর্যন্ত মিডল অর্ডার ক্লিক করেনি। মিডল অর্ডার সময় মত জ্বলে উঠতে না পারা দলকে ভুগিয়েছে। সময়মত মিডল অর্ডার জ্বলে উঠলে হয়ত আমরা মাঝারি শক্তির দলগুলোর সাথে হারতাম না। আমাদের লিগ পরিক্রমা খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা বেশ কিছু বড় ম্যাচ জিতলেও মাঝারি ও কম শক্তির দলগুলোর সাথে হেরেছি। আর সেটাই কাল হয়েছে। না হয় পয়েন্ট টেবিলে আরও উপরের দিকে জায়গা হতো।’ অতিবড় ভক্তও মানছেন, প্রায় মধ্য তিরিশের কাছে দাঁড়ানো মাশরাফি ক্যারিয়ারের সোনালী সময় পেছনে ফেলে এসেছেন। তারপরও নিজেকে মেলে ধরার তাগিদ আর ভাল খেলার দৃঢ় সংকল্প কমেনি একটুও। দেখিয়ে দিয়েছেন, ভাল খেলায় বয়স কোন বাধা নয়।এবারের লিগে বল (২২ উইকেট) ও ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফরমেন্স। আসরের দ্রুততম শতক ও ৬ উইকেট। এক কথায় অসাধারণ অলরাউন্ডিং সাফল্যের জ্বলন্ত দলিল। বলার অপেক্ষা রাখে না, এক লিগে এমন নজর কাড়া চৌকষ নৈপুণ্য তার কখনোই ছিল না। অলরাউন্ডার না হয়েও লিস্ট ‘এ’তে এমন নজরকাড়া সাফল্যে যে কারো উদ্বেলিত হবার কথা। মাশরাফি তাতেও ভাবলেশহীন। ভিতরে ভাল লাগার পরশ মাখা; কিন্তু বাহ্যিক প্রকাশ নেই। মুখে কথা একটাই, ‘ভাল খেলতে পারলে কার না ভাল লাগে। ভাল লাগা ছিল অবশ্যই। তবে আমার অভিধানে ব্যক্তিগত পারফরমেন্স ও সাফল্যের চেয়ে সব সময়ই দলগত সাফল্য বড়। টিম যেহেতু সেরা ছয়ে জায়গা পায়নি। তাই ওই সাফল্যের কথা ভেবে আনন্দিত হবার কি আছে বলুন?’ তবে হ্যা, একটা অন্যরকম ভাল লাগা আছে। সেটা দলগত। মাশরাফি বলেন, ‘শুরুর দিকে বেশ কিছু ম্যাচ হারার পরও আমরা শেষ পর্যন্ত খুব ভালভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। শেষ পর্যন্ত সেরা ছয়ে জায়গা না হলেও পয়েন্ট প্রাপ্তিতে সেরা ছয় দলের ভেতরই চলে এসেছিলাম। সেটাও এক ধরনের প্রাপ্তি, যে আমরা ফাইট ব্যাক করেছি।’ সুপার লিগে তিনি নেই। তার দল কলাবাগান কেসিও নেই। আছে তামিম ইকবালের আবাহনী, মুশফিকুর রহিমের মোহামেডান। মোশাররফ রুবেলের লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ, ফরহাদ রেজার প্রাইম দোলেশ্বর, নাদিফ চৌধুরীর ভিক্টোরিয়া আর শুভাগত হোমের প্রাইম ব্যাংক। এ ছয় দলের  কে হাসবে শেষ হাসি? তা নিয়ে রাজ্যের জল্পনা কল্পনা। মাশরাফির ধারণা শেষ পর্যন্ত কোন সাপোর্টাস দলই হাসবে শেষ হাসি। প্রথম লিগে তার চোখে মোহামেডান ছিল সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল। সাকিব চলে আসায় আবাহনীও এখন খুব স্ট্রং সাইড হয়ে গেছে। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ভাল খেলছে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ভিক্টোরিয়ার পারফরমেন্সকে বেশি ভাল লেগেছে। আম্পায়ারিং নিয়ে রাজ্যের সমালোচনা। অনেক কথাবার্তা। কয়েকটি ক্লাব ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে প্রতিবাদও করেছে; কিন্তু এসব নিয়ে মাশরাফি কোনভাবেই কথা বলতে রাজি নন। কেন নেই, সে ব্যাখ্যা তার মুখ থেকেই শোনা যাক, ‘আসলে বললে অনেক কথাই বলা যায়। আমি ইতিবাচক মানসিকতা দিয়েই দেখতে চাই। আমার মনে হয় আম্পায়াররাও রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ। তাদের ভুল-ত্রুটি হতেই পারে।’  এআরবি/আইএইচএস/এসকেডি

Advertisement