আগামী অর্থবছরের জন্য তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট আসছে। যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৪৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বুধবার বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে।অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে। এর পরিমাণ হবে দুই লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। বাকি ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকখাত, সঞ্চয়পত্র ও বৈদেশিক খাত থেকে ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।জানা গেছে, পাঁচ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা মাথায় রেখে ২০১৬-১৭ বছরের বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে ২০২১ সালের আগেই দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জনকে সম্ভব করার স্বপ্ন দেখছেন অর্থমন্ত্রী। বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বছরে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তিনি ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে যেতে চান।সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এবার এনবিআর বহির্ভূত কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাত হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন সেবা ফি বা করবহির্ভূত উৎস থেকে আয় করা হবে ৩২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।জানা গেছে, বৈদেশিক অনুদান না পেলে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপি ১৯ লাখ ৬১ হাজার ১৭ কোটি টাকার ৫ শতাংশ। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বৈদেশিক অনুদান পাওয়া গেলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৯২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৩৮ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। এর মধ্য থেকে আগে নেওয়া বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে আট হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। ফলে বিদেশি উৎস থেকে নতুন অর্থবছরে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩০ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা।এ ছাড়া দেশের ভেতর থেকে নতুন অর্থবছরে ৬১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে নেওয়া হবে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ও অন্যান্য উৎস থেকে আসবে আরো তিন হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরের বাজেট থেকে উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় হবে এক লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া নতুন অর্থবছরজুড়ে দুই লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় হবে। এর মধ্যে অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় এক লাখ ৮৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা।অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, এবারও ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থাৎ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করা হবে। ওইদিন বাজেট বক্তৃতা, সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি; প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাব, সংযুক্ত তহবিলপ্রাপ্তি, মঞ্জুরি ও বরাদ্দের দাবিসমূহ (অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন), বিস্তারিত বাজেট (উন্নয়ন), নারী উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৪০টি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম, শিশুদের নিয়ে বাজেট ভাবনা, মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি, মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো, বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি, বাজেটের সংক্ষিপ্তসার, দক্ষতা উন্নয়ন-উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের অগ্রাধিকার, কাঠামো রূপান্তরে বৃহৎ প্রকল্প;, প্রবৃদ্ধি সঞ্চারে নতুন মাত্রা, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৬ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা: হালচিত্র ২০১৬ ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ জাতীয় সংসদ থেকে এর কপি সরবরাহ করা হবে। একইসঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রণীত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যাবলি- ২০১৫-১৬ জাতীয় সংসদে পেশ করা হবে।এমএ/বিএ
Advertisement