আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ঈদের আনন্দে মেতে উঠবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। ঈদ উদযাপনে অনেকেই এরই মধ্যে নতুন পোশাক কেনাকাটা সম্পন্ন করেছেন। যারা এখনো কেনাকাটা শেষ করতে পারেননি তারা এখন ছুটছেন মার্কেটে মার্কেটে। শেষ মুহূর্তে ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট। নতুন পোশাক, জুতা, ইমিটেশন জুয়েলারির দোকানগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়েছে।
Advertisement
বুধবার (২৬ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই ছুটি আসছেন ক্রেতারা। দুপুরের দিকে বেশিরভাগ মার্কেট ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে হিমশিম খেতেও দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে বিক্রি বেড়ে যায়। আসন্ন ঈদের আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। তাই শেষ মুহূর্তে ক্রেতারা মার্কেটে এসে পছন্দের সামগ্রী কিনে নিচ্ছেন। এখন ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকায় দরদামও বেশি করা হচ্ছে না।
তারা আরও জানিয়েছেন, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। ছুটি থাকায় সকাল থেকেই মানুষ পরিবার নিয়ে মার্কেটে আসছেন। তবে ক্রেতাদের মূল ভিড় হবে বিকেলে এবং ইফতারের পর।
Advertisement
এদিকে ব্যবসায়ীরা এবার পোশাকের দাম কিছুটা বেশি চাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। অবশ্য ব্যবসায়ীরাও স্বীকার করছেন এবার পোশাকের দাম একটু বেশি। দাম বেশি হলেও এবার ঈদ কেন্দ্রিক বিক্রি ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন
ঈদ বাজারে পোশাকেই ব্যয় ৮০ শতাংশ মধ্য ও নিম্নবিত্তদের ভরসা ফুটপাতের দোকান দেশি পোশাকে ক্রেতার ঝোঁক বেশিতারা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে কয়েকটি ঈদে বিক্রি ভালো ছিল না। তবে গত বছর মোটামুটি ভালো বিক্রি হয়। এবারও বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে পোশাকের দাম বেশি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার বিক্রি হয় তো একটু কম হবে। তবে কম হলেও খুব বেশি কম হবে না।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, মেয়েদের পোশাকের পাশাপাশি জুতার দোকান ও ইমিটেশনের জুয়েলারি দোকানে উপচেপড়া ভিড়। বেশিরভাগ দোকানের বিক্রেতারা ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
Advertisement
রামপুরা থেকে পরিবার নিয়ে মার্কেটটিতে আসেন মো. হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। ঈদের কেনাকাটা এখনো হয়নি। গতকাল বোনাস পেয়েছি। আজ ছুটির দিন। তাই ছেলে, মেয়ে ও পরিবার নিয়ে মার্কেটে কেনাকাটা করতে এসেছি। সবার পছন্দ অনুযায়ী কেনাকাটা সম্পন্ন করবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, মেয়ের জন্য দুটি থ্রি-পিস, এক জোড়া জুতা এবং কিছু ইমিটেশনের জুয়েলারি কেনার ইচ্ছা আছে। ছেলের জন্য একটি প্যান্ট, একটি শার্ট, একটি পাঞ্জাবি ও এক জোড়া জুতা কিনবো। ওদের আম্মুর জন্য একটা শাড়ি ও জুতা কিনবে। আর আমার জন্য পাঞ্জাবি ও জুতা কেনার ইচ্ছা আছে।
মার্কেটটিতে কথা হয় ফারিয়া নামের ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, থ্রি-পিস আগেই কিনেছি। আজ হাতের ও কানের কিছু অর্নামেন্ট কিনবো। পাশাপাশি এক জোড়া জুতা কেনার ইচ্ছা আছে। পছন্দ হলে কিনবো, পছন্দ না হলে কিনবো না।
এবার থ্রি-পিসের দাম কেমন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে এবার দাম একটু বেশি। দুই মাস আগে যে থ্রি-পিস ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা দিয়ে কিনেছি, এখন তার দাম হাজার টাকা চাচ্ছে। ঈদের বাজার বলেই হয় তো এখন দাম বেশি চাচ্ছে।
বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মার্কেটটির ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান বলেন, ঈদ কেন্দ্রিক মূল বিক্রি শুরু হয়েছে ২-৩ দিন আগে। এবার আল্লাহর রহমতে ভালো বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ভালো ক্রেতা পাচ্ছি। ক্রেতারা মূলত আসেন বিকেলের দিকে। বিকেলে ও ইফতারের পরে ক্রেতাদের ভিড় সব থেকে বেশি থাকে। তবে আজ ছুটির দিন হওয়া সকাল থেকেই ক্রেতারা আসছেন। বিকেলে ক্রেতাদের অনেক ভিড় হবে বলে আমরা আশা করছি।
এবার কি পোশাকের দাম বেশি? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম একটু বেশি, এটা সত্য। কারণ এবার পোশাকের খরচ বেশি।
তালতলা থেকে মৌচাক মার্কেটে গিয়েও ক্রেতার বেশ ভিড় দেখা যায়। মার্কেটটিতে আসা মৌমিতা নামের এক ক্রেতা বলেন, এবার ঈদের কেনাকাটা করতে আজই প্রথম মার্কেটে আসছি। ঘুরে ঘুরে আজ সব কেনাকাটা শেষ করার ইচ্ছা আছে। এরপর হয় তো আর সময় পাবো না। কারণ ঈদের তো আর বেশি বাকি নেই।
মার্কেটটির একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. ফিরোজ বলেন, রোজার প্রথম কয়েকদিন বিক্রি ভালো ছিল না। ১৫ রোজা পর্যন্ত বিক্রি শুধু শুক্রবার-শনিবার কেন্দ্রিক ছিল। তবে কয়েকদিন ধরে ভালো বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি এখন থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সব সময় ভালো বিক্রি হবে।
তিনি বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় কিছুটা কম থাকে। কিন্তু বিকেলে ও সন্ধ্যায় ক্রেতাদের এত ভিড় হচ্ছে যে আমাদের কথা বলার সুযোগ থাকে না। আমরা সাধারণত দরদাম করে বিক্রি করি। তবে কয়েকদিন ধরে খুব বেশি দরদাম করছি না। কাছাকাছি একটা দাম চাচ্ছি, ক্রেতারা তার থেকে কিছু কম দাম বলে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
মৌচাক থেকে রাজধানী সুপার মার্কেটে গিয়েও ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা যায়। মার্কেটটির ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, এখন ঈদের শেষ মুহূর্তের বিক্রি চলছে। ঢাকার বাইরে যারা যাবেন, তাদের বেশিরভাগই আজ কেনাকাটা সম্পন্ন করবেন। কারণ আগামীকাল অফিস করেই বেশিরভাগ ঢাকা ছাড়বেন। আর যারা ঢাকায় থাকবেন তারা আগামী শুক্রবার, শনিবার মূল কেনাকাটা করতে বের হবেন বলে আমাদের ধারণা।
বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিক্রি ভালো হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় বিক্রি বেশি না হলেও কম হবে না বলে আমরা ধারণা করছি। কয়েকদিন ধরে বিক্রি বেড়েছে। আগামী কয়েকদিন বিক্রি আরও বাড়বে বলে আমরা আশা করছি।
এই মার্কেটের ইমিটেশনের জুয়েলারির ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, ঈদের সময় প্রতি বছরই আমাদের বিক্রি বেড়ে যায়। বিশেষ করে চুড়ি ও কানের দুল বেশি বিক্রি হয়। এবার রোজার প্রথম কয়েকদিন বিক্রি ভালো ছিল না। তবে কয়েকদিন ধরে ভালো বিক্রি হচ্ছে। আগামী কয়েকদিন ক্রেতাদের এমন আনাগোনা থাকলেই আমরা খুশি।
জুতার ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, ঈদের কেনাকাটা করতে এসে বেশিরভাগই নতুন পোশাকের পাশাপাশি নতুন জুতা কেনেন। তবে আমাদের কাছ থেকে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি জুতা কেনেন। এ কারণে মেয়েদের জুতার কালেকশন বেশি।
বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিক্রি মোটামুটি। রোজার প্রথমদিকে তো বিক্রি তেমন ছিল না। কয়েকদিন ধরে বেড়েছে। এতদিন বিকেলে ও সন্ধ্যায় বিক্রি হয়েছে। আজ ছুটির দিন তাই সকাল থেকেই ক্রেতারা আসছেন। আগামী কয়েকদিন ভালো ক্রেতা পাবো বলে আশা করছি।
এমএএস/ইএ/এমএস