মেধা-মননের গুণে শিল্পী থেকে শিল্পাচার্য হয়েছিলেন তিনি। তার রঙ-তুলির ছোঁয়ায় বিশ্বের কাছে পরিচিতি পায় বাংলার শিল্প। বাংলার চিত্রশিল্পের জাগরণ হয় তার হাত ধরে। তিনি জয়নুল আবেদিন। বাঙালির রুচির দুর্ভিক্ষ দূর করে জাগ্রত করেন জাতির শিল্পবোধ। আজ সোমবার তার শততম জন্মবার্ষিকী। শিল্পাচার্যের জন্মশতবর্ষ পালিত হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বছরব্যাপী আয়োজনে। আজ সোমবার জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমিতে `শিল্পাচার্যের জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটি`র সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এ তথ্য জানান। বর্ষব্যাপী এ আয়োজনের মধ্যে রয়েছে শিল্পাচার্যের আঁকা ছবির প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। অনুষ্ঠিত হবে তার ছাত্রদের সৃজিত চিত্রকর্মের প্রদর্শনী। প্রকাশ করা হবে স্মারক ডাকটিকিট। এসব আয়োজন হবে শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর ও ময়মনসিংহের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালায়।এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে শিল্পাচার্যের জন্মশতবর্ষের আয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদও শিল্পাচার্র্যের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে। ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন জয়নুল আবেদিন। ১৯৩৩ সালে ভর্তি হন কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুলে। ওখানেই ইউরোপীয় ও আধুনিক চিত্রকলার সঙ্গে তার পরিচয়। ১৯৩৮ সালে তিনি সর্বভারতীয় চিত্র প্রদর্শনীতে স্বর্ণপদক লাভ করেন।পরের কয়েক বছরে তিনিই হয়ে ওঠেন প্রধানতম শিল্পী। তার চিত্রকর্মে ফুটে উঠেছে বুভুক্ষু মানুষের আর্তনাদ এবং একই সঙ্গে প্রতিবাদী ভঙ্গি মূর্ত হয়ে উঠেছে। তার `সংগ্রাম` ও `দুর্ভিক্ষ` সিরিজের চিত্রগুলো আজও মানুষকে শক্তি দেয়।শুধু নিজে এঁকেই থেমে যাননি শিল্পাচার্য, তার হাত ধরেই বাংলাদেশ চিত্রশিল্পের শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। ১৯৪৮ সালে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গড়ে তোলেন প্রথম চারুকলা ইনস্টিটিউট। নামেন সমাজের রুচির দুর্ভিক্ষ দূর করার আন্দোলনে। সে প্রচেষ্টার ফলে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে গড়ে ওঠে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া ও নারায়ণগঞ্জে শিল্পশিক্ষার প্রতিষ্ঠান। ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউটে শিল্পশিক্ষার যে বীজ বুনেছিলেন, তা আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। পরিণত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে।
Advertisement