কৃষি ও প্রকৃতি

মিরসরাইয়ের চরাঞ্চলে বাণিজ্যিক তরমুজ চাষে বিপ্লব

মিরসরাইয়ের চরাঞ্চলে বাণিজ্যিক তরমুজ চাষে বিপ্লব

• শত কোটি টাকা বাজারজাতের আশা • উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার মেট্রিক টন• ২০২২ সালে প্রথম ১৪৫ একর জমিতে চাষ শুরু • এবার ১২০০ একর জমিতে আবাদ হয়েছে

Advertisement

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের চরাঞ্চলে বাণিজ্যিক তরমুজ চাষে বিপ্লব ঘটেছে। এবার প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শত কোটি টাকার তরমুজ বাজারজাত হওয়ার আশা কৃষকদের। ৩ বছরের ব্যবধানে চাষের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলার ইছাখালী, মঘাদিয়া, মায়ানী ও সাহেরখালী ইউনিয়নে প্রায় ১২০০ একর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। ২০২৪ সালে আবাদ হয়েছিল ৪৭৫ একর জমিতে। ২০২৩ সালে চাষ হয় ১৭৫ একর জমিতে। ২০২২ সালে আবাদ হয় ১৪৫ একর জমিতে। এবার কিছু জমি থেকে ফলন বাজারজাত করা হচ্ছে। তবে পুরোদমে বাজারজাত করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালে প্রথম উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে ১৪৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ শুরু হয়। নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার সিরাজুল ইসলাম ইছাখালীতে প্রথম তরমুজ চাষ করেন। ফলন ভালো হওয়ায় পরের বছর আরও কয়েকজন চাষ করেন। এরপর ৪ ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়ে। এখানে চাষ করা সবাই নোয়াখালীর। এবার প্রায় ১০০ কৃষক চাষ করেছেন। এসব তরমুজ ক্ষেতে কাজ করার জন্য প্রায় ২ হাজার শ্রমিক আছেন।

Advertisement

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিরসরাইয়ের মাটি ও আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী। তাই নোয়াখালীর চাষিরা খোঁজ নিয়ে এখানে তরমুজ চাষ করছেন। কথা হয় তরমুজ চাষি আবু জাফরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার আমি প্রায় ৬০ একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো বিক্রি করতে পারবো।’

৮ একর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন বেলাল হোসেন। তার শ্রমিক সুমন বলেন, ‘আমরা এবার একটু দেরিতে চারা লাগিয়েছি। ফলন এখনো ছোট। পর্যাপ্ত পানি দিতে পারছি না। জমিতে পানি দেওয়া খুব প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন ফরিদপুরে লালমির বাম্পার ফলনে খুশি চাষিরা মিরসরাইয়ের পাহাড়ে চাষ হচ্ছে থাই সফেদা

আরেক চাষি ইসমাইল হোসেন সুমন বলেন, ‘আমরা ৫ জন মিলে ৩৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এতে প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। দু’একদিন পর বিক্রি শুরু করবো। সবকিছু ঠিক থাকলে ১ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি সম্ভব। এ ছাড়া আবদুল কাদের মাঝি, মানিক, সুজা মাঝিসহ অনেকে তরমুজ চাষ করেছেন।’

তরমুজ চাষি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এখানে চাষাবাদ ও বাজারজাত করার সুবিধা আছে। এ ছাড়া দোঁআশ মাটি থাকায় তরমুজ চাষ করেছি। আকারে অনেক বড় এবং সুস্বাদু হওয়ায় বাজারেও আছে এসব তরমুজের চাহিদা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা সরাসরি ক্ষেত থেকে তরমুজ কিনতে আসা শুরু করেছেন।’

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর রবি মৌসুমে উপজেলার ইছাখালী, মঘাদিয়া, মায়ানী ও সাহেরখালী ইউনিয়নে চরের অধিকাংশ জায়গা খালি পড়ে থাকতো। দোঁআশ মাটি ও উপযুক্ত পরিবেশ হওয়ায় ২০২২ সালে সিরাজ নামে একজন তরমুজ চাষের উদ্যোগ নেন। প্রথমে তারা মাটি ল্যাবে পরীক্ষা করেন। স্থানীয়দের থেকে ৩ মাসের জন্য প্রতি একর জমি ১৫ হাজার টাকায় বর্গা নেন। সেই জমিতে তারা তরমুজের বীজ বপন করেন।

মঘাদিয়া ইউনিয়নের কাজীরতালুক গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে তিন ফসলি জমিতে ধান চাষ হয়। এরপর স্থানীয় জমির মালিক থেকে সুবর্ণচরের তরমুজ চাষিরা প্রতি একর ১৫ হাজার টাকা করে ৩ মাসের জন্য বর্গা নেন। আমরা তাদের সব সময় বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘ক্রমান্বয়ে চাষের পরিধি বাড়ছে। এবার ১২০০ একর জমিতে আবাদ হয়েছে। তরমুজ চাষে পরিশ্রম বেশি হলেও ৩ গুণ বেশি লাভ হয়। সুবর্ণচর উপজেলার চাষিরা এখানে তরমুজ চাষ করছেন। আবহাওয়া এবং বাজারে দাম ভালো থাকলে ৩৫-৪০ হাজার মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় শত কোটি টাকা।’

এসইউ/এএসএম