দেশব্যাপী একের পর এক গুপ্তহত্যার প্রেক্ষাপটে সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে এ পর্যন্ত তিন সহস্ত্রাধিক গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশের দাবি অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে জেমএমবি ও অন্য কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরাও রয়েছে। পুলিশি অভিযানে অপরাধীরা ধরা পড়লে সেটি স্বস্তির বিষয়। মানুষজন নিশ্চয়ই সেটিকে অভিনন্দিত করবে। স্বাগত জানাবে। কিন্তু গয়রহ গ্রেপ্তার করা হলে সেটি কাজের কাজ তেমন কিছু হবে না। বরং নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হবে-যা মোটেও কাম্য নয়। তাই অভিযানের সুফল যাতে মানুষ পায় সেজন্য প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এটির কোনো বিকল্প নেই। দেশব্যাপী একের পর এক লেখক, ব্লগার, প্রকাশক, মন্দিরের পুরোহিত, বিদেশি নাগরিক এবং সর্বশেষ চট্টগ্রামে এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে হত্যার প্রেক্ষাপটে মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তারা এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ও উস্কানিমূলক হত্যাকাণ্ড বন্ধে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে শক্ত অবস্থানে দেখতে চেয়েছে। একদিকে উন্নয়ন অগ্রগতি অন্যদিকে টার্গেট করে বেছে বেছে হত্যা-এই বৈপরীত্য চলতে পারে না। সর্বত্র নিরাপত্তাহীনতার বোধ তটস্থ করে রাখছে মানুষজনকে। একটি আতঙ্কজনজক অবস্থা কোনোভাবেই উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য সহায়ক হতে পারে না। সভ্য সমাজ ব্যবস্থার জন্য তো নয়ই। দুঃখজনক হচ্ছে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটলেও কোনো হত্যাকাণ্ডেরই কূলকিনারা করতে পারছে না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এই ধরনের একটি গুমোট অবস্থায় পুলিশি অভিযানটি খুবই প্রয়োজনীয় এবং অনিবার্যও হয়ে উঠেছে। আশা করা যাচ্ছে গুপ্তহত্যার রহস্য উদঘাটন হবে এবং অপরাধীরা ধরা পড়বে। এরফলে বন্ধ হবে এই ষড়যন্ত্রমূলক হত্যাযজ্ঞ। তবে এ জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পুলিশের আন্তরিকতা থাকতে হবে। রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে যে অনেক অসাধ্যও সাধন করা যায় তার বড় প্রমাণ হচ্ছে ৪৫ বছর পরও যুদ্ধাপরাধের বিচার। আর বাংলা ভাইসহ বড় বড় জঙ্গি ও অপরাধীদের ধরার ব্যাপারেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর রয়েছে সাফল্যের ইতিহাস। তাই আশা করা যায় এবারের অভিযানেও অপরাধীরা ধরা পড়বে। এরফলে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসবে। তবে কোনোভাবেই যেন সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার না হয় সেটি দেখতে হবে। ‘গ্রেপ্তার বাণিজ্য’ বলে পুলিশের বিরুদ্ধে যে অপবাদ রয়েছে সেটির ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। আমরা এই অভিযানের সাফল্য কামনা করছি। এইচআর/এবিএস
Advertisement