বিশেষ প্রতিবেদন

বাঁশির সুরে ময়লা আসে

বর্জ্য। রাজধানী ঢাকার নিত্যদিনের এক সমস্যা। এ সমস্যায় নাগরিক জীবন যেন ওষ্ঠাগত। নগরের দায়িত্বে যিনিই এসেছেন, তিনিই নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু উদ্যোগ-উদ্দীপনা ঘোষণাতেই আটকে থেকেছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চিত্র বদলেছে রাজধানীরও। তবে বর্জ্য সমস্যা থেকেছে আগের মতোই। বিভক্ত নগরীর দুই মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দিতে নানা চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন এসেছেও বটে। কিন্তু মানুষ তাতে ভরসা রাখাতে পারছে না। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বর্জ্য অপসারণ এখনও এই শহরের মৌলিক সমস্যাগুলোর একটি। বর্জ্য, বর্জ্য অপসারণ, অপসারণে অব্যবস্থাপনা, বর্জ্য থেকে জীবিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু, নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সুব্রত মণ্ডল। আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব: বাঁশির সুরে ময়লা আসে

Advertisement

বাঁশিতে মন হরে। বাঁশিতে প্রাণ ভরে। বাঁশিতে যাদু। বাঁশির বহুমুখি ব্যবহারের কথা সবারই জানা। রাজধানী ঢাকায় এমনই এক বাঁশির সুর এখন সবার কাছে পরিচিত, যা দিনে একবার না বাজলে মনে অস্বস্তি বাড়ায়।এ কোনো মহন বাঁশি বা বাঁশের বাঁশির মধুমাখা সুর নয়, প্লাস্টিক বা পিতলের ছোটো বাঁশির কর্কশ সুর এটি। অথচ সেই সুরের তরেই বাসা বাড়ির রমণীদের অধীর আগ্রহে অপেক্ষা। এই বাঁশি বাজানোটা আসলে বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহের কর্মযজ্ঞের ছোট্ট একটা অংশ। বাসা-বাড়ি থেকে যারা ময়লা নিয়ে যান বাঁশি বাজিয়েই তারা ময়লা সংগ্রহ করেন। ওদের বাঁশি বেজে উঠলেই বাড়িওয়ালাদের প্রস্তুতি শুরু হয় ময়লা ফেলার। গোটা রাজধানীতেই এমন পরিচ্ছন্নকর্মীদের নিরবচ্ছিন্ন কর্মযজ্ঞ এখন লক্ষ্যনীয়। রাজধানীর  প্রতিটি মহল্লাতে কমিউনিটি বেসড অরগানাইজেন (সিবিও) গড়ে উঠেছে। বেসরকারিভাবে গড়ে উঠলেও এখন এগুলো সিটি কর্পোরেশনের তালিকাভুক্ত হচ্ছে। সূত্র জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে এরকম প্রায় ১শ ৫টি সংগঠন তালিকাভুক্ত রয়েছে। শতাধিক সংগঠন রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে। প্রতি মহল্লায় গড়ে ১০ থেকে ২০ জন করে পরিছন্নকর্মী ময়লা সংগ্রহের কাজে অংশ নেন। সিবিও সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত হলেও এ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন সিটি করপোরেশন দেয় না। যেসব বাসা থেকে ময়লা নেয়া হয় সেই বাসার বাসিন্দারাই মাসিক একটি চাঁদা দিয়ে থাকেন। সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকার কারণে এই চাঁদা নিয়েও বিতর্ক আছে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো তদারকি করে না বিধায় সংগঠনগুলো ইচ্ছেমতো চাঁদা নির্ধারণ বা বাড়িয়ে থাকে। রাজধানীর বেশিরভাগ ফ্ল্যাট থেকে ৫০ টাকা করে নেয়া হলেও কোথাও কোথাও ৮শ বা ১শ টাকাও নেয়া হয়। আবার নিজেদের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় এই পরিচ্ছন্নকর্মীরা বৈষম্যের শিকারও হচ্ছেন। নিউ ইস্কাটনের দিলুরোডের বাসাগুলো ময়লা সংগ্রহের কাজ করেন আব্দুর রহমান। তিনি বলছিলেন, পুরো মহল্লার ময়লা আমরা ৮ জন মিলে সংগ্রহ করি। থাকি মগবাজারে এক ভাঙারির দোকানে। গোটা মাসে ময়লা সংগ্রহের কাজ করে ৭ হাজার টাকা বেতন পাই। আগে আরো কম ছিল। এখানেও বৈষম্য আছে। আমাদের টাকার বেশির ভাগেই মালিক নিয়ে থাকেন। সিটি কর্পোরেশন যদি এ ব্যাপারে নীতিমালা করে দিত তাহলে বৈষম্য কমতো।                                                     রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় এভাবে ময়লা সংগ্রহ করেন আব্দুল আলিম নামের এক পরিচ্ছন্নকর্মী। তিনি জানান, বাঁশি বাজিয়ে বাসায় বাসায় গিয়ে আমরা ময়লা সংগ্রহ করি। তার বিনিময়ে প্রতিটি বাসা থেকে মাসে ৫০ টাকা করে নিই। গোটা মাসে ৫০ টাকায় এভাবে ময়লা সংগ্রহ করা খুবই কঠিন। আবার বিকেল ৪টার আগে ডাস্টবিনে ময়লা ফেলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন ময়লা ভ্যানে রেখেই ঘুরতে হয়। কথা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে মানুষ নিজেরাই হাতে করে বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা এনে ডাস্টবিনে রাখতেন। এ নিয়ে অনেক সমস্যাও হতো। মানুষ ঠিকভাবে ময়লা ফেলতো না। যত্রতত্র ময়লা দেখা যেত। বেসরকারি সংগঠনগুলো এগিয়ে আসার কারণে এই সমস্যা অনেকটাই কমে গেছে। একই সময় সব বাড়ি থেকে ময়লা নিয়ে একবারে ডাস্টবিনে ফেলা হচ্ছে। এটি নগরকে পরিচ্ছন্ন করে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, অচিরেই এই সংগঠনগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে এবং মাসিক চাঁদার বিষয়টা নির্ধারণ করে দেয়া হবে।এএস/এএসএস/এনএফ/এবিএস