এসআই বাবা আব্দুল ওয়াদুদের সূত্র ধরে পুলিশের পরিদর্শক মো. মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে পরিচয়। প্রথম দেখাতেই নজর কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। এরপর যথারীতি পারিবারিক আলোচনায় আত্মীয়তা। বিয়ে করেন মাহবুবা আক্তার মিতুকে। মিতুকে বিয়ের পরেই পাল্টে যায় জীবন। ভাবেননি পিতার মতোই তিনিও পুলিশ কর্মকর্তা হবেন। স্ত্রী মিতুর সহযোগিতায় বিসিএস দিয়ে পুলিশে যোগদান। পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে সকল কাজের অনুপ্রেরণায় ছিলেন স্ত্রী মিতু। শঙ্কা দেখা দিলেও স্ত্রী খুন হতে পারেন তা ভাবতে পারেননি কখনো।রোববার সকালে দুর্বৃত্তদের অস্ত্রের আঘাতে ও গুলিতে চট্টগ্রামে নিহত হন মিতু। প্রাথমিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, পরিকল্পিত এবং টার্গেট করেই এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মিতুকে (৩২) হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে এক মিনিটের কমান্ডো অভিযানে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন দুর্বৃত্তরা সময় নেয় মাত্র ৪০ থেকে ৫০ সেকেন্ড। মোটরসাইকেলে থাকা তিন যুবকের মধ্যে একজন মাহমুদাকে প্রথমে ছুরিকাঘাত করে, আরেকজন গুলি করে চলে যায়। ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ।পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বাবুল আক্তার পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) হন। গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পুলিশ সদর দফতরে যোগ দেন তিনি। তার কর্মস্থল এখনো নির্ধারিত হয়নি। আজ সকালে স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি চট্টগ্রামে যান। ঢাকায় থাকতে শশুড় বাড়িতে যাবো যাবো করে আর যাওয়া হয়নি। শ্বশুর বাড়িতে এলেন কিন্তু স্ত্রীর মরদেহ নিয়ে।পারিবারিক আলোচনায় বিয়ে হলেও আগে থেকেই মিতুকে পছন্দ করেন বাবুল। স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার পর বদলে যায় ক্যারিয়ার। বিসিএস দিয়ে এএসপি হিসেবে যোগদান করেন তিনি। কখনো স্বামীর পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বে বাধা দেননি মিতু। বরং বিভিন্ন সময় সাহস যুগিয়েছেন। অনুপ্রেরণা হিসেবে সব সময় কাজ করেছেন। বাবুলের সব অর্জনেই খুশি ছিলেন মিতু। এমনটাই বলছিলেন বাবুলের সহকর্মীরা।রোববার স্ত্রীর মৃত্যুর খবরে বিমানে ঢাকা থেকে ছুটে যান চট্টগ্রামে। বেলা পৌনে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষে বসে অঝোরে কাঁদেন বাবুল আক্তার। সেখানে থাকা নগরের পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারকে কেন দেখে রাখা হয়নি? আমি তো আগেই বলেছিলাম, তারা আমার পিছু ছাড়বে না।’চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) সন্তোষ চাকমা বলেন, ‘খোয়াজ নগর থেকে হাটহাজারীর আমানবাজার পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের ধরার পর স্যার (বাবুল আক্তার) পরিবার নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন থাকতেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, তাকে মারতে না পারলেও জঙ্গিরা তার পরিবারকে শেষ করে দিতে পারে।’
Advertisement
বাবুলের ব্যাচ মেট আশরাফ উদ্দিন বলেন, “বাবুলের স্ত্রীকে আমরা সবাই নিরহঙ্কারী হিসেবে জানি। স্বামীর জঙ্গি বিরোধী অপরাশনে উদ্বিগ্ন থাকলেও কখনো বাধা দেননি। বরং সাহস দিয়েছেন। পেশাদারিত্বে সাথে কাজ করতে বলতেন বলে বাবুলই গল্প করতেন। কিন্তু সম্ভবত:! জঙ্গিরা বাবুলের উপরের ক্ষোভটা স্ত্রীর উপর দিয়ে চালালো।নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গি দমনে সক্রিয়ভাবে কাজ করা এ পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় পুলিশি নিরাপত্তা পর্যাপ্ত ছিল। দু’জন পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক তার বাসায় নিরাপত্তায় ছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় ওই দুজন সদস্য বাসা থেকে চলে আসেন। কিন্তু আজ (রোববার) সকালে ওরা বাবুলের বাসায় যাওয়ার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে।’বাবুলের খালা শাশুড়ি মমতাজ বেগম বলেন, মিতু সব সময় জামাই বাবুলকে সহযোগিতা করতো। পেশাদারিত্বের সঙ্গে পুলিশের ধার্যকৃত দায়িত্ব পালনে বাধা আসবেই। সে বাধা মাড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে এমনটাই সব সময় বলতো মিতু। অনুপ্রেরণা দিতো সব সময়। কিন্তু অপরাধীরা মিতুকে টার্গেট করতে পারে তা ভাবনার মধ্যে ছিল না।জেইউ/এসকেডি