বিশেষ প্রতিবেদন

মেলার নামে ট্যুরিজম বোর্ড কর্মকর্তাদের প্রমোদভ্রমণ!

বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে আনতে ব্যর্থ হলেও থেমে নেই মেলার নামে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি) কর্মকর্তাদের প্রমোদভ্রমণ। বিগত দুই বছরে ২১টি বিদেশি মেলায় অংশগ্রহণ করার ইতিহাস গড়লেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। মেলাসহ যাবতীয় কর্মসূচির আয়-ব্যয় ও অর্জনের হিসাব পর্যন্ত জানা নেই খোদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে।এ বিষয়ে ট্যুরিজম বোর্ডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) আকতারুজ্জামান খান কবিরের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, হিসেবটি ট্যুর অপারেটরদের কাছ থেকে নিতে হবে। আমরা হিসেব দিয়েছি। মেলার অবিভাবক সংস্থার কাছে হিসেব না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত দুই বছরে বিদেশি মেলা ও সেমিনারে অংশগ্রহণের নামে বিটিবির কর্মকর্তারা চীন, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, রাশিয়া, জার্মানি, অস্টেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ড, জাপান এবং ইতালি সফর করেছেন। প্রতিটি সফরে ছিলেন ৩ থেকে ৬ জন সরকারি কর্মকর্তা। শুধু বোর্ডের কর্মকর্তাই নয়, নানা কারণ দেখিয়ে এসব সফরে যুক্ত হয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। যদিও এসব কর্মকর্তাদের পর্যটনের পাশাপাশি নেই এ সংক্রান্ত বিপণন জ্ঞান।জানা গেছে, দেশের পর্যটনের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে ২০১০ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ড (বিটিবি)। তবে প্রতিষ্ঠার পর ৫ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পর্যটন শিল্পের প্রসারে টুরিজম বোর্ডের অবদান হয়ে উঠেছে প্রশ্নবিদ্ধ। গত কয়েক বছরে বিদেশি পর্যটক আগমনে দৃশ্যমান অর্জন দেখা না গেলেও থেমে নেই বিদেশি মেলায় অংশগ্রহণের নামে বিটিবি কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রমোদভ্রমণ।বিটিবি সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরেই ২১টি বিদেশি মেলায় অংশগ্রহণ করেছে ট্যুরিজম বোর্ড। এর মধ্যে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ১২টি এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ৯টি বিদেশি মেলায় অংশ নেয় বোর্ড। সর্বশেষ গত ৭ জুন তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রওনা দেয় কোরিয়ার উদ্দেশে। যারা অংশ নেবেন ৪ দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কোরিয়া ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল ফেয়ারে।জানা গেছে, বিদেশি মেলায় অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে বিদেশ সফরে যাওয়া কর্মকর্তাদের প্রধান কাজ থাকে দেশীয় পণ্য বিক্রি করা, বিদেশে নিজের দেশকে তুলে ধরা। একইসঙ্গে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কাছে দেশের পর্যটন সম্পর্কে তুলে ধরা, সভা-সমাবেশে যোগদান করা, স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করা। তবে এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ না করে বিদেশ সফরকারী কর্মকর্তারা মেলায় শুধু লিফলেট, ব্রোশিওর বিতরণ করেই দায়িত্ব শেষ করেন।এর আগে গত মাসে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো-২০১৬-তে অংশ নিতে ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান খান কবিরের নেতৃত্বে যান তিন সদস্যের একটি দল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া এ এক্সপো ঘুরে আসা একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, মেলায় ট্যুরিজম বোর্ডের জন্য নির্ধারিত স্টলে পর্যটনের প্রচারের জন্য কয়েকটি লিফলেট ছাড়া কিছু পাওয়া যায়নি। এমনকি স্টলে থাকা বিটিবির নির্বাহী কর্মকর্তা শাহজাহান কবির ব্যস্ত ছিলেন ব্যক্তিগত ছবি তোলা নিয়ে। আর স্টলে বাংলাদেশের পর্যটনের তথ্যদাতা হিসেবে থাকা ওই ব্যক্তির ভাষাগত দুর্বলতারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।এ প্রসঙ্গে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক ও প্যাসেফিক এশিয়া ট্রাভেল লিমিটেড (পিএটিএ) বাংলাদেশ চ্যাপটারের মহাসচিব তৌফিক রহমান জানান, বিদেশের বিভিন্ন মেলায় বিটিবির পক্ষ থেকে স্টল ভাড়া নেয়া হয়। যেখানে বসে বাংলাদেশি বেসরকারি ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য প্রচারের সুযোগ পায়। সে হিসেবে এসব মেলায় বিটিবির অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ কিছুটা হলেও লাভবান হচ্ছে। তবে বিভিন্ন সময়ে মেলায় সরকারিভাবে যেসব কর্মকর্তারা যান, তাদের বেশির ভাগেরই পর্যটন সংশ্লিষ্ট জ্ঞানের অভাব রয়েছে।তিনি বলেন, মেলাগুলোতে দেশের পর্যটন বিষয়ে দক্ষ লোক পাঠানো গেলে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যেতো। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়তো বিদেশি পর্যটক আগমনে।জানা গেছে, গত দুই অর্থবছরে বিটিবির অংশ নেয়া মেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে চায়না আউটবাউন্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম মার্ট-২০১৬, মস্কো ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল ট্রেড ফেয়ার-২০১৬ (রাশিয়া), ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম বোরস বার্লিন-২০১৬, এশিয়া প্যাসিফিক ইনসেনটিভস অ্যান্ড মিটিং এক্সপো (অস্ট্রেলিয়া), আউট বাউন্ড ট্রাভেল মার্ট-২০১৬ (ভারত), ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল মার্কেট-২০১৫ (ইংল্যান্ড), জিএটিএ ট্রাভেল শোকেজ-২০১৫ (জাপান), পিএটিএ (পাটা) ট্রাভেল মার্ট-২০১৫ (ভারত), ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার-২০১৫ (ভারত), জিএটিএ ট্রাভেল শোকেজ-২০১৪ (জাপান), ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার-২০১৪ (ভারত), ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল মার্কেট-২০১৪ (ইংল্যান্ড), ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম বোরস বার্লিন-২০১৫ (জার্মানি), আউট বাউন্ড ট্রাভেল মার্ট-২০১৪ (ভারত), বিআইটিই-২০১৫ (চায়না), মস্কো ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল ট্রেড ফেয়ার-২০১৫ (রাশিয়া), ওটিএম-২০১৫ (ভারত), বিআইটি-২০১৫ (ইতালি)।অারএম/বিএ

Advertisement