বিনোদন

ঋতুপর্ণ ঘোষ : প্রস্থানের তিন বছর পেরিয়ে

ভারতীয় কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ। আজীবন তিনি লড়াই করেছেন রুচিশীল দর্শক তৈরি করে বাংলা ছবির উন্নয়ন ঘটাতে। নির্মাণের মুন্সিয়ানায় বাংলা ছবিকে তিনি নিয়ে গেছেন বিশ্ব দরবারে।আজ নন্দিত এই নির্মাতার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের ৩০ মে কলকাতায় নিজ বাসায় ঘুমের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ক্ষণজন্মা এই গুণী পরিচালক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো মাত্র ৪৯ বছর!প্রিয় পরিচালকের স্মরণে নানা আয়োজনে টালিগঞ্জে আজ পালিত হচ্ছে দিবসটি। বাংলাদেশেও তাকে স্মরণ করছেন অনুরাগীরা। বাংলা ছবির এই অসাধারণ প্রতিভাধর মানুষটির প্রতি জাগো নিউজের পক্ষ থেকে রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।১৯৬৩ সালের ৩১ অগস্ট কলকাতায় ঋতুপর্ণ ঘোষের জন্ম। তার বাবা-মা উভয়েই চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন তথ্যচিত্র-নির্মাতা ও চিত্রকর। ঋতুপর্ণ ঘোষ সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন।ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন ভারতের এলজিবিটি সম্প্রদায়ের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। জীবনের শেষ বছরগুলিতে তিনি রূপান্তরকামী জীবনযাত্রা নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করছিলেন। তিনি নিজের সমকামী সত্ত্বাটিকে খোলাখুলিভাবে স্বীকার করে নেন, যা ভারতের চলচ্চিত্র জগতের খুব কম মানুষ করেছেন।চলচ্চিত্র জগতে আসার আগে ঋতুপর্ণ ঘোষ কাজ করতেন বিজ্ঞাপন জগতে। সেখানে জনপ্রিয়তা পেয়ে আগ্রহী হন চলচ্চিত্রে। বিজ্ঞাপন জগত ছেড়ে ১৯৯২ সালে নির্মাণ করেন প্রথম ছবি ‘হীরের আঙটি’। এরপর ১৯৯৪ সালে এসে নির্মাণ করলেন ‘উনিশে এপ্রিল’। এটি ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রথম জাতীয় পুরষ্কার এনে দেওয়া চলচ্চিত্র। ছবিটিকে আজও বাংলা ছবির আর্কাইভে দারুণ এক সংযোজন বলে মানা হয়।এরপর দহন, উৎসব, চোখের বালি, অন্তরমহল, সব চরিত্র কাল্পনিক, নৌকাডুবির মতো একের পর এক ছবি তৈরি করেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। তার ১২ টি চলচ্চিত্র জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি।কলকাতার চলচ্চিত্রাঙ্গনে মনে করা হয়, নব্বইয়ের দশকের গোড়া অবধি বাংলা ছায়াছবিতে যে বন্ধ্যাত্ব চলছিল, সেটা কাটিয়ে উঠে দর্শককে আবারও সিনেমা হলের দিকে আকৃষ্ট করতে ঋতুপর্ণ ঘোষের অবদান ছিল অসামান্য।চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি বাংলা সাময়িক পত্রিকা সম্পাদনাও করতেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগরক্ষাকারী সাইটগুলোতেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। মৃত্যুর মাত্র দুদিন আগে তিনি টুইটারে লিখেছিলেন, ‘সত্যান্বেষী’র শুটিং শেষ।’ শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়ে তৈরী হচ্ছিল তার সর্বশেষ ছবি। তার অকাল প্রয়াণে সেই ছবি অসমাপ্ত থেকে যায়। পরে ছবিটি মুক্তি দেয়া হয় অন্যদের তত্ত্বাবধানে।ফলে ২০১২ সালে নির্মিত ‘চিত্রাঙ্গদা’ চলচ্চিত্রটিকেউ ধরা হয় ঋতুপর্ণ ঘোষের শেষ কাজ। ওই ছবিটির জন্য বিশেষ জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন জাতীয় চলচিত্র পুরষ্কারে। তিনি নিজে অভিনয়ও করেছিলেন চিত্রাঙ্গদায়। সেখানে ঋতুপর্ণ ঘোষের গলায় একটি সংলাপে ছিল- ‘তাহলে আসি, হ্যাঁ?’ তারপর গেলেন। কিন্তু ঋতুর অনেক বদল হলেও ফিরলেন না আর ঋতুপর্ণ ঘোষ। ফিরবেনও না। যে পথে তিনি যাত্রা করেছেন সে পথে যাওয়া আছে আসা নেই।তবে ঋতুপর্ণ অমর হয়ে রইবেন রুচিশীল বাঙালির অন্তরে, দর্শকের বিনোদনের বায়নায়। যারা চলচ্চিত্রকে জীবনের রঙিন ক্যানভাস ভাবতে পারেন, শিল্পের অনন্য মাধ্যম ভাবতে পারেন। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন ঋতুপর্ণ।এলএ/আরআইপি

Advertisement