জাতীয়

নতুন বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ব্যবসায়িক নীতি চাই

নতুন বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ব্যবসায়িক নীতি চাই

বাংলাদেশের ৫৫তম স্বাধীনতা দিবস এবার এক ভিন্ন বাস্তবতায় উদযাপিত হচ্ছে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে আমরা পেয়েছি এক নতুন বাংলাদেশ। নতুন সময়ে মানুষের প্রত্যাশাও অনেক।

Advertisement

এবারের স্বাধীনতা দিবসে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রত্যাশা কী, কেমন ব্যবসায়িক নীতি চান, ব্যবসার পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত প্রভৃতি বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমই) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইব্রাহিম হোসেন অভি।

কথোপকথনের এক পর্যায়ে হাতেম বলেন, ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে একজন ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে আমাদের এবারের স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যাশা একটি পক্ষপাতহীন, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ব্যবসায়িক নীতি, যা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান নির্বিশেষে সব উদ্যোক্তার জন্য সম-অধিকার নিশ্চিত করবে।

অসম নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং আমলা কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন। আর্থিক খাতে অনিয়মগুলো বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃজনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে, যা দারিদ্র্য ও বেকারত্বের হার বাড়িয়েছে

Advertisement

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও কি আমরা বৈষম্য দূর করতে পেরেছি?

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চালিকাশক্তি ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য। বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে হাজারো শহীদের জীবনের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। কিন্তু ৫৪ বছর পরও আমরা বৈষম্য থেকে মুক্তি পাইনি। এমনকি মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত ছিল। তারা নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অধিকার থেকেও ছিল বঞ্চিত।

আরও পড়ুন২৬ মার্চ তোপধ্বনিতে স্বাধীনতা দিবসের সূচনা, থাকছে যেসব কর্মসূচিস্বাধীনতা দিবসে তরুণদের ভাবনাস্বাধীনতা দিবসে কুচকাওয়াজ না হওয়ার খবর সত্য নয়: প্রেস উইং আমরা যে নতুন বাংলাদেশ বলছি, সেখানে স্বাধীনতা দিবসে চাওয়া কী হতে পারে?

জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের পর আমরা পেয়েছি নতুন বাংলাদেশ। তাই এবারের স্বাধীনতা দিবসের দাবি, একটি বৈষম্যহীন সমাজ, যেখানে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে। সব প্রতিকূলতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার জনগণের থাকবে। একজন নাগরিক ধর্ম, বর্ণ ও লিঙ্গ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সমানভাবে সব পরিষেবা পাবে।

আপনারা কেমন ব্যবসা নীতি চান?

দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সমান ব্যবসা নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অসম ব্যবসায়িক নীতি শিল্পের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে। গত ১৫ বছরে দেশের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক ছিল যে, কিছু লোক নিজেদের লাভের জন্য এবং বিশেষ সুবিধা পাওয়ার জন্য অসম নীতি গ্রহণ করেছিল। ফলে বিভিন্ন খাতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হলো দেশের ব্যাংকখাত, যা সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

সম-অধিকার ব্যবসার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সফল ও টেকসই ব্যবসা পরিচালনায় দরকার। ব্যবসায় সমতা মানে দক্ষতা ও প্রতিভা অনুসারে সব সুযোগ দেওয়া। এখানে কোনো পক্ষপাতের স্থান থাকা উচিত নয়

Advertisement

অসম নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং আমলা কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন। আর্থিক খাতে অনিয়মগুলো বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃজনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে, যা দারিদ্র্য ও বেকারত্বের হার বাড়িয়েছে।

ব্যবসায়িক নীতি হতে হবে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও দেশের উন্নয়নের স্বার্থে। এটা কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে বা কোনো দেশের প্রতি নমনীয় হওয়া উচিত নয়।

ব্যবসায়ী হিসেবে এবারের স্বাধীনতা দিবসে আপনার প্রত্যাশা কী?

এবারের স্বাধীনতা দিবসে আমাদের আহ্বান একটি সম-অধিকার ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজের। ব্যবসায়িক সুবিধা এবং নীতি পক্ষপাতহীন হওয়া উচিত। ব্যবসায়িক নীতির একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে দেশের অর্থনীতি ও শিল্পের উন্নয়ন করা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ ও ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলার আছে কি না?

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফল ও তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলন তখনই সুপ্রতিষ্ঠিত হবে, যখন সমাজ হবে ন্যায়ভিত্তিক এবং সবাই সমানভাবে রাষ্ট্রীয় সুবিধা ও আইনি অধিকার ভোগ করবে।

সম-অধিকার ব্যবসার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সফল ও টেকসই ব্যবসা পরিচালনায় দরকার। ব্যবসায় সমতা মানে দক্ষতা ও প্রতিভা অনুসারে সব সুযোগ দেওয়া। এখানে কোনো পক্ষপাতের স্থান থাকা উচিত নয়।

আইওএইচ/এএসএ/জেআইএম