সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে কৃষকদের ক্ষতি করে রাতের আঁধারে অবাধে মাটি কেটে বিক্রির ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে চললেও ভয়ে কিছু বলতে পারছেন না প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা। মাটি বিক্রির চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় তারা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। কেউ মুখ খুললেই হতে হয় হয়রানির শিকার।
Advertisement
সুনামগঞ্জের ১৩৭ হাওরে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ধান উৎপাদন হয়। তার মধ্যে অন্যতম বোরো ফসল ও জীববৈচিত্র্যের আঁধার দেখার হাওর। কৃষকরা যে হাওরে প্রায় ২০ কোটি টাকার ধান ফলিয়ে হাওরের প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থনীতিকে চাঙা রাখেন, সেই হাওরের বুক চিরে এস্কেভেটর মেশিনের মাধ্যমে অবাধে চলছে মাটি বিক্রির রমরমা ব্যবসা। হাওরে খাস খতিয়ানভুক্ত কান্দা ও অনাবাদি জমি কেটে ট্রাক দিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর, জলাশয়, খালসহ নিচু জমি। আর এই মাটি বিক্রির ব্যবসা করে এরইমধ্যে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অসাধু সিন্ডিকেট। যা প্রশাসনের সামনেই চলছে।
সরেজমিনে দেখার হওরে গেলে সাংবাদিক দেখে এস্কেভেটর মেশিন রেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন চালক রুহুল আমিন। সামনে পড়ে গেলেও নাম প্রকাশ করেননি তিনি। পরে একটি নম্বরে কল দিলে সেখান থেকে গাড়িতে তালা দিয়ে চালককে পালিয়ে যেতে বলে অসাধু সিন্ডিকেটের চক্রটি।
শুধু দেখার হাওর নয়, জেলার বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারা বাজার, মধ্যনগরসহ ৫ উপজেলার ১৫টি হাওরে অবাধে মাটি কাটায় আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে গোচারণ ভূমি, বীজতলা ও কৃষিজমি। সেইসঙ্গে চলতি বছর হাওরে ধান শুকানো কিংবা গোলায় তোলাতো দূরের কথা ধান কেটে বাড়ি কীভাবে নিয়ে যাবেন সেই চিন্তায় পড়েছেন ৫ উপজেলার কয়েক লাখ কৃষক।
Advertisement
দেখার হাওরের কৃষক সুলতান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, যেভাবে হাওরে অবাধে মাটি কাটা হচ্ছে এতে কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভয়ে কেউ কথা বলতে পারছে না। যেই কথা বলে, তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। এদিকে প্রশাসনের কঠোর নজর দেওয়া উচিত।
করচার হাওরের কৃষক স্বপন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, রাতভর হাওরের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এটা সত্যি দুঃখজনক। এদিকে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো নাম-গন্ধ নেই।
তবে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এরইমধ্যে ভূমি অপরাধ প্রতিকার ও প্রতিরোধে নতুন একটি আইন হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে হাওরের মাটি কাটার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এফএ/এমএস
Advertisement