রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাতের হকার আরজ আলী। দুই ছেলে, এক মেয়ে, স্ত্রী ও মা-বাবাসহ সাত সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। প্রতি বছর রমজান মাসে আয় রোজগার ভালোই হয় তার। বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় এবার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে মাসিক চার হাজার টাকা লাভে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।কয়েকদিন আগে কেরানীগঞ্জের এক পাঞ্জাবির পাইকারি ব্যবসায়ীকে আগাম টাকা দিয়ে এসেছেন। প্রথম রোজা থেকে ফুটপাতে দোকানদারিও শুরু করেছেন। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার (৯ ও ১০ জুন) গুলিস্তান এলাকায় হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হকারদের সংঘর্ষের খবর টেলিভিশনে দেখেছেন। তাই গুলিস্তানের মতো নিউমার্কেট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হতে পারে এ আতঙ্কে গত দুদিন থেকে চোখে অন্ধকার দেখছেন আরজ আলী।শুক্রবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সারা বছর টুকটাক ব্যবসা হলেও রমজান মাসে হকারদের বেচাকেনা বেশি ও আয় রোজগার ভালো হয়। কিন্তু এ মাসে উচ্ছেদ হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদতো দূরের কথা, না খেয়ে মারা যাবেন বলে জানান।এ আতঙ্ক শুধু আরজ আলীর একার নয়, গাউছিয়া, চাঁদনিচক, নূর ম্যানসন, নিউ সুপার মার্কেট, ইসলাম ম্যানসন, ঢাকা কলেজ ও গর্ভমেন্ট ল্যাবরেটরিসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকার ফুটপাতের হাজার হাজার ব্যবসায়ীর।গত দুদিন ধরে গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাতে হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে তাদের মধ্যে এ আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।শুক্রবার সকালে গুলিস্তানে সংঘর্ষের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশ রাজধানীর সকল সড়কের ফুটপাত হকারমুক্ত করবেন। এ ঘোষণার পর হকারদের মধ্যে উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিনি জানান, সংঘর্ষকালে পুলিশের মতিঝিল ডিভিশনের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় জড়িত হকারসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জানা গেছে, হকাররা এখন ক্ষমতাসীন দলের শ্রমিক নেতা মন্ত্রী, সাংসদ ও রাজনীতিবিদদের কাছে ধর্না দিয়ে রমজান মাসে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রাখার জোর তদবির করছেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন হকার নেতা জাগো নিউজকে জানান, নেতারা তাদের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অনুরোধ জানিয়ে সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন সরকারের আমলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হকারদের জন্য শতাধিক মার্কেট তৈরি করলেও প্রকৃত হকারের মধ্যে স্বল্প সংখ্যক হকার সেসব মার্কেটে দোকান পেয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাকর্মীরাই কথিত হকার সেজে এসব মার্কেটের মালিক হয়েছেন। হকারদের প্রকৃত পরিসংখ্যান না থাকার ফলে এমনটি হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রের দাবি। এলিফ্যান্ট রোডে ফুটপাতের একজন হকার বলেন, লাইনম্যানদের মাধ্যমে নিয়মিত পুলিশকে চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করি। কিন্তু কি কারণে যেন পুলিশও এবার উচ্ছেদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা পুলিশকে বেশি টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছে বলে তার অভিযোগ।ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা এমনভাবে রাস্তা দখল করে রাখেন, তাতে ক্রেতারা মার্কেটে পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারেন না। লাখ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে তারা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফুটপাতের চলাচলের রাস্তা দখল করে দোকান বসানোর ফলে সাধারণ মানুষকে ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় চলাচল করতে হয়। ফলে অনেক সময় যানজটেরও সৃষ্টি হয়। এমইউ/এআরএস/আরআইপি
Advertisement