ফিচার

ফুল নিয়ে চিন্তিত যশোরের চাষিরা

দু’দিন বাদেই ইংরেজি নববর্ষ। দিনটিতে তাই ফুলের কদর ব্যাপক। আর এটাইকে উপলক্ষ্য করে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি এলাকার ফুল চাষিরা ফুলের বাজার ধরতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। এবার এ অঞ্চলের চাষিদের প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে সামনে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। কেননা সোমবার হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। সামনে লাগাতার হরতাল অবরোধ আসলে তাদের বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবেনা। একই সাথে আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হবে। চলতি ফুল মৌসুমে এ অঞ্চলের চাষিরা প্রায় দেড়হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করেছেন। গদখালি এলাকার মাঠে প্রান্তে এখন শুধু ফুল আর ফুল। কেননা এলাকার চাষিরা কেউ ধান আবাদ করেন না। সবাই করেন ফুলের আবাদ। রঙ-বেরংয়ের ফুলের সমারোহে গদখালি এলাকা অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি দিচ্ছে। স্থানীয় ফুল চাষিরা জানান, ইংরেজি নববর্ষ, বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা দিবসে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করে থাকেন। জানা যায়, দেশের ফুলের চাহিদার ৭০ শতাংশ ফুল যশোরের গদখালি থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। আগে এর হার ছিল ৮০শতাংশ। এছাড়াও প্রতিবছর বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে সারাদেশে যে ফুল বিক্রি হয় তার ৭০ শতাংশ ফুল গদখালি থেকে সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় ফুলচাষি জাকির হোসেন জানান, প্রতিবছর ইংরেজী নববর্ষে ফুলের বাজার ধরতে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। আগামী ১ জানুয়ারি ২০১৫ ইংরেজি নববর্ষে ফুলের বাজার ধরতে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে ফুলচাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। গদখালি ফুলচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, ফুলচাষিরা ইংরেজী নববর্ষ, বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও ২১ শে ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা দিবসকে বিশেষ দিন হিসেবে আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। ইংরেজী নববর্ষ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরের ফুল ব্যবসায়ীরা ফুল ক্রয়ের জন্য ১৫-২০ দিন আগে থেকেই অর্ডার অনুযায়ী চাষিদের অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেছে। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে সারাদেশে ফুল সরবরাহ শুরু হবে। আশা করছি এবার প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বাজারজাত করতে পারবো। তবে সামনে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। আগামীতে হরতাল অবরোধ আসলে তাদের ব্যাপক ক্ষতির শিকার হতে হবে।১৯৯০ সালের দিকে এ অঞ্চলের কৃষকরা ধান কিংবা সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেছে। কিন্তু এখন তারা পুরোপুরিই ফুল চাষের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। অন্য ফসলের তুলনায় ফুল চাষ অধিক লাভবান হওয়ায় গদখালিসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে অন্য কোন ফসল চাষ করে না।চাষিদের অভিযোগ গদখালি ফুলের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পেলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ তেমন কোন সহায়তা করেন না। ফুল ক্ষেতে বিভিন্ন রোগ বালাই হলে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে কিটনাশক প্রয়োগ করেন। স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত ফুল সংরক্ষণের জন্য একটি আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের জন্য তারা সরকারের কাছে দ্বীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া ফুল উৎপাদনের জন্য চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পায়না ফুলচাষিরা।স্থানীয় চাষিদের উৎপাদিত ফুল বিক্রয়ের জন্য যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের গদখালি নামক স্থানে গড়ে উঠেছে বিশাল বড় একটি ফুলের হাট। এই হাটে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে ফুল বেচাকেনা। প্রতিদিন রাত পোহাতেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজির হয় ফুলের পাইকারি ক্রেতারা। এরপর ফুল ক্রেতাগণ তাদের চাহিদা অনুযায়ী ফুল কিনে ট্রাক যোগে নিয়ে যায় গন্তব্যে। ইংরেজী নববর্ষ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বর্তমানে ফুলের বাজার বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে প্রকারভেদে প্রতি পিস গোলাপ ফুলের পাইকারি দাম ৪/৫ টাকা, গ্লাডিওয়াস ফুল ৮/১০ টাকা, রজনীগন্ধা ১০০ পিস ২৫০/৩০০ শ’ টাকা, জারবেরা ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করছেন। এ ছাড়া প্রতি হাজার গাদা ফুল বিক্রি হচ্ছে ২শ টাকা করে। এ ব্যাপারে যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপপরিচালক নিত্য রঞ্জন বিশ্বাস জানান, প্রতি বছর যশোর জেলার গদখালিতে প্রায় ২ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয়ে থাকে। আমরাও কৃষকদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।

Advertisement