কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিনই রোগী ভর্তি থাকে সহস্রাধিক। নিজ জেলা ছাড়াও চিকিৎসা নেন পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহের বাসিন্দারাও। ধারণক্ষমতার চারগুণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিই এখন রোগাক্রান্ত।
Advertisement
বিশাল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও স্টাফরা। শয্যার বাইরে থাকা রোগীদের মিলছে না খাবার। হাসপাতালের সর্বত্র দুর্গন্ধ বিরাজ করছে।
হাসপাতালটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, ওয়ার্ডের বাইরে গলিপথেও গিজ গিজ করছে রোগী। কোনো কোনো জায়গায় মাথার ওপর ঘুরছে না ফ্যান। ঘামে ভিজেই চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড়িয়া গ্রাম থেকে স্বামীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছেন নাসিমা খাতুন। তিনি চারদিন ধরে হাসপাতালের নিচতলায় পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
Advertisement
নাসিমা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা চিকিৎসা পাচ্ছি তবে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেই। হাসপাতালের বেডে জায়গা না হওয়ায় রোগীর খাবার পাচ্ছি না। বাড়ি থেকে খাবার এনে খাওয়াতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।’
পোড়াদহ থেকে হাসপাতালে এসেছেন ইলিয়াস আলী। চারদিন থাকার পরও তিনি বেড পাননি। ইলিয়াস আলী বলেন, ‘সকাল-রাতে চিকিৎসক দেখে যান, সেবা বলতে এটুকুই। হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার বেশিরভাগ যন্ত্র নাকি নষ্ট। বাইরে থেকে পরীক্ষা করতে হচ্ছে, খাবার পাচ্ছি না।’
হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, উন্নতমানের ডিজিটাল এক্স-রে দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে তা সব রোগীর চাহিদা মেটাতে পারছে না। অনেক রোগীই দালালের খপ্পরে পড়ে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা করাচ্ছেন। হাসপাতালে রয়েছে ওষুধের অপ্রতুলতা।
শিশু বিভাগে দেখা যায়, ২৫ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছে ১১০ জন। সেখানকার নার্সরা বলেন, আমাদের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী রোগী ভর্তি হলে চিকিৎসার মান বাড়ানো যেত। কিন্তু এত রোগীর ভারে আমরাই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। এখানে কর্মপরিবেশ বলে কিছু নেই।
Advertisement
কথা হলে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক হোসেন ইমাম বলেন, ‘আমরা দিনের পর দিন বলে আসছি, এত রোগীর ভার হাসপাতালের বহন করার ক্ষমতা নেই। তারপরও কেউ এলে চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয় না। যতটুকু সাধ্যে কুলায় আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে ওষুধ আসে ২৫০ শয্যার অনুপাতে। সেই ওষুধ সব রোগীকে দিতে গেলে কিছুটা সংকট হবেই। পাশে ৫০০ শয্যার কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হলে হয়তোবা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরবে।’
আল-মামুন সাগর/এসআর/জেআইএম