বিনোদন

টিআরপি প্রকাশে আদালতের নিষেধাজ্ঞায় শোবিজের প্রতিক্রিয়া

দেশের টেলিভিশন রেটিং (টিআরপি) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এমআরবি বাংলাদেশকে ভুল তথ্য প্রদান করার কারণে তাদের তথ্য সরবরাহ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। টেলিভিশনের দর্শকপ্রিয়তা যাচাইয়ের উপায় হিসেবে এমআরবি সাপ্তাহিক ভিত্তিতে যে টিআরপি তথ্য প্রদান করত তা এই আদেশের ফলে বন্ধ করা হল। একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ জুন ঢাকা যুগ্ম জেলা জজ আদালত এই রায় প্রদান করেন। আদালতের এই রায় নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে ছোটপর্দার নাটক-অনুষ্ঠান নির্মাতা ও টেলিভিশন মালিক-কর্মকর্তাদের মধ্যে। টিআরপি প্রকাশে আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘আদালতের এই সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই। ‘মারহাবা’ বলার মতোই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদালত। এই টিআরপি বাণিজ্য অনেক অযোগ্যকেও তারকা বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। যার কুফল ভুগছে সৃষ্টিশীল মানুষেরা।’নাট্য নির্মাতা সুমন আনোয়ার বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত সঠিক। আমিও আদালদেতর রায়ের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করছি। কারণ, একজন নির্মাতা হিসেবে আমি দেখেছি টেলিভিশনে যে টিআরপি তথ্য দেওয়া হয় তা অথেনটিক নয়। কোম্পানিগুলো পণ্য জরিপের জন্য একটা কমিটি গঠন করে একশ চ্যানেলের উপর মানদন্ড দিচ্ছে। এখানে অনুষ্ঠানের মান নিয়ে ভাবার কোনো অবকাশ নেই। আর সত্যিকারের টিআরপি রেটিংও এখানে উঠে আসে না। তাই আমি বলবো আদালতের রায় ঠিকই আছে। এখন যদি নতুন করে কোনো টিআরপি রেটিং কমিটি গঠিত হয় তবে সেটি হবে অথেনটিক। সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে সে যদি বলে অমুক নাটকটি একশ দর্শক দেখেছে তাই মেনে নেব। আবার যদি বলে আমার নাটকটি কেউ দেখেনি তাও মেনে নেব। আমার কথা হচ্ছে, আপনাতে সৎ থাকতে হবে। আপনি একটি গবেষণামূলক কাজ আন্দাজে চালাতে পারেন না। আমার বিশ্বাস সকল শিল্পী, নির্মাতারাই এই রায়ে আদালতকে সাধুবাদ জানাবে।’অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু বলেন, ‘আদালত যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেটা সঠিক। আদালতের উপর কথা বলার এখতিয়ার কারো নেই। তাছাড়া একজন অভিনেতা হিসেবে বলতে পারি এতদিন এই টিআরপি-তে স্বচ্ছতা ছিলনা। কারণ একজন অভিনেতা হিসেবে নানা স্থানে যেতে পারি। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। সেসময় আমরা বুঝতে পারি কোন নাটকটা মানুষের কাছে ভালো লেগেছে আর কোনটা লাগেনি। দর্শক বলছে এই নাটকটি হিট, কিন্তু মনগড়া টিআরপিত এসে বলছে না এটা নয়, ওই নাটকটি হিট। আসলে ওই নাটকটি কেউ দেখেনি। লবিং করে টেলিভিশনগুলো নিজেদের রেটিং বাড়িয়েছে বিজ্ঞাপনের দর বাড়াতে। এটা একটা বাণিজ্য।’ নাট্য নির্মাতা সাগর জাহান বলেন, ‘সারা বিশ্বে টিআরপি ব্যবস্থা চালু আছে তাহলে আমাদের দেশে কেন থাকবে না? আমি অবশ্যই টিআরপি ব্যবস্থাকে সমর্থন জানাই। তবে সেটা স্বচ্ছ হতে হবে। আর আদালতের যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেখানে তো বলার কিছু থাকে না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই টিআরপি ব্যবস্থা চালু থাকুক কিন্তু সেটা অবশ্যই স্বচ্ছ হতে হবে।’ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বৈশাখীর ডেপুটি হেড অপ প্রোগ্রাম আহসান কবির বলেন, ‘আমি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। টিআরপি নিয়ে আদালত যে রায় প্রদান করেছেন সেটা অবশ্যই যাচাই-বিশ্লেষণ করেই করেছেন। তবে এখানে আমি বলতে চাই, শুরু থেকেই টিআরপি নির্ধারেণর যে প্রসেসটা চালু ছিল সেখানে কোনকিছু নির্ণয়ই সঠিক ছিল না। সেগুলো হতো মনগড়া। এর আগেও একাধিক গণমাধ্যমে টিআরপি নিয়ে লেখালিখি হয়েছে। সেইসব ফিচার-সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে টিআরপির দুর্বলতা। সবদিক বিবেচনা করে আদালতের এই রায়ে জনমতের আকাঙ্ক্ষাটাই প্রতিফলিত হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।’এটিএন বাংলার প্রোগ্রাম উপদেষ্টা নওয়াজীশ আলী খান বলেন, ‘আদালত যেখানে রায় প্রদান করেছে সেখানে আমার কিছু বলার নেই। টিআরপি প্রকাশে ভুল ছিল বিধায় আদালতের এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছে বলে আমি মনে করি।’ এনই/এলএ/আরআইপি

Advertisement