ফিচার

বাংলা সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ পহেলা বৈশাখ

বাংলা সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ পহেলা বৈশাখ

বিলকিস নাহার মিতু

Advertisement

পহেলা বৈশাখ বাংলা বছরের প্রথম দিন ও বাঙালি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এই দিনটি উদযাপন করে থাকে। পহেলা বৈশাখ মানে পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া। এটি শুধু একটি উৎসবই নয়; বরং এটি বাঙালি জাতীর ঐক্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক।

পহেলা বৈশাখ সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বৈশাখের প্রথমদিন উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলা নববর্ষের উৎসব ও আয়োজন।

পান্তা ভাত আর ইলিশ সঙ্গে নানান ভর্তা তথা বাঙালিয়ানা খাবার খাওয়া হয় এই দিনে। মেয়েরা লাল পাড়ে সাদা শাড়ি ছেলেরা ধুতি, পাঞ্জাবী বা লুঙ্গী পরে দিনটি উদযাপ করে থাকে। গ্রামে ও শহরে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে নানা আয়োজন করা হয়ে থাকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে।

Advertisement

মূলত বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনা হয় সম্রাট আকবরের সময় থেকেই। সে সময় বাংলার কৃষকরা চৈত্র মাসের শেষদিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার ও অন্যান্য ভূ-স্বামির খাজনা পরিশোধ করত। পরেরদিন ভূ-স্বামিরা তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন এবং এই উপলক্ষে মেলা সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করত তারা। এভাবেই বাংলা ও বাঙালির জীবনের সঙ্গে পহেলা বৈশাখের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।

পূর্বে পহেলা বৈশাখ যেভাবে পালন করা হতো বর্তমানে তার থেকে ভিন্ন ভাবে পালন করা হচ্ছে। পহেলা বৈশাখ উদযাপনে কিছু বাদ যেমন গেছে তেমনি নতুন নতুন সংযোজন ঘটেছে নববর্ষ উদযাপনের জন্য। গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে বাংলা নববর্ষের খুবই গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। পূর্বে গ্রামে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করা হতো ; তাতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা ও খেলার আয়োজন করা হতো। সঙ্গে থাকতো লোকগান ও পুতুলনাচ, বায়স্কোপ। মণ্ডা-মিঠাই সহ মজার মজার খাবার পাওয়া যেতো।

নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস মাটির তৈরি, বাঁশ ও বেতের তৈরি নানান জিনিস মেলায় থাকতো। বর্তমানে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। মেলার আয়োজন করা হলেও দেশীয় পণ্যগুলোর তুলনায় এখন কৃত্রিম আর বিদেশী পণ্যের ছড়াছড়ি দেখা যায়। পহেলা বৈশাখের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হয় ঢাকায় রমনার বটমূলে। এই দিন ছায়ানটের শিল্পীরা প্রভাতেই ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গান দিয়ে শুরু করে।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এক বিশাল মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে এবং তাতে থাকে নানান রকম ফুল, পাখি, হাতি, ঘোড়া সহ নানা মুখোশ ও অবয়ব। এই দিন সরকারি ছুটি থাকে কিন্তু স্কুল-কলেজ গুলোতেও নানা আয়োজন করে পহেলা বৈশাখ উদযাপ করা হয় বর্তমানে। বাংলা নববর্ষে সব কারাগার, হাসপাতাল ও এতিমখানা বা শিশু পরিবারগুলোতে ঐতিহ্যবাহী খাবার বিতরণ করা হয়।

Advertisement

পৃথিবীতে একটা উৎসবের এরকম ব্যাপকতা বিস্তার গ্রহণযোগ্যতা ও মান্যতা পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর কোথাও বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবেনা। পহেলা বৈশাখ আমাদের আশা ও অনুপ্রেরণার উৎস। তাই, আসুন আমরা আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যকে সবার সামনে তুলে ধরি এই দিনটি উদযাপনের মধ্য দিয়ে।

আরও পড়ুন

পাতায় কেনা এক টুকরো শৈশব বৈশাখে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি কেন এত গভীর?

লেখক: সরকারি বি এল কলেজ, খুলনা

কেএসকে/এমএস