লাইফস্টাইল

ঢাকার ব্যস্ত জীবনে মানুষের অবসর বিনোদন কেমন?

ঢাকার ব্যস্ত জীবনে মানুষের অবসর বিনোদন কেমন?

সানজানা রহমান যুথী

Advertisement

ঈদের ছুটি শেষে আবার শুরু হয়েছে ঢাকার চিরচেনা ব্যস্ততা। রাজধানীর রাস্তাগুলোয় ফিরেছে যানজট, কানে ফিরে এসেছে হর্নের চেনা শব্দ, আর প্রতিটি মানুষ আবারও ডুবে গেছে জীবিকার তাগিদে। এই কর্মব্যস্ত জীবনের মাঝে অবসর, বিশ্রাম কিংবা বিনোদনের জায়গা খুবই সীমিত। তবুও মানুষ চেষ্টা করে খুঁজে নিতে একটু প্রশান্তি।

ঈদের ছুটিতে অনেকেই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে, প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করে কিংবা নিজ জেলা শহরে ফিরে কিছুটা মানসিক শান্তি পেয়েছেন। কিন্তু ছুটি শেষ, আর সেই শান্তি যেন আবার চাপা পড়ে যাচ্ছে ঢাকা শহরের যান্ত্রিকতায়।

এই শহরের জীবন যেন সময়ের সঙ্গে এক অনন্ত দৌড়। সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিস, শিক্ষার্থীদের ক্লাস, বাসার কাজ, যানজট; সব মিলিয়ে একটা রুটিনের মাঝে আবদ্ধ থাকে এখানকার প্রায় সবাই। তবুও এই রুটিনের ফাঁকে মানুষ একটু অবসর খুঁজে নেয়।

Advertisement

বিনোদনের ধরন ও স্থান বদলে যাচ্ছে

আগে অবসর মানেই ছিল পরিবার নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। এখন শহরের বাস্তবতা আর প্রযুক্তির বিকাশের কারণে বিনোদনের রূপ কিছুটা বদলে গেছে।

আরও পড়ুন:

ঘুরতে পারেন বগুড়ার যেসব দর্শনীয় স্থানে ‘জিনের তৈরি’ মসজিদে একদিন প্রকৃতির ভালোবাসায় সিক্ত ভ্রমণপিপাসুরা

অনেকেই বাসায় ফিরে মোবাইল বা ল্যাপটপে মুভি কিংবা সিরিজ দেখে, কেউ আবার ইউটিউবে গান শুনে কিংবা গেম খেলে সময় কাটায়। আবার কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রল করে চলে-একধরনের ভার্চুয়াল বিনোদন।

তবে তা বলে যে বাস্তব বিনোদন একেবারে হারিয়ে গেছে, তা নয়। বিকেলে ঢাকার কিছু নির্দিষ্ট পার্ক যেমন- রমনা উদ্যান, চিড়িয়াখানা, হাতিরঝিল কিংবা রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় দেখা যায় মানুষের ভিড়। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে পরিবার, বন্ধু বা প্রিয়জন নিয়ে কেউ হাঁটতে আসে, কেউ নৌকাভ্রমণ করে, কেউ ফুচকা-চটপটি খেতে খেতে আড্ডায় মেতে ওঠে।

Advertisement

ক্যাফে ও রেস্টুরেন্ট সংস্কৃতি

গত কয়েক বছরে ঢাকায় ক্যাফে আর রেস্টুরেন্ট সংস্কৃতি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেকেই অফিস শেষে কাছের একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়ে এক কাপ কফির সঙ্গে কিছু সময় কাটাতে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এসব জায়গা হয়ে উঠেছে দেখা করার, আড্ডা দেওয়ার কিংবা শুধু একটু চুপ করে বসে থাকার স্থান।

এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শামীমা আক্তার বলেন, সারাদিন অফিসের পর বাসায় গেলেই আবার সংসারের কাজ। নিজের জন্য সময় বলতে আমি মাঝে মাঝে রেস্টুরেন্টে গিয়ে একা বসে কফি খাই। সেটা আমার জন্য বিশ্রামের মতো।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও থিয়েটার

যারা একটু ভিন্ন স্বাদের বিনোদন খোঁজেন, তারা যান থিয়েটারে নাটক দেখতে, সঙ্গীতানুষ্ঠানে বা বইমেলায়। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ, শিল্পকলা একাডেমি কিংবা আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ-এ নিয়মিত কিছু না কিছু সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকেই। যদিও এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কম, তবে যারা যান তারা বলেন—এই অভিজ্ঞতা অন্যরকম।

অভ্যন্তরীণ ভ্রমণও জনপ্রিয়

বর্তমানে অনেকেই ছুটির দিনে ঢাকার আশেপাশে ছোট্ট ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন। আশুলিয়া, পুবাইল, জিন্দা পার্ক কিংবা সাভারের কিছু রিসোর্ট এখন ছুটির দিনগুলোতে ব্যস্ত থাকে। কেউ একদিনের জন্য, কেউ আবার একরাত থেকে যান। এতে করে কর্মব্যস্ত জীবনের বাইরে এসে মানুষ কিছুটা নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পায়।

আন্তরিক চাহিদা: মানসিক প্রশান্তি

সবকিছুর পরেও একটা বিষয় স্পষ্ট ঢাকাবাসী বিনোদনের জন্য তেমন প্রস্তুত থাকে না। কিন্তু তারা মানসিক প্রশান্তির জন্য চরমভাবে তৃষ্ণার্ত। তাই যেখানে যেমন সুযোগ পায়, সেখানেই একটু আনন্দ খুঁজে নেন। কারো জন্য সেটা এক কাপ চা, কারো জন্য বন্ধুদের সঙ্গে গল্প, আবার কারো জন্য একা হাঁটতে যাওয়া।

ঢাকার জীবন এক কঠিন বাস্তবতা। এখানে বসবাস মানেই যুদ্ধ। তবে এই যুদ্ধের মাঝেই মানুষ বাঁচে তার নিজের মতো করে। ছোট ছোট আনন্দে, অল্প কিছু সময়ের অবসরে, নিজের তৈরি করা বিনোদনে। ঈদের ছুটি যেমন কিছুদিনের জন্য এই মানুষগুলোকে শান্তি দিয়েছিল, তেমনি ছুটি শেষে ফিরে আসা এই শহরে মানুষ আবারও খুঁজে নিচ্ছে নতুনভাবে বাঁচার অবসর।

জেএস/এমএস