আপনার ছুটির দিনগুলোকে নিজের অধিকার ভাবেন আপনার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব। ভাবনাটি ভুল কিছু না। আবার আপনার নিজের অধিকার অব্যশ্যই আছে এই অবসরের ওপর। তবে ভেবে দেখেছেন কি আপনার সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কটিকে আরো মজবুত ও সুন্দর করতে এই সময়টি কতটা কাজে লাগতে পারে?
Advertisement
প্রতিদিনের জীবনের হাজারটা কাজের ব্যস্ততা, বাবা-মা ও সন্তানের প্রতি দায়িত্ব, আত্মীয়তা-সামাজিকতা, বন্ধু-বান্ধবসহ কতগুলো সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখে একটি দম্পতি। এসবের মধ্যে আসলে নিজেদের, শুধুই নিজেদের জন্য আসলে কতটা সময় রাখেন তারা। সত্য বলতে নিজেদের জন্য সময় রাখার এই ধারনাটি আমাদের সমাজে নতুনই বলা যায়। কিন্তু এর প্রয়োজনীয়তা বলে শেষ করার মতো না।
তবে দম্পতিদের মধ্যে প্রায় একজন বা দু’জনই মনে করেন পাশাপাশা বসে থাকলেই একসঙ্গে থাকা হয়ে গেল। কখনও কখনও হয়তো হয়। কিন্তু সঙ্গীকে ভালো বা কোয়ালিটি সময় দিতে চাইলে এর প্রয়োজনগুলো জানতে হবে। সেই সঙ্গে জানতে হবে কোন ভুল কাজগুলো ভেস্তে দিতে পারে আপনার ও আপনার সঙ্গীর কোয়ালিটি সময়।
সঙ্গীর সঙ্গে কোয়ালিটি সময় কাটানোর গুরুত্ব ১. সম্পর্কে আন্তরিকতা বাড়েশুধু শারীরিক উপস্থিতি নয়, মানসিকভাবে একাত্ম হওয়াই প্রকৃত সম্পর্ক। গল্প করা, একসঙ্গে কোনো কাজ করা বা শুধুই চুপচাপ সময় কাটানো সম্পর্কে গভীরতা আনে।
Advertisement
দৈনন্দিন জীবনের চাপ ভাগ করে নেওয়ার জন্য সঙ্গীর সঙ্গে মানসম্পন্ন সময় কাটানো জরুরি। এটি উদ্বেগ কমিয়ে মনকে শান্ত রাখে।
৩. ভালোবাসা ও বিশ্বাস বাড়ায়নিয়মিত কোয়ালিটি সময় দিলে পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের ভিত্তি।
৪. পরামর্শদাতাজীবনের যুদ্ধক্ষেত্রে জীবনসঙ্গী আপনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা। আপনার ব্যক্তিগত চিন্তা, পেশাগত সিদ্ধান্ত ইত্যাদি বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করলে আপনারা সম্মিলিতভাবে একটি লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন।
৫. শেষ জীবনের একমাত্র অবলম্বনকম বয়সে বন্ধুবান্ধব, সন্তান, বাবা-মা সবাই থাকে। কিন্তু জীবনের এক ধাপে গিয়ে বাবা-মা আর পৃথিবীতে থাকেন না, সন্তানরা নিজেদের জীবনে জড়িয়ে পরেন, বন্ধুরাও অনেকেই ব্যস্ত হয়ে যায়। দিনশেষে আপনার পাশে থাকে আপনার জীবনসঙ্গী। সময় থাকতে এই সঙ্গীকে বোঝার চেষ্টা না করলে শেষ বয়সে বন্ধুহীন হয়ে পড়তে হয়।
Advertisement
কোয়ালিটি টাইম, কথাটি এখন অধিকাংশ মানুষেরই পরিচিত। কিন্তু ক’জন অনুধাবন করেন এর গভীরতা? সঙ্গীকে সময় দেওয়া মানে শুধু শারীরিক উপস্থিতি নয়। সময় দেওয়া মানে সঙ্গীর প্রতি মনোযোগী হওয়া, তার সঙ্গে মনের কথা ভাগাভাগি করে নেওয়া। তবে অনেক দম্পতি কোয়ালিটি সময় কাটাতে গিয়েও মারাত্মক কিছু ভুল করে ফেলেন, যা উপকারের জায়গায় সম্পর্কের ক্ষতি করে বসে। জেনে নিন কোন কাজগুলো করবেন না-
১. মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তিফোনে ব্যস্ত থাকার সময় সঙ্গীকে উপেক্ষা করা বর্তমানে সম্পর্কে ফাটল ধরার অন্যতম একটি কারণ। এটি সম্পর্কে দূরত্ব বাড়ায়। একদিকে উপেক্ষিত সঙ্গী নিজেকে অপ্রয়োজনীয় মনে করতে শুরু করেন, অন্যদিকে ফোনে ডুবে থাকা ব্যক্তিটি জানেনই না যে তার সঙ্গীর মনে কতটা অভিমান জমা হচ্ছে।
২. কাজ বা স্ট্রেস নিয়ে আলোচনাএকটি যুগলের মধ্যে সংসার, অফিস, জীবনের সমস্যা নিয়ে কথা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অবসর বা কোয়ালিটি সময়টিকে আলাদা করার জন্য এ জাতীয় চাপ সৃষ্টিকারী বিষয়গুলো আলাদা সময়ে আলোচনা করা খুব জরুরি।
৩. একসঙ্গে থেকেও আলাদা থাকাপাশে থাকা আর সঙ্গে থাকা কিন্তু এক কথা না। একই ঘরে থেকে নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকা প্রকৃত সময় কাটানো নয়। সেটি পাশে থাকা। কিন্তু সঙ্গে থাকতে চাইলে মনোযোগী হওয়া জরুরি। একসঙ্গে কোন বিনোদনমূলক কাজ করা, একসঙ্গে নতুন কিছু শেখা বা পড়া, স্মৃতিচারণ করা, কোন রুটিন কাজ ছাড়াই শুধু গল্প করা বা একসঙ্গে চা পান করা, এসবের মধ্য দিয়ে নিজ ঘরেই চমৎকার সময় কাটাতে পারেন আপনার জীবনসঙ্গীর সঙ্গে।
সময়ের অভাব নয়, ইচ্ছার অভাবেই সম্পর্কে অবহেলা হয়। ছুটির দিন হোক বা কর্মব্যস্ত সময়, সঙ্গীর সঙ্গে প্রকৃত মুহূর্তগুলোকে উপভোগ করুন। ছুটির দিনে কিছু সময় রাখুন শুধু দু’জনের। কারণ, একটি সুস্থ ও সুখী দাম্পত্য জীবনই পারে আপনার সকল ক্লান্তি ও সংগ্রামকে অর্থপূর্ণ করে তুলতে।
এএমপি/এমএস