ফাত্তাহ তানভীর রানা
Advertisement
টিপু সুলতান শাহী মসজিদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরের একটি বিখ্যাত মসজিদ। মসজিদটি টিপু সুলতান মসজিদ নামে বেশি পরিচিত। এটি ভারতের স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নিদর্শন। ১৮৪২ সালে মসজিদটি কলকাতা শহরের ধর্মতলায় নির্মিত হয়।
ফতেহ আলী সাহাব টিপু ব্রিটিশ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসনকর্তা ছিলেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করে ১৭৯৯ সালে শাহাদাৎবরণ করেন। তার শৌর্যবীর্যের কারণে শের-ই-মহীশূর (মহীশূরের বাঘ) নামে পরিচিত ছিলেন। এই উপাধি ইংরেজরাই দিয়েছিল। তাঁর শাসনকালে বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। একটি নতুন মুদ্রা ব্যবস্থা এবং ক্যালেন্ডারসহ একটি নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা চালু করেন।
তিনি মহীশূরের রেশম শিল্পের বিকাশের সূচনাও করেছিলেন। মহীশূরের এই শাসক টিপু সুলতান নামে সমধিক পরিচিত। তিনি শাসকের পাশাপাশি কবি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। টিপু সুলতানের বাবার নাম হায়দার আলী। হায়দার আলী মহীশূর রাজ্যর সেনাপতি ছিলেন। মৃত্যুর দুশ বছর পরেও টিপু সুলতানকে নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়। টিপু সুলতান দেশপ্রেমিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সাহসী শাসক ছিলেন।
Advertisement
মহীশূর রাজ্যের শাসক টিপু সুলতান ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে একের পর এক যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। প্রথমে টিপু সুলতানের কাছ থেকে কোম্পানি বাণিজ্য সুবিধা চেয়েছিল। তা না পেয়ে সামরিক শক্তির মাধ্যমে রাজ্যকে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে টিপুর মৃত্যুর সাথে সাথে ইংরেজরা তার পরিবারকে ভেলোরের দুর্গে বন্দি করে রাখে। ১৮০৬ সালের বিদ্রোহে শতাধিক ইংরেজ সৈন্য নিহত হয়। পরে মাদ্রাজ এবং আশপাশের ইংরেজ সৈন্য নিয়ে তারা আবার দুর্গটি দখল করে নেয়। ইংরেজরা বিদ্রোহের জন্য টিপুর পরিবার এবং রাজপুত্রদের সন্দেহ করলেও সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ মেলেনি। পরে টিপু সুলতানের পরিবারের বড় অংশকে কলকাতা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন
রমনা পার্কে কী আছে দেখার মতো রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়িতে যা যা দেখলামটিপু সুলতান মসজিদটি কলকাতায় প্রিন্স গোলাম মোহাম্মদ নির্মাণ করেন। তিনি ১৮৩৫ সালে একটি মসজিদ টালিগঞ্জে নির্মাণ করেন। স্থানীয় সূত্রমতে, মওলানা আবুল কালাম আজাদের বাবা টালিগঞ্জে টিপু সুলতান মসজিদ পরিদর্শনে এলে অনুরোধ করেন কলকাতার সদরে একটি মসজিদ নির্মাণ করার। যা এসপ্ল্যানেড টিপু সুলতান মসজিদ হিসেবেও পরিচিত। টিপু সুলতানের ছেলে গোলাম মোহাম্মদ শিশু অবস্থায় কলকাতায় এসেছিলেন। তিনি বিচিত্র গুণের অধিকারী হয়ে জনসাধারণের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। গোলাম মোহাম্মদ ওয়াকফ এস্টেট এখন দুটি মসজিদ পরিচালনা করে। ওয়াকফকৃত সম্পত্তি দিয়েই বর্তমান কমিটি তার সিংহভাগ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এর ওয়াকিফ হিসেবে আছেন টিপু সুলতানের বংশের একজন।
মোঘল স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত টিপু সুলতান মসজিদ একটি হেরিটেজ মসজিদ। এখানে একসাথে প্রায় এক হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারবেন। প্রতি কাতারে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের সামনে পেছনে মোট তেরোটি খিলান আছে। একটি মিম্বর, চারটি বড় স্তম্ভ, বড় দশটি গম্বুজ সাথে অসংখ্য লম্বা ও ছোট গম্বুজ আছে। মসজিদ প্রাঙ্গণে শত শত কবুতর উড়ে বেড়ায়।
Advertisement
মসজিদের দেওয়ালে ঘিয়ে রং করা রয়েছে। এর মাঝে হাল্কা মেরুনের বর্ডার দেওয়া হয়েছে। দরজা গাঢ় কাঁঠালি রঙের দেখলেই মনে হয়, এখনো মোঘলের সময়ে রয়েছি। জুমার নামাজে মসজিদের খুতবা উর্দুতে দেওয়া হয়। মসজিদে অজু করার জন্য এসপ্ল্যানেড ট্যাঙ্ক নামে একটি বড় পুকুর খনন করা হলেও এখন তার কোনো অস্তিত্ব নেই। বর্তমানে সাপ্লাই পানি ব্যবহার করে কলের সাহায্য নিয়ে মুসল্লিরা ওজু করে থাকেন।
টিপু সুলতান মসজিদ কলকাতা শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। এসপ্ল্যানেড ট্রাম ডিপো, ধর্মতলা বাসট্যান্ড, নিউমার্কেট, বাবুঘাট, নাখোদা মসজিদ, চাঁদনী মার্কেট, রানী রাসমনির বাড়ি, বিবাদীবাগ, রাজ্যভবন, মহাকরণ, গালিব স্ট্রিট সবই মসজিদ থেকে হাঁটা দূরত্ব। সদরে অবস্থান হওয়ার কারণে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ টিপু সুলতান মসজিদে নামাজ আদায় করার সুবিধা পান।
লেখক: কবি ও গল্পকার।
এসইউ/এমএস