তথ্যপ্রযুক্তি

সফটওয়্যার খাতের প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থ বেসিস

প্রতি বছরে বড় ধরনের প্রণোদনা গ্রহণ করা সত্ত্বেও গত কয়েক বছরে বেসিসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতের প্রবৃদ্ধি ক্রমশ কমেছে। সম্প্রতি, খোদ বেসিসের করা ২০১৫ সালের এক জরিপ দেখা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরের পর থেকে সফটওয়্যার খাতের প্রবৃদ্ধি কমছেই। ২০১২ সাল থেকেই সফটওয়্যার রফতানিতে ধীর গতি লক্ষ্য করা যায়। এমনকি সবচেয়ে হতাশাজনক বছর ছিল ২০১৪-১৫ অর্থবছর।এ বিষয়ে বেসিসের বর্তমান সভাপতি শামীম আহসান বলেন, সফটওয়্যার প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসলেও কিছু তথ্য সংকট আছে। আমাদের সদস্যরা সফটওয়্যার রফতানির পর যখন ব্যাংকে তাদের কাগজপত্র জমা দেন তখন সেখানে সফটওয়্যার নাকি ইনফরমেশন এনিয়ে বিস্তারিত না লেখায় বাৎসরিক হিসাবে তা উঠে আসেনি।২০১৪ সালের শুরুতে সফটওয়্যার প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের এই শীর্ষ সংগঠনটি এক জাঁকজমক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দেশের সফটওয়্যার রফতানি আয় ২০১৮ সালের (পাঁচ বছরের) মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর ঘোষণা দেয়। আড়াই বছর পরে সেই লক্ষ্যমাত্রার সাথে অর্জনের কোনো মিল নেই।আর্থিক পরিমাণ হিসেব করলে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। অর্থাৎ অর্ধেক সময়ে বেসিসের অর্জন হওয়ার কথা ছিল সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে এই খাতে অর্জন হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার মত।পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সফটওয়্যার এবং কম্পিউটার ও প্রযুক্তি বিষয়ক সেবা রফতানির আয়ে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রফতানি আয় এসেছে ১০ কোটি ৭০ লাখ তিন হাজার মার্কিন ডলার। টাকার অংকে যা ৮০০ কোটি টাকার বেশি। যার প্রবৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ১১ মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ছয় দশমিক ২২ শতাংশ। এটি ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ছয় দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। তখন প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশ হলেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে এ খাতের আয় ছয় দশমিক ১২ শতাংশ পিছিয়ে ছিল। এ সময়ে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ১৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০১২-১৩ শেষে আয় ছিল ১০ কোটি ১৬ লাখ ডলার।এ বিষয়ে শামীম আহসান বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত প্রতিবেদনে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে। এখানে অনেক তথ্যই উঠে আসেনি । আমরা নিজেরা একটি পরিসংখ্যান করেছি, সেখানে আরো অনেক বেশি অর্জন হয়েছে।পরে বেসিসের করা পরিসংখ্যান উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে দেশের জিডিপিতে ১ শতাংশ অবদান রাখার ঘোষণার পেছনেও বিস্তর গবেষণা করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে রফতানি আয় প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলো প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশ ব্যাংকের সি-ফর্মের জটিলতায় এটি সরকারি হিসেবে প্রায় ১৩২ মিলিয়ন ডলার, বাস্তবিক অর্থে এটি প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার) ও ফ্রিল্যান্স-আউটসোসিং পেশাজীবীরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার আয় করছে। এছাড়া দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্থানীয় বাজার প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার। সবমিলে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মোট বাজার প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার, যা দেশের জিডিপির প্রায় ০.৫২ শতাংশ। প্রায় আড়াই বছরে আমরা এই অবস্থানে এসেছি।দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ধারাবাহিকতা থাকলে, পাবলিক প্রোকিউরমেন্টে দেশি কোম্পানির জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হলে, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিংয়ে নজর বাড়ালে এবং আন্তর্জাতিকমানের ভালো উদ্যোগ তৈরি হলে এই সময়ের মধ্যে জিডিপিতে ১ শতাংশ অবদান রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন শামীম আহসান। আরএম/এসকেডি/এমএস

Advertisement