রাজশাহীতে ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন নগরীর তালাইমারী এলাকার সাকিব অঞ্জুম। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ার সব দায়িত্বই তিনি পালন করতেন। সেই ছেলেকে হারিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েছেন সবাই। এবারই হবে সাকিবকে ছাড়া তাদের প্রথম ঈদ। কেমন কাটবে এই ঈদ? সাবিক অঞ্জুমের মা বলছেন, ঈদের কথা শুনলেই ভয়ংকর দিনের কথা মনে হয়। এমনকি এবার ইফতারও তারা একসঙ্গে করছেন না।
Advertisement
রাজশাহী নগরীল তালাইমারী এলাকার বাসিন্দা রোকেয়া খাতুন। তার ছেলে সাকিব অঞ্জুম। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। দেখে মনে হবে কেউ নেই বাড়িতে। কথা বলতেও যেন আটকে যাচ্ছে তার মায়ের গলা।
তিনি বলেন, কীসের ঈদ? আমার ঈদের কথা শুনলেই ভয়ংকর দিনের কথা মনে হয়। ঈদের দিন আসছে মনে হলেই আমার কলিজা কেঁপে ওঠে। এখন আমার দুনিয়ায় মারা যাওয়া আর বেঁচে থাকা সমান হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে জামায়াতের লোকজন এসে ঈদের বাজার দিয়ে গেছে। তারা বলেছেন আপনার ছেলে থাকলে সে বাজার করে নিয়ে আসতো। আমি তাদের বললাম, অনেক গরিব মানুষ আছে, তাদের দিন, আমাদের দরকার নেই। আমার ছেলে ইফতারের ব্যবস্থা করতো, আমি কখনো সেহরি রান্না করিনি সেই করতো। এখন আমরা ইফতারেও বসতে পারি না। বাঁচার জন্য খেতে হবে তাই খাই।
Advertisement
জুলাইন আন্দোলনে রাজশাহী-ফাইল ছবি
আরও পড়ুন
ট্রাইব্যুনালের সামনে শহীদ পরিবারের বিক্ষোভ, তাজুলের পদত্যাগ দাবি ছাড়পত্র পেলেও কেন হাসপাতাল ছাড়ছেন না জুলাই যোদ্ধারা?শহীদ সাকিবের মা বলেন, প্রথম রোজায় আমরা কেউ ইফতার করতে বসিনি। আমি কিছুই খাইনি, ওর বাবা শুধু কেঁদেছে। বেলকনির পাশে একটা বেলগাছ আছে। একদিন আমার ছেলে বললো, আম্মু তুমি গাছটায় পানি দাও না? তারপর নিজেই পানি দিলো। এখন সেই গাছটা দেখলেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। মা-বাবাকে এত ভালোবাসতে কাউকে দেখিনি। আমার এই ছেলেই বড়, সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত, পরিবারের হালও সে ধরেছিল। গত ঈদে সে আমার জন্য বাজার করে নিয়ে এসেছিল। আমি স্যান্ডেল আনতে বলেছিলাম আমার পায়ের মাপ নেয়নি তাও নিয়ে এসেছিল। সবার জন্য বাজার নিয়ে এসেছিল। এসব কথা ভাবলেই কলিজাটা মোচড় দিয়ে ওঠে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আমার সন্তানকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন। আমি দোয়া করি পৃথিবীর কোনো মাকে যেন নিজের সন্তানের লাশ দেখতে না হয়।
বিচার নিতে আমাদের অনেক কাগজ দিতে হচ্ছে। এই দাও, ওই দাও। এত কাগজ দেওয়ার সময় তো আমাদের নেই। আমি তো ভেবেই রেখেছি এবার ওসি শুধু কাগজ চাইলেই হয়। আমাদের বিচার-কাচারি কিছু চাই না, বাংলাদেশের কাছ থেকে কিছু চাই না, যা দেওয়ার আল্লাহ দেবেন। ওই ডাবলু সরকার সবাইকে বলেছিল আগুন দিতে। সে গুলি না করলেও সবাইকে মারতে বলেছিল। তাকে ধরে কি করা হয়েছে?
Advertisement
সাকিব আঞ্জুমের মা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বিচার নিতে আমাদের অনেক কাগজ দিতে হচ্ছে। এই দাও, ওই দাও। এত কাগজ দেওয়ার সময় তো আমাদের নেই। আমি তো ভেবেই রেখেছি এবার ওসি শুধু কাগজ চাইলেই হয়। আমাদের বিচার-কাচারি কিছু চাই না, বাংলাদেশের কাছ থেকে কিছু চাই না, যা দেওয়ার আল্লাহ দেবেন। ওই ডাবলু সরকার সবাইকে বলেছিল আগুন দিতে। সে গুলি না করলেও সবাইকে মারতে বলেছিল। তাকে ধরে কি করা হয়েছে?
আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের উদ্বোধনতিনি আরও বলেন, যারা আন্দোলন করে আহত হয়েছে তাদের সেবা-চিকিৎসার কেউ নেই। তারা তো নিজেদের জন্য আন্দোলন করেনি। যাদের জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাদের কি কোনো কৃতজ্ঞতা আছে? শুধু আমার সন্তানের জন্য নয়, আমি সবার জন্য দোয়া করি, যেন তারা শহীদের উচ্চ মর্যাদা পায়। যারা আন্দোলনে হাত-পা হারিয়েছে, তাদের সামনে সবাই আনন্দ করছে। দেশে এত বড়লোক থাকতে কেন কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায় না?
যারা আন্দোলন করে আহত হয়েছে তাদের সেবা-চিকিৎসার কেউ নেই। তারা তো নিজেদের জন্য আন্দোলন করেনি। যাদের জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাদের কি কোনো কৃতজ্ঞতা আছে? শুধু আমার সন্তানের জন্য নয়, আমি সবার জন্য দোয়া করি, যেন তারা শহীদের উচ্চ মর্যাদা পায়। যারা আন্দোলনে হাত-পা হারিয়েছে, তাদের সামনে সবাই আনন্দ করছে। দেশে এত বড়লোক থাকতে কেন কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায় না?
তিনি বলেন, আল্লাহ, তুমি আমাকে নিয়ে নাও। আহত ছেলেমেয়েদের জন্য খুব কষ্ট লাগে, যদি আমার সামর্থ্য থাকত, তাহলে কিছু করতাম। সরকার তো কিছু করছে না। আওয়ামী লীগ কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। আহতদের জন্য এত টাকা দরকার, যেন তারা সারা জীবন বসে খেতে পারে, কারও বোঝা না হয়।
সাকিবের মা বলেন, আমার ছেলে তিনটাকে আমি তিনভাবে মানুষ করেছিলাম। তারা হয়েও ছিল। কিন্তু কিছু করার নেই আল্লাহ কেড়ে নিয়েছে। এখন আমাকেই আমার ছেলের কবর দেখতে যেতে হয়। আমরা কত অভাগা মা-বাবা! আমরা বাথরুমে তার যা কিছু ছিল, সব সাজিয়ে রেখেছি। তার স্ত্রীকে আমার মেয়ের মতো করে রেখেছি। সবকিছু দেখি আর দোয়া করি। আমার ছেলে কখনো খারাপের সাথে মিশত না, কোনো রাজনৈতিক দল করত না। পার্টিকে ঘৃণা করত, কারণ তারা দুই নম্বর কাজ করে। আমি হাসিনাকে ‘নাসিহা’ বলে ডাকি। আমার ছেলে তাকে ঘৃণা করত, তাই সে আন্দোলনে গিয়েছিল।
এসএইচ/এসএইচএস/এমএস