দেশজুড়ে

সুমন জানে না শিশুশ্রম কি?

সুমন হাওলাদার। বয়স বড়জোড় ৯ বছর। মাথায় এলোমেলো চুল। পরনে ঘিয়া হাফ হাতার গেঞ্জি আর নীল ট্রাউজার। খালি পায়ে থাকে সারাক্ষণ। কাজ করেন সমিলে। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় সুমনের কাজ। চার ভাই এক বোন নিয়ে চড়পাড়া বস্তিতে বসবাস সুমনের। ২য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে সুমন। মা সুদের উপর টাকা এনে ছোট ভাইকে একটি ভ্যান কিনে দিয়েছে। সেই থেকে দিন দিন বাড়তে থাকে ঋণের বোঝা। আজ বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচিতে পালিত হবে দিবসটি। `উৎপাদন থেকে পণ্যভোগ, শিশুশ্রম বন্ধ হোক` এ প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে এবার দিবসটি পালিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু সুমন জানে না বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস কি?সুমন জানান, গলাচিপার চিকনিকান্দি গ্রামে তাদের বাড়ি। বাবার নাম আলতাফ হাওলাদার। তিনি পেশায় একজন ঘাট শ্রমিক। সংসারে সাতজন সদস্য। এর মধ্যে সুমন বড়। বাবা আলতাফের আয়ে সংসারের ব্যয় মেটানো দায়। এ কারণে অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের আধাপেট কিংবা অভুক্ত দিন কাটাতে হতো।সংসারের অভাব মেটাতে বাবা আলতাফ ৯ বছরের শিশু সন্তানকে স্কুলের পরির্বতে কাজে পাঠায়। শুরুতে সুমনকে প্রতিদিন ৪০ টাকা বেতন দেয়া হতো। করাত, হাতুড়ি, বাঁশ আর ভারী গাছ উঠাতে গিয়ে বহুবার আহত হয়েছে সুমন। এখন কাজ শিখে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে। তার আয়ও বেড়েছে।জানা গেছে, পটুয়াখালীতে প্রায় একশোর বেশি স-মিল রয়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানে দুইজন করে শিশু শ্রমিক কাজ করে। এর ফলে পটুয়াখালীতে শুধু সমিলে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা আছে প্রায় ২০০ জন।  এছাড়াও মোটরসাইকেল ওয়ার্কশপ ও গ্যারেজ, ইটভাটা, বিড়িশ্রমিক, রিকশার ড্রাইভিং, ওয়েলডিং কারখানা, হিউমান হলারের ড্রাইভিং ইমারত শ্রমিকের মতো নানা ঝূুঁকিপূর্ণ পেশায় শহুরে জীবনে শিশু শ্রমিকরা জড়িয়ে আছে। শ্রমের বাজারে শিশুরা শুধু শহরেই সীমাবদ্ধ নেই। ১৯৯৯ সালের জুন মাসে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও শিশুশ্রম নিরসন সনদ-১৮২ গ্রহণের পর থেকে প্রতি বছর ১২ জুন বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব পেশায় নিয়োজিত শিশুরা বলছেন, ‘পরিবারের অভাব অনটন আর পেটের দায়ের বাধ্য হয়ে এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হচ্ছেন তারা।’  কুয়াকাটা এলাকার সাগর পাড়ের জেলে সোবাহান ফকির বলেন, ‘আমাগো তো উপায় নাই। মাছ তো সব সময় পাওন যায় না। এ লইগ্যা পরিবারের খরচ মিডাইতে গুরা গারা লইয়া মাছ ধরি। আমি সাগরে যাই আর ওরা চড়ে রেনু পোনা ধরে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব প্রান্তিক আয়ের পরিবারগুলোর শিশুদের ভবিষ্যৎ মানে কালো অন্ধকার। স্কুল, বই-খাতা কিংবা বিনোদনের জন্য খেলার মাঠে দৌড়ঝাপ এসব শ্রমজীবী শিশুদের জীবনে অনুপস্থিত। অধিকার নিয়ে বেড়ে ওঠা তাদের জন্য বিলাসিতা। তাই জীবনের তাগিদে জীবিকার সন্ধানে ঝূুকছে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায়।তবে শহরের নব্য সাংগঠনিক ব্যক্তিত্ব মুঈন সারোয়ার বলেন, ‘দিনে এসব শিশুরা কাজ করলেও রাতে যেন অন্তত প্রাথমিক শিক্ষাটা নিতে পারে সে বিষয়ে সরকারের একটু ভেবে দেখা উচিত।’আব্দুল করিম মৃধা কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগের অধ্যক্ষ মো. সিদ্দিকুল্লাহ বলেন, যেখানেই শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত সেখানেই সরকারের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের হানা দেয়া উচিত। শিশুদের উদ্ধার করে স্কুলে পাঠানো জরুরি। শিশুশ্রম বন্ধে সরকারের পাশাপাশি সামাজিকভাবে বিশেষ নজর দেয়া উচিত।এসএস/এমএস

Advertisement