রিজার্ভ চুরি নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়ার পর এটা আশা করা খুবই সঙ্গত যে এই রিপোর্ট এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। তদন্ত রিপোর্টে যে সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নেও নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কষ্টার্জিত ৮শ কোটি টাকা উদ্ধার করতে হবে। দোষীদের বিরুদ্ধেও নিতে হবে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। আর ভবিষ্যতে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারেও আরো সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন উঠে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। ব্যাংকিং সেক্টরের জন্যও এটি ছিল বড় দুঃসংবাদ। এ অবস্থায় নৈতিক দায় নিয়ে তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। ঘটনা তদন্তে সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে গত ১৫ মার্চ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটিকে ৩০ দিনে অন্তর্বর্তীকালীন ও ৭৫ দিনে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। সে অনুযায়ী ৭৫ তম দিনেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাজেটের কারণে তিনি ব্যস্ত থাকবেন। তিনি বলেন, ‘তবে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।’অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এই প্রতিবেদনটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সংস্কার। কারণ, আমাদের অনেক দোষ আছে।’ তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে কমিটি প্রধান ড. ফরাসউদ্দিন বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে তিনি গণমাধ্যমের কাছে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছে এ ব্যাপারে। তিনি বলেছেন, ‘আগের প্রতিবেদনে সুইফটের গাফিলতির কথা বলা হয়েছিল। মূল দায় তাদের কি না, তা এবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সুইফট কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। তবে ভবিষ্যতে সমস্যার সমাধান সুইফটকে নিয়েই করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দেখেছি, রিজার্ভ চুরির জন্য দেশের ও দেশের বাইরের কারা জড়িত। চুরি যাওয়া কতটা অর্থ আদায় করা সম্ভব, তারও একটা চিত্র দিয়েছি। আশাব্যঞ্জক চিত্র।’আমাদের দেশে কোনো বিষয়ে তদন্ত কমিটি হলে সেই রিপোর্ট আলোর মুখ দেখার নজির খুব বেশি নেই। আশার কথা যে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দিয়েছে। মানুষজন এখন দেখতে চায় সরকার কি পদক্ষেপ নেয়। এইচআর/পিআর
Advertisement