বিনোদন

বেজবাবা সুমনের জন্য ভক্তের অপূর্ব ভালোবাসা!

ব্যান্ডদল অর্থহীন-এর ভোকাল এবং বেজবাবা খ্যাত কণ্ঠশিল্পী সুমন। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি মরণঘাতী রোগ ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। বারবার অপারেশন আর থেরাপি সত্ত্বেও মনের অদ্ভূত জোরে তিনি দিব্যি উপভোগ করে চলেছেন জীবনটা। সেইসঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন তার সংগীত চর্চা। সে সুবাদে দেশে-বিদেশে তার কোটি কোটি ভক্ত ও অনুরাগী। সম্প্রতি জাপান প্রবাসী এক ভক্তের অপূর্ব ভালোবাসায় সিক্ত হলেন সুমন। সেই ভক্তের নাম নিকোলাস। তিনি জাপানে আছেন অনেকদিন। সেখানে একটি মোবাইলের দোকান চালান। বিদেশে থাকলেও দেশ ও দেশের সবকিছুর প্রতিই মায়ার কমতি নেই। নিকোলাস গান শুনতে ভালোবাসেন। আর তার প্রিয় গানের তালিকায় রয়েছে সুমনের গাওয়া ‘এপিটাফ’ গানটি। হঠাৎ প্রিয় শিল্পীকে কাছে পেয়ে আপ্লুত হয়ে গেলেন তিনি। সুমনকে নিয়ে গেলেন নিজের মোবাইল ফোনের দোকানে। গল্প গুজব শেষে সুমনের হাতে তুলে দেন ‘সনি এক্সপেরিয়া Z4’ মডেলের একটি ফোন সেট। সুমনের বারবার আপত্তি করা সত্ত্বেও নিকোলাস বাধ্য করেছেন ফোনটি গ্রহণ করতে। ভক্তের এমন অকৃত্রিম ভালোবাসায় আবেগাক্রান্ত সুমন। সেইসঙ্গে তিনি নিজের গান করার আবেদনটাকে যেন অনুভব করলেন নতুন করে। আর প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন, আমৃত্যু গানের সঙ্গেই নিজেকে জড়িয়ে রাখবেন বলে।গতকাল শুক্রবার নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে সুমন এই গল্প জানান। সেইসঙ্গে ভক্ত নিকোলাসকে নিয়ে একটি সেলফিও আপলোড করেছেন। সুমন তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘টোকিও আকিহাবারা স্টেশন থেকে নেমে হাঁটা দিয়েছি। উদ্দেশ্য শপিংমলে ঘোরাঘুরি। পাশেই কিছু মোবাইল ফোনের দোকান। দোকানের পাশেই এক ভদ্রলোককে দেখলাম। আমাকে দেখে হাসিমুখে হ্যালো সূচক মাথা ঝাকালো। আমিও একই কাজ করলাম। তারপরই ভদ্রলোক আমাকে বলল, ‘বাংলাদেশি? আমি বললাম, ‘জি’। তারপরের প্রশ্ন, ‘আপনি কি সুমন ভাই?’ আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম, ‘হু, আমি সুমন’।তিনি বললেন, ‘আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান! আপনার এপিটাফ গানটা আমি প্রতিদিনই শুনি! সামনেই আমার মোবাইল ফোনের দোকান। প্লিজ একটু ঘুরে যান!’ আমি না বলতে পারলাম না। ভিতরে গেলাম। তারপর কিছুক্ষণ গল্প করলাম। ঠিক যখন বের হয়ে যাবো, তখন একটা কাণ্ড ঘটলো! ভদ্রলোক হঠাৎ শেলফ থেকে একটা ফোন বের করে মোটামোটিভাবে বলতে গেলে জোড় করেই আমার হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, ‘এটি আপনার’! আমি হতভম্বের মত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম! অনেক চেষ্টা করেও সনি এক্সপেরিয়া Z4 টা ফেরত দিতে পারলাম না! উনি বললেন, ‘নেক্সট টাইম আবার আসলে দেখা করবেন’। আরও কিছুক্ষণ ফোনটা ফেরত দেয়ার চেষ্টা করে বিফল হয়ে তার সঙ্গে একটা ছবি তুলে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। ভদ্রলোকের নাম নিকোলাস। ৪ বছর হল জাপানে আছেন। আমি একজন শখের মিউজিশিয়ান। মিউজিক করতে ভালো লাগে তাই করি। অর্থের জন্য করি না। গত ছয় বছরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকবারই চিন্তা করেছি আর মিউজিক করব না। অনেক তো হল! কিন্তু মাঝে মাঝে এই মিউজিক করার কারণেই এমন ভয়ঙ্কর সুন্দর কিছু ঘটনা আমার এই জীবনে ঘটে, যা কিনা মিউজিক না করলে হয়ত জীবনেও ঘটতো না! আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান একজন মানুষ! ভালোবাসা নামক জিনিসটা টাকা অথবা ক্ষমতা দিয়ে কেনা অথবা মাপা যায় না! ধন্যবাদ নিকোলাস! মিউজিক চলবে, আরও গান আসবে ইনশাআল্লাহ! আপনাদের সবার কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসার প্রতিদান কিছুটা হলেও চেষ্টা করবো গানের মাধ্যমে ফেরত দিতে! সবাইকে ভালোবাসা!এলএ/এবিএস

Advertisement