ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব আর প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটানো সুখের মুহূর্ত। শহরজুড়ে আলোকসজ্জা, নতুন পোশাক, সুস্বাদু খাবার আর ভালোবাসার মেলবন্ধন। কিন্তু এই উৎসবের মাঝেও কিছু মানুষ আছেন, যাদের ঈদ মানেই আরও বেশি পরিশ্রম, আরও বেশি যাত্রী, একটু বেশি উপার্জনের প্রত্যাশা। তারা হলেন শহরের রিকশাচালকরা।
Advertisement
যখন শহরের বেশিরভাগ মানুষ ঈদের ছুটিতে গ্রামের পথে রওনা হন, তখন রিকশাচালকদের অনেকেই শহর ছাড়তে পারেন না। কারণ ঈদের সময় তাদের আয়ের সুযোগ বেড়ে যায়। মানুষ ঘুরতে বের হয়, আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যায়, বাজার করে-আর তাদের চলাচলের অন্যতম ভরসা হয়ে ওঠে রিকশা।
মোহাম্মদ হাসেম নামের এক রিকশাচালক বলেন, বছরের অন্য সময়ে বকশিশ তেমন পাই না। ঈদের দিন সকালে নামাজের শুরু থেকেই রিকশার চাহিদা। মানুষ বাহিরে বের হয়, আমরাও তখন বেশি ভাড়া পাই।
আরও পড়ুন:পথ শিশুদের খুশির ঈদে ব্যথার অশ্রুঈদ সালামি থেকে ঈদী: সংস্কৃতির বিবর্তনরিকশাচালকদের অনেকেই দিনমজুর, যাদের প্রতিদিনের আয়েই সংসার চলে। তাই একদিন কাজ বন্ধ থাকলে পরিবারের জন্য খাবারের যোগান কমে যায়। তাই ঈদের দিনেও তারা রিকশা চালান, যেন বাড়তি কিছু উপার্জন করে সন্তানদের নতুন পোশাক বা ভালো খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন।
Advertisement
আব্দুল হালিম নামে এক চালক বলেন, সারাদিন রিকশা চালাবো, একটু বেশি আয় হলেই বাসায় ভালো কিছু নিয়ে যাবো। ছেলেমেয়েরা অপেক্ষা করে, ঈদের দিনে অন্তত একটু মাংস আর ভালো খাবার যেন খেতে পারে। ক্লান্তি লাগে, কিন্তু ওদের হাসির জন্য সব কষ্ট ভুলে যাই।
ঈদের সকালে মানুষ যখন নতুন পোশাক পরে নামাজে যায়, তখনই রিকশাচালকরা রাস্তায় নেমে পড়েন। কেউ কেউ নামাজ শেষে দ্রুত কাজে ফেরেন, কেউ আবার ঈদের নামাজ আদায়ের সুযোগও পান না।
শহিদুল ইসলাম নামের এক তরুণ রিকশাচালক বলেন, আমাদের তো ঈদের আলাদা দিন নেই। যখন রিকশায় মানুষ ওঠে, তখনই আমাদের ঈদ শুরু হয়। সারাদিন রিকশা চালাই, সন্ধ্যায় হয়তো একটু ভালো কিছু কিনে বাসায় ফিরবো।
ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে শহরের রাস্তায় রিকশার ব্যস্ততা আরও বেড়ে যায়। কেউ আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছে, কেউ পার্কে ঘুরতে যাচ্ছে, কেউবা নতুন জামা পরে প্রিয়জনের সঙ্গে বাইরে খেতে যাচ্ছে। অথচ এই আনন্দের মাঝেও রিকশাচালকরা ক্লান্ত শরীরে প্যাডেল ঘুরিয়ে যাচ্ছেন, হাসিমুখে যাত্রী বহন করছেন।
Advertisement
কিন্তু এই পরিশ্রমের মাঝেও তাদের কিছু ছোট ছোট খুশির মুহূর্ত থাকে। অনেক যাত্রী তাদের শুভেচ্ছা জানান, কেউ কেউ ন্যায্য ভাড়ার পাশাপাশি একটু বেশি ভাড়া দেন, কেউ আবার চলতি পথে রিকশাচালকদের সঙ্গে গল্প করেন। এসবই তাদের পরিশ্রমের মাঝে সামান্য প্রশান্তি এনে দেয়।
রিকশাচালকরা শহরের অদৃশ্য বীর, যারা নিজেদের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে অন্যদের ঈদ আরও সহজ ও সুন্দর করে তোলেন। তাই ঈদের দিনেও তাদের কষ্ট ও সংগ্রামের প্রতি স্যালুট জানান অনেক মানবিক ব্যক্তিবর্গ।
জেএস/জেআইএম