দেশজুড়ে

চাঁপাই-ঢাকা : প্রতি কেজি আমে আড়াই টাকা নিচ্ছে পুলিশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে একটি আমবাহী ট্রাক ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছতে বিভিন্ন মহাসড়কের মোট ১২টি পয়েন্টে পুলিশকে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহাসড়কের বিভিন্ন পুলিশ চেকপোস্টগুলোতে ট্রাকে তল্লাশির নামে চালকদের হয়রানি করে এসব টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ কারণে আম ব্যবসায়ীদের গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। আর এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেও পাচ্ছে না কোনো প্রতিকার। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বিভিন্ন আমবাহী ট্রাক তল্লাশির নামে পুলিশের বিভিন্ন চেকপোস্টে থামানো হচ্ছে। তারপর দাবি করা হচ্ছে চাঁদা। আর তাদের চাহিদামতো চাঁদা না দেয়া হলেই করা হচ্ছে হয়রানি। শুধু তাই নয়, চাঁদার পরিমাণ কম হলেই সামনের চেকপোস্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশদের ট্রাকের নম্বরসহ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারপর চাঁদা নিয়ে ট্রাক ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। সামনের চেকপোস্টে না পৌঁছাতেই থামার সিগন্যাল দেয়া হচ্ছে। তারপর সেখানেও দাবি করা হচ্ছে চাঁদা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর কয়েকজন ট্রাক চালকের সঙ্গে কথা বলে এমই তথ্য জানা গেছে। তারা জানিয়েছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আম নিয়ে পৌঁছাতে প্রায় ৫ হাজার টাকা চাঁদা গুণতে হচ্ছে ট্রাক চালকদের। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিশ্বরোডে পুলিশ চেকপোস্টে ট্রাকপ্রতি সাড়ে ৬শ টাকা, রাজশাহীর গোদাগাড়ি চেকপোস্টে ৪শ টাকা, কাশিয়াডাঙ্গা চেকপোস্টে ৩শ টাকা, কাজলা চেকপোস্টে ৪শ টাকা, বানেশ্বর হাইওয়ে চেকপোস্টে ২শ টাকা, নাটোর পিটিআই মোড় চেকপোস্টে ৫শ টাকা, সিরাজগঞ্জ যমুনা সেতু সংলগ্ন চেকপোস্টে এক হাজার টাকা, টাঙ্গাইল বাইপাসের চেকপোস্টে ৫শ টাকা, গাবতলী চেকপোস্টে ৫শ টাকাসহ আরো কয়েকটি চেকপোস্ট রয়েছে। সেসব চেকপোস্টে সবসময় দায়িত্বরত পুলিশ থাকে না। সেই চেকপোস্টগুলোতে পুলিশ থাকলে তাদের দিতে হয় চাহিদামতো চাঁদা। তবে রাজশাহীর বাস টার্মিনাল এলাকার ট্রাক চালক সাজ্জাদ জানান, সারা বছরই দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে পুলিশ সদস্যরা চাঁদাবাজিতে তৎপর থাকেন। আর আমের সময়ে তাদের তৎপরতা আরো বৃদ্ধি পায়। আম পরিবহনকালে তাদের চেকপোস্টগুলোতে গুণতে হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা। ফলে আম ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদার টাকা হিসাব করেই পরিবহন খরচ নেয়া হয়। আর ব্যবসায়ীরাও খুব সবজেই তাদের এই শর্তে রাজি হয়ে যান। এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ব্যবসায়ীরা জানান, পাঁচ টনের একটি ট্রাকে প্রায় ১১ টন আম বহন করা হয়। ১১ টন অথবা ৩শ মণ = ১২ হাজার কেজি আম ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে যেতে একটি ট্রাক ভাড়া নেয় প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে প্রতি কেজি আমে পুলিশকে আড়াই টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে।তিনি আরো জানান, এক ট্রাক আম ঢাকায় পাঠাতে মহাসড়কের ১২টি চেকপোস্টে গড়ে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। আমের ট্রাক ঢাকায় ঢুকতেও দুটি স্থানে প্রায় হাজার টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে।রাজশাহীর চারঘাট এলাকার আম ব্যবসায়ী নজরুল জানান, তিনি দুই বছর ধরে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে আম সরবরাহ করে আসছেন। কিন্তু আম পরিবহনের ভাড়ার সঙ্গে তাকে আরো বাড়তি ৫ হাজার টাকা বেশি গুণতে হচ্ছে। রাজশাহী ট্রাক শ্রমিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম জানান, মহাসড়কের বিভিন্ন পুলিশ চেকপোস্টে বেপরোয়া চাঁদাবাজি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় নি।এ ব্যাপারে রাজশাহীর পুলিশ সুপার নিশারুর আরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মহাসড়কে পুলিশের চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এ ধরনের কোনো অভিযোগ তার কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি খোরশেদ হোসেন জানান, মহাসড়কের বিভিন্ন পুলিশ চেকপোস্টে চাঁদাবাজি হয় কিনা তিনি বলতে পারবেন না। তবে বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানাবেন খতিয়ে দেখার জন্য।শাহরিয়ার অনতু/এমএএস/এবিএস

Advertisement