জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পক্ষপাত থেকে মুক্ত করতে হবে

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পক্ষপাত থেকে মুক্ত করতে হবে

গণমানুষের অধিকার ও ন্যায্যতার হিস্যা বুঝে নেওয়ার লড়াই ছিল মুক্তিযুদ্ধ। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পক্ষপাত থেকে মুক্ত করতে হবে। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।

Advertisement

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং গণহত্যা দিবস স্মরণে বাংলা একাডেমি মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সেমিনারের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

সেমিনারে ‘গণহত্যা, অস্বীকারের প্রবণতা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসর’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও গবেষক সহুল আহমেদ। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা এবং গবেষক ও লেখক সারোয়ার তুষার। বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া এই সেমিনারে স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। তিনি বলেন, ব্যক্তির স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, নিজের অস্তিত্বকে অন্যের বশ্যতা থেকে মুক্ত করার স্বাধীনতার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার বোধও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। ১৯৭১ পূর্বকালে এ অঞ্চলের মানুষ সুদীর্ঘকাল রাজনৈতিক আলোচনা, মীমাংসা ইত্যাদি চালিয়েছে। তবে ৭১-এর ২৫ মার্চে সবকিছু ছাপিয়ে সর্বাত্মক স্বাধীনতা অর্জনের প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে। এ সময় লেখক ও গবেষক সহুল আহমেদ বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যে জেনোসাইড সংঘটিত হয়েছে, তার নানা দিক নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস- এটা অর্থবহ। ২৫ মার্চ রাতে পরিকল্পিতভাবে জেনোসাইডাল ক্যাম্পেইন শুরু করা হয়েছে এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা এসেছে। ধীরে ধীরে সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে উঠেছে, যার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটেছে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে। গণহত্যাকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে এক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদাহরণ পৃথিবীতে কমই আছে।

তিনি আরও বলেন, গণহত্যা বা এই ধরেনর অস্বীকার ঠেকানোর জন্য সবার আগে দরকার বিচার বা ইনসাফ। অন্যদিকে আমরা দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যার বিচারের দাবি দানা বাঁধতে বাঁধতে অনেক পথঘাট পেরিয়ে ইনসাফকে প্রতিশোধপরায়ণ রাজনীতিতে পর্যবসিত করেছিল। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান এবং এর অস্বীকারের প্রবণতা একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। আমাদের অতীত শিক্ষা দিয়েছে যে, অস্বীকারের প্রবণতা এবং তৎপরতার ঝুঁকি এড়ানোর প্রধান উপায় হচ্ছে ইনসাফ কায়েম করা। আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল গণমানুষের অধিকার ও ন্যায্যতার হিস্যা বুঝে নেওয়ার লড়াই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পক্ষপাত থেকে মুক্ত করতে হবে। একাত্তর যে ন্যায়পরায়ণ সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিল, আমাদের আজ সেই কথা বলতে হবে।

Advertisement

তারা বলেন, ১৯৭১ থেকে ২০২৪- গণহত্যার পক্ষগুলো সবসময় আমাদের জাতিগত অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করে দিয়েছে, মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পরিপূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবায়নে বাংলাদেশের আপামর মানুষকে একতাবদ্ধ হয়ে লাখো শহীদের স্বপ্নকে সফল করতে হবে।

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্নে সুদীর্ঘকাল লড়াই সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে, স্বপ্নভঙ্গের শিকারও হয়েছে। যে বিপুল জনগোষ্ঠী একাত্তরে গণহত্যার স্বীকার হয়েছে তাদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বদেশে আমরা স্বাধীনতাকে অর্থবহ এবং মানুষের জন্য কল্যাণকর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি কি না সেটাই আজকের দিনের বড় প্রশ্ন। বিকেল সাড়ে ৫টায় মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বুধবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে সকাল ৮টায় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

এএমএ/এএসএম

Advertisement