উগ্রপন্থীদের একের পর এক হত্যাযজ্ঞ নতুন নয়। তবে এবার ভিন্নমাত্রা পেল একজন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারের স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায়। আর দেশের একজন সাহসী পুলিশ অফিসারকে এভাবে মূল্য দিতে হলো জঙ্গি দমনের সাফল্যের! দৃর্বৃত্তরা পরিবারের ওপর আঘাত হেনে বস্তুত নতুন বার্তা দিতে চেয়েছে। কিন্তু পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে ‘শোককে শক্তিতে পরিণত করা’র অভয় বাণী উচ্চারিত হয়েছে। দেশের মানুষ এ ধরনের অপতৎপরতা আর দেখতে চায় না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এভাবে একের পর এক হত্যাযজ্ঞ আর চলতে দেয়া যায় না। চট্টগ্রামের ঘটনাটিই হোক ঘাতকের শেষ নিশানা। গতকাল রোববার সকালে চট্টগ্রামের ব্যস্ততম এলাকা জিইসি মোড়ে দুর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাতের পর গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানমকে (মিতু)। একই দিন নাটোরে সুনীল গোমেজ (৬০) নামের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক পুলিশের নানা তৎপরতার পরও একের পর এক উগ্রপন্থীদের হাতে হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে ৪৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হন ৪৭ জন। প্রায় সবগুলো ঘটনায় হত্যার ধরন একই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী, টাঙ্গাইলে দরজি নিখিল চন্দ্র জোয়ারদার, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় এবং গত বছর আশুলিয়ায় পুলিশ হত্যা, ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাসহ বিভিন্ন ঘটনায় হামলাকারী ছিল তিনজন। তারা মোটরসাইকেলে আসে এবং অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ছুরি, চাপাতি, পিস্তল। গতকাল বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানমকে হত্যায়ও মোটরসাইকেলে আসা তিনজন জড়িত ছিল এবং তারা ছুরি ও পিস্তল ব্যবহার করেছে। এসব ঘটনার অনেকগুলোতেই দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস (ইসলামিক স্টেট) ও আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের কথিত বাংলাদেশ শাখা আনসার আল ইসলাম। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে তা নাকচ করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে একের পর এক ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কোনো একটি মামলারও কূলকিনারা করতে পারছে না। যার ফলে হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে। এবার আঘাত আসলো খোদ পুলিশ অফিসারের পরিবারের ওপর। যত কথাই বলা হোক, যত অভয় বাণীই শোনানো হোক- অপরাধীরা ধরা না পড়লে এবং যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত না হলে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ বাসা বাঁধবে। যা আর্থসামাজিকসহ অন্যান্য সবক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে বাধ্য। উগ্রপন্থীদের আস্ফালন বন্ধ হবে চিরতরে- দেশের মানুষ এটাই দেখতে চায়।এইচআর/পিআর
Advertisement