ছয় ভাই তিন বোনের সংসারে সবার ছোট আল-আমিন। ক্রিকেটে হাতেখড়ি পাবার পর থেকেই স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলবেন। এরআগে অনূর্ধ্ব-১৩, ১৫, ১৭ ও ১৯ দলের হয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপও খেলেছেন তিনি। এবার স্বপ্ন পূরণের পালা। লক্ষ্য জাতীয় দল। আর সে লক্ষ্য পূরণ করতে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগকেই বেছে নিয়েছেন এ নবীন। খেলছেন ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে। প্রথমবার খেলতে এসেই আলো ছড়িয়েছেন পুরনো ঢাকার এ ছেলে। লিগের প্রথম ১০ ম্যাচেই ১টি সেঞ্চুরি ও ৪টি হাফ সেঞ্চুরিসহ মোট ৪৭৮ রান তুলে সেরা পাঁচে রয়েছেন তিনি। শুধু ব্যাটিং নয়, বল হাতেও ৯টি উইকেট পেয়েছেন তিনি। নিজের ক্যারিয়ার, খেলা নিয়ে নানা ভাবনার কথা এক সাক্ষাৎকারে আল-আমিন তুলে ধরেছেন জাগো নিউজের ক্রীড়া প্রতিবেদক রামিন তালুকদারের কাছে...প্রশ্ন : আপনার দল তো সুপার সিক্সে উঠেছে, আরও ছয়টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন, সেখানে আপনার লক্ষ্য কি?আল-আমিন : সুপার লিগে ওঠায় আমার জন্য খুব ভালো হয়েছে। যদি সুপার লিগ না খেলতাম তাহলে অন্য যারা এ সুযোগ পেতো এগিয়ে যেত। এটা আমার জন্য খুব ভালো সুযোগ। চেষ্টা করবো এ সুযোগ কাজে লাগাতে।প্রশ্ন : এবারের প্রিমিয়ার লিগে তো আপনি শুরু থেকেই আলোচনায়। এর আগে কখনও এতো ভালো খেলেছেন?আল-আমিন : গত দুই বছর আমি আবাহনীতে খেলেছি। সেখানে বোলিং নিয়মিত করলেও ব্যাটিংয়ে তেমন সুযোগ হয়নি। হলেও অনেক নিচে ব্যাট করতাম। এখানে টপ অর্ডারে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছি। আমার মনে এ জন্যই ভালো হয়েছে।প্রশ্ন : প্রথমবারের মত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন, আর তাতেই এতো আলোচনা। কেমন উপভোগ করছেন?আল-আমিন : খুবই উপভোগ করছি। কারণ এমন একটা টুর্নামেন্ট যেখানে জাতীয় দলের ও বিদেশী অনেক ভালো খেলোয়াড়রা খেলছে, সেখানে আমি তাদের সঙ্গে ভালো খেলছি। অবশ্যই অনেক আনন্দ পেয়েছি।প্রশ্ন : লিগে তো এবার আপনি ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে যাচ্ছেন। বলা হয়ে থাকে প্রিমিয়ার লিগই জাতীয় দলের পাথেও, আগামীতে আপনার লক্ষ্য কি? আল-আমিন : ছোটবেলার থেকেইতো স্বপ্ন দেখছি একসময় জাতীয় দলে খেলবো। তবে এখন আমার চিন্তা হচ্ছে প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে। কিভাবে আরও ভালো করা যায় আরও রান তোলা যায়। কারণ আপনি যখন ভালো করবেন সবার তখন আপনার উপর প্রত্যাশা বেড়ে যাবে। সবাই তখন বলবে আল-আমিন ভালো করছে।প্রশ্ন : আপনার দলে বেশকিছু জাতীয় দলের সিনিয়র খেলোয়াড় আছেন, তারা আপনার খেলা নিয়ে কি বলেছেন?আল-আমিন : সিনিয়ররা বলতে নাদিফ ভাই, সৌরভ ভাই বলেছে সবকিছু ঠিক আছে। আর আপনি দেখবেন- যখন ভালো সময় যায় তখন সবকিছুই ভালো হয়। সবাই খুব সমর্থন করছেন। বলছেন ভালো হচ্ছে এটা চালিয়ে যাও।প্রশ্ন : প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি পেয়েছেন, এরপর বেশকিছু ম্যাচেও বড় ইনিংস খেলেছেন। আপনার বড় ইনিংস খেলতে পাড়ার কি কোন বিশেষ কারণ রয়েছে?আল-আমিন : প্রিমিয়ার লিগে এর আগে কখনোই খেলি নাই। চেষ্টা ছিল এবার যেন এ লিগটা খুব ভালো করতে পারি। আর যে উইকেট গুলোতে খেলা হচ্ছে সে উইকেট গুলোও খুব ভালো। চেষ্টা করছি ভালো করার, ইনিংসকে আরও বড় করার। শেষ যে পাঁচটি পঞ্চাশ হয়েছে আমার কাছে মনে হয়েছে আমি ওই ম্যাচগুলো শেষ করতে পারতাম। আপনারা দেখেছেন প্রথম ম্যাচের পর আর কোন ম্যাচে আমার শতরান হয় নাই। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে হতে পারতো। আরেকটু বড় করতে পারলে ভালো হতো।প্রশ্ন : নিয়মিত পারফরম্যান্স করছেন, এটা কি কোন ধরণের চাপ মনে হয়?আল-আমিন : ভালো খেললে সবাই মনে করেন যে আল-আমিন ভালো খেলবে, এটা এক ধরণের চাপ বলতে পারেন। তবে আমার কাছে মনে হয় চাপে আমি আরও ভালো খেলি। চেষ্টা করবো শেষ ম্যাচগুলো আরও ভালো করতে। যে দশটা ম্যাচ খেলেছি এরচেয়ে ভালো করতে।প্রশ্ন : আপনার ভালো খেলার পিছনে কি বিপিএলে ভালো খেলার আত্মবিশ্বাসটা রয়েছে?আল-আমিন : বিপিএল ঠিক না, আমার জাতীয় লিগের পারফরম্যান্সটা খুব কাজে দিয়েছে। বড় রান করতে হলে বড় ইনিংস খেলতে হবে। জাতীয় লিগে একটা ১৯৯ ছিল একটা ১৫৭ ছিল। আমার মনে হয় সেটাই কাজে লেগেছে।প্রশ্ন : আপনাদের দল ইতোমধ্যেই সুপার সিক্স নিশ্চিত করেছে, বড় তারকা না থাকলেও বেশ ভালো করছেন। এর কারণ কি?আল-আমিন : আমাদের দলটা খুব ভালো একটা দল। জাতীয় দলের মুমিনুল ভাই ছাড়াও কেউ না থাকলেও দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ আমরা। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং যাই বলেন। আমাদের বিদেশী খেলোয়াড়টাও খুব ভালো, হয়তো নামি দামি কেউ না; কিন্তু নিয়মিত পারফরমার। সবাই নিজের কাজটা সুন্দরভাবে পালন করছে। একটা দলে পারফরমার বাড়লে দলের ফলাফল খুব ভালো হয়।প্রশ্ন : আপনাদের দলগত লক্ষ্য কি?আল-আমিন : আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলি, এটাই আমাদের লক্ষ্য। সবসময় এটাই আলোচনা করি- এই ম্যাচটা কিভাবে জিতা যায়, প্রতিপক্ষ কেমন এইসব। ম্যাচ বাই ম্যাচ ভালো খেললেই টুর্নামেন্ট শেষে একটা ভালো অবস্থানে থাকতে পারবো আশা করি।প্রশ্ন : প্রথমবারের মত প্রিমিয়ার লিগ খেলছেন, কেমন লাগছে? বিশেষ করে ড্রেসিং রুম ও সতীর্থদের নিয়ে যদি কিছু বলতেন?আল-আমিন : ড্রেসিং রুমে অনেক মজা হয়। আমরা বিকেএসপিতে ক্যাম্প করছি, ওইখানে ক্যাম্প করলে বাইরের কিছু থাকে না, শুধু খেলার মধ্যেই থাকা হয়। সবাই ম্যাচ নিয়েই চিন্তা করে। আর সব সিনিয়র-জুনিয়র একসাথে মিলে অনেক মজা করি।প্রশ্ন : ক্রিকেট খেলায় আপনার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা কে?আল-আমিন : আমার পরিবার আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দেয়, বিশেষ করে আব্বা আম্মা।প্রশ্ন : যখন ভালো খেলেন তখন আপনার পরিবারের সবার কি অনুভূতি হয়?আল-আমিন : কখনোই আমাদের বাসায় পেপার-পত্রিকা রাখা হতো না, এবার আমি ভালো খেলছি বলেই বাসায় পত্রিকা রাখা শুরু হয়েছে। আমার আব্বা অসুস্থ, একজন হার্টের রুগী। উনি এখন টিভির সামনেই বেশি থাকেন। কখন কোন খবরে আমি আসি কিনা। একটা টিভিতে আমি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম, আমার আব্বা চিনতে পারেননি, আপা বলছে এটা আল-আমিন। বয়স হয়ে গেছে তো চোখে ঠিক মত দেখতে পায় না। আমি ভালো করলে পুরো পরিবারেই একটা আলাদা আনন্দ চলে আসে।প্রশ্ন : ক্রিকেটে আসার গল্পটা একটু বলবেন?আল-আমিন : ক্রিকেট ছোট বেলা থেকেই পাড়ার মাঠে টেপ টেনিস খেলতাম। তারপর আমার কোচ আব্দুল হাদি রতন, উনি আমাকে অনূর্ধ্ব-১৩ দলে খেলালেন। এরপর ১৫, ১৭ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও খেলেছি। ২০১২-তে অস্ট্রেলিয়াতে বিশ্বকাপ খেলছি। আমি, বিজয়-সৌম্য আমরা এক সাথে খেলেছিলাম।আরটি/আইএইচএস/পিআর
Advertisement