অর্থনীতি

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবেন রপ্তানিকারকরা

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবেন রপ্তানিকারকরা

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবেন রপ্তানিকারকরা। কারণ আমাদের অনেক প্রতিযোগী দেশের শুল্কহার তাদের চেয়ে কম।

Advertisement

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন করনীতি নিয়ে জাগো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ মাশরুর রিয়াজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিশেষ প্রতিনিধি ইব্রাহীম হুসাইন অভি।

বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ কোন ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে?

ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের ওপর যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, এটার কারণে বাংলাদেশি পণ্য যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি হয়, সেগুলো প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাতে পারে। বিশেষ করে রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের যারা প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ আছে যেমন, চায়না, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় একটা অসামঞ্জস্য সৃষ্টি হতে পারে। কারণ আমাদের চেয়ে তাদের হার কম। চীনের শুল্কহার ৩৪ শতাংশ, ভারতের ২৬ শতাংশ, পাকিস্তান ২৯ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ৩২ শতাংশ।

বাংলাদেশি পণ্যকে বেশি ট্যাক্স দিয়ে যদি আমেরিকান মার্কেটে ঢুকতে হয়, সেটা আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে আরও চাপের মধ্যে ফেলবে। আর এজন্য আমাদের রপ্তানি কমে যেতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অবস্থান দুর্বল হতে পারে

Advertisement

ঠিক কী কারণে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাতে পারে?

একদিকে রপ্তানির জন্য আমাদের যারা প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ আমেরিকান বা ইউরোপিয়ান মার্কেটে তাদের তুলনায় আমাদের উৎপাদনশীলতা কম, কস্ট অব ডুইং বিজনেস হাই, আমাদের লিড টাইম বেশি এবং উৎপাদন খরচ বেশি।

আরও পড়ুনবাংলাদেশের রপ্তানিতে অশনি সংকেত!তীব্র প্রতিক্রিয়া ইউরোপে, পাল্টা ব্যবস্থার হুমকি চীনেররপ্তানি, বিনিয়োগ ও অর্থনীতি ক্ষতির মধ্যে পড়ার শঙ্কা

সার্বিকভাবে আমাদের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। তার ওপর এখন যদি করহার বেড়ে যায় অর্থাৎ, বাংলাদেশি পণ্যকে বেশি ট্যাক্স দিয়ে আমেরিকান মার্কেটে ঢুকতে হয়, সেটা আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও চাপের মধ্যে ফেলবে। এজন্য আমাদের রপ্তানি কমে যেতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অবস্থান দুর্বল হতে পারে।

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আমাদের করণীয় কী হতে পারে?

আমাদের তাৎক্ষণিক যেটা করতে হবে, সেটা হলো খুবই কৌশলে বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন যেটা করেছে, যে দেশ যত বেশি তাদের ইনওয়ার্ড ইম্পোর্টের জন্য যাদের শুল্ক ব্যবস্থা যত বেশি তার ওপর তত বেশি ডিউটি ইম্পোজ করেছে। কারণ, তারা ধরে নিয়েছে যে আমেরিকা যদি কিছু রপ্তানি করতে চায় তাহলে ওই দেশে হাই ডিউটি দিয়ে ঢুকতে হবে।

আমাদের তাৎক্ষণিক যেটা করতে হবে, সেটা হলো খুবই কৌশলে বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসন যেটা করেছে, যে দেশ যত বেশি তাদের ইনওয়ার্ড ইম্পোর্টের জন্য যাদের শুল্ক ব্যবস্থা যত বেশি তার ওপর তত বেশি ডিউটি ইম্পোজ করেছে

Advertisement

আমাদের দ্রুত আমেরিকান পণ্যের যে লিস্ট আছে যা তারা বাংলাদেশে রপ্তানি করে সেই লিস্ট থেকে কিছু পণ্য চিহ্নিত করে সেগুলোর কর কমিয়ে দিলে আমাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না। একই সঙ্গে আমাদের সামগ্রিক কর ও সম্পূরক শুল্কের কারণেও অনেক সময় করহার বেড়ে যায়। সুতরাং, সেই সেক্টরের পণ্যগুলোতে সম্পূরক শুল্ক কীভাবে কমানো যায় সেটা একটু দেখতে হবে।

টেকসই বাণিজ্যের জন্য আমাদের দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সেই জায়গায় মূল হচ্ছে আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। দক্ষতা ও প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে আমাদের অবকাঠামো, বিশেষ করে রপ্তানির ক্ষেত্রে লজিস্টিকস অবকাঠামোতে অনেক দুর্বলতা আছে, সেটা আমাদের ঠিক করতে হবে।

ব্যবসার পরিবেশ, বিনিয়োগ পরিবেশকে অনেক সহজ এবং প্রেডিক্টেবল করে তুলতে হবে, যাতে কস্ট অব ডুইং বিজনেস কমে যায়। তাহলে দীর্ঘমেয়াদে আমরা উচ্চ ট্যারিফও খুব শক্তিশালীভাবে মোকাবিলা করতে পারবো।

আইএইচও/এএসএ/জেআইএম