• নজরদারির অভাবে পুরোনো পেশায় সুবিধাভোগীরা• মাকে ভিক্ষুক বানিয়ে বরাদ্দ নিলেন ল্যাব অ্যাসিসট্যান্ট
Advertisement
উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ভিক্ষুক পুনর্বাসনের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সরকারি প্রতিবেদনে প্রকল্প ‘সফল’ ও কাগজ-কলমে হাজার হাজার ভিক্ষুক পুনর্বাসিত। কিন্তু সরেজমিনে ঘুরে এর বাস্তবতা মেলেনি। বিভিন্ন রাস্তায় রাস্তায় সেই পুরোনো চিত্র, ভিক্ষার ঝুলি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন আগের ভিক্ষুকরাই। তাহলে বরাদ্দের টাকা কোথায় গেলো? পুনর্বাসিতরা কেন ফিরলেন আগের পেশায়? মাঠপর্যায়ে নজরদারির কী অবস্থা? এসব প্রশ্নের জবাব মেলেনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। তবে অনুদানের টাকার যথেচ্ছ ব্যবহার আর অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যর্থ প্রকল্পের প্রমাণ মিলেছে প্রতিটি এলাকায়।
বগুড়ার সাতমাথা মোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন ৬০ বছরের বৃদ্ধা রহিমা বেগম। রাস্তার যানজটে গাড়ি থামতেই এগিয়ে এলেন। কাঁপা কাঁপা হাতে বাড়িয়ে দিলেন পলিথিনের থলি। বাড়ি নিশ্চিন্তপুর এলাকায়। দোকান তো দূরের কথা কখনো কোনো সহযোগিতা পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, বাড়ির পাশের বেবি বেগম নামের একজন সমাজসেবা থেকে দোকান পেয়েছে। বেবি ভিক্ষুক নন। দিনমজুরের কাজ করেন। এখন সেই দোকানটি সারাদিন বন্ধ থাকে। শোনা যাচ্ছে সেটি বিক্রি করা হবে।
জেলা সমাজসেবা অফিস থেকে সরবরাহ করা ভিক্ষুক পুনর্বাসন তালিকার (১৩ জনের মধ্যে) তিন নম্বরে রয়েছেন বেবি বেগম। পৌরসভার নিশ্চিন্তপুর এলাকার ঠিকানায় গিয়ে তার দোকান চোখে পড়েনি।
Advertisement
এলাকাবাসী জানান, বেবি ভিক্ষুক নন। তার ছেলে রনি সমাজসেবা কার্যালয়ের ল্যাব অ্যাসিসট্যান্ট পদে চাকরি করেন। সেই সূত্রে মাকে ভিক্ষুক বানিয়ে দোকান বরাদ্দ নিয়েছিলেন। এখন কাগজ-কলমে নাম থাকলেও দোকানের হদিস নেই। তবে এ ব্যাপারে জানতে রনির মোবাইলে বারবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
আরও পড়ুন
পেট চালাতে পুরোনো পেশায় ‘ভিক্ষুকমুক্ত’ কিশোরগঞ্জের ভিক্ষুকরা ‘ভিক্ষুকমুক্ত রাজধানী’ থমকে আছে ঘোষণায়এ তালিকার এক নম্বরে থাকা ফুলবাড়ি উত্তরপাড়ার নুর হোসেনও ভিক্ষুক নন। তার দোকানটির মালিক আফসার আলী নামের অন্যজন। বরাদ্দ পাওয়ার পর আফসার দোকান অন্যত্র বিক্রি করছিল। নুর হোসেন তখন সেটি নিয়ে নেন। তিনি আগে থেকেই মুদি দোকান করতেন। এখন সমাজসেবার ফ্রি দোকানটি তার কাজে লাগছে।
একজন মানুষ পেলেই শুরু হয় ভিক্ষুকদের টানাটানি-ছবি জাগো নিউজ
Advertisement
শাজাহানপুর উপজেলার রানিরহাটের ইমান আলী। পেশাদার ভিক্ষুক হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তি সরকারি পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় মালামালসহ দোকান পেয়েছিলেন। কাগজপত্রের তথ্যমতে তাকে ফ্রি দোকান, মালামাল এবং ব্যবসার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তিনি দোকান একমাসও চালাননি। মালামাল বিক্রি করে ফিরেছেন আগের পেশায়।
বরাদ্দের বড় অংশ খরচ হয়েছে জরিপ, প্রশিক্ষণ ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে। জরিপে গেছে ১০ শতাংশ, প্রশিক্ষণে ২৫ শতাংশ আর অবকাঠামো নির্মাণে ৩০ শতাংশ। তবে এই প্রতিষ্ঠানের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে প্রশিক্ষণের নামে এই প্রকল্পে শুধু কাগজ-কলমে কর্মসূচি চলে। বাস্তবে কাজ না জানার কারণে পুনর্বাসিত ভিক্ষুকরা ফিরে যান পুরোনো পেশায়।
ইমান আলী বলেন, বরাদ্দ পাওয়া মালামাল ড্যাম ছিল। ৫ হাজার টাকার মাল দিয়ে ২৫ হাজার বলা হয়েছে। আমি সেগুলো বিক্রি করতে পারিনি। নিয়মিত দোকান চালাতে গেলে যে মূলধন দরকার, তা আমার নেই। লোকজন কেনাকাটা করতে আসতো না। তাই বিক্রি করে আবার রাস্তায় ফিরেছি।
ভিক্ষাবৃত্তির মতো অমর্যাদাকর পেশা থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে সরকারের রাজস্ব খাত থেকে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’ নাম দিয়ে কর্মসূচি চালাচ্ছে। ২০১০ সালের আগস্টে কর্মসূচি’র কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে পুনর্বাসন কার্যক্রম ব্যাপকতা পায়নি। এরপর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে একযোগে উত্তরাঞ্চলের ১৬টিসহ দেশের ৫৮ জেলায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের নিমিত্তে অর্থ প্রেরণ করা হয়।
যেভাবে বরাদ্দ এবং খরচ: দেখা গেছে, বিগত ১৪ বছরে সরকারের এই প্রকল্পে ৮৭ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে ৫৪ কোটি ১০ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয়ে পুনর্বাসনের সুবিধা পেয়েছে ১৭ হাজার ৭১০ জন। বরাদ্দের প্রায় ২৮ কোটি টাকাই ছিল উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায়। কিন্তু এখানকার বেশ কয়েকটি জেলা ঘুরে ভিক্ষাবৃত্তি কমে যাওয়ার বা এই পেশায় আগতরা ভিন্ন কর্মসংস্থানে স্থায়ী হওয়ার চিত্র দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন
অভিযান চালিয়ে ১৬৭ ভিক্ষুককে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠালো ডিএনসিসি ভিক্ষুক পুনর্বাসনে ‘আস্থা’তথ্যমতে ২০১০-১১ অর্থবছরের শুরুতে ৩ কোটি ১৬ লাখ টাকার মধ্যে ১৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয় জরিপ পরিচালনা ও আনুষঙ্গিক খাতের জন্য। এরপর ২০১১-১২ অর্থবছরে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়ে মেলে ৬ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এরমধ্যে ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় ময়মনসিংহে ৩৭ জন ও জামালপুরে ২৯ জনকে পুনর্বাসন করা হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বরাদ্দ মেলে ১০ কোটি টাকা। এই টাকার একটি অংশ আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয় দেখানো হয়। ২০১৩-১৪অর্থবছরে বরাদ্দের ১ কোটি কোনো জেলায় দেওয়া হয়নি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বরাদ্দের ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ব্যয় করা হয় ৭ লাখ ৯ হাজার টাকা। এই ব্যয়টি ছিল রাস্তায় বসবাসকারী শীতার্ত মানুষকে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া ও আনুষঙ্গিক খাতের জন্য। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫০ লাখের মধ্যে ব্যয় হয় ৪৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। উপকারভোগী হিসেবে দেখানো হয় ২৫১ জনকে। বিভিন্ন জেলা প্রশাসক ও সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালকের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে পুনর্বাসন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত ৫০ লাখ টাকার বিপরীতে ব্যয় হয় ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। উপকারভোগী হিসেবে ছিলেন ৪১০ জন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ মোট ৯টি জেলায় দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বরাদ্দের ৩ কোটি টাকার সবটাই ব্যয় দেখানো হয়। বিভিন্ন জেলায় উপকারভোগী ছিলেন ২৭১০ জন। বরাদ্দ টাকার মধ্যে ৩৬টি জেলায় ৪-৫ লাখ টাকা করে, ১৬টি জেলায় ৫-৬ লাখ টাকা করে এবং ৬টি জেলায় ৭-১০ লাখ টাকা করে অর্থ প্রেরণ করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি টাকা। পুরো টাকা ব্যয়ের বিপরীতে উপকারভোগী হলেন ২৭১০ জন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৮টি জেলায় আবারো তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে ২ হাজার ৭১০ জনকে পুনর্বাসন ও অন্য খাতে ব্যয় করা হয়। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ কোটি ৭ লাখ টাকায় ৪১ জেলায় ২ হাজার ৭১০ জন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ কোটি টাকায় বিভিন্ন জেলায় ২ হাজার ৮৫০ জন। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দের পুরোটাই ৩৭টি জেলায় ৩ হাজার জনের পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ কোটি টাকায় ৬৩ জেলায় ৩ হাজার তিনজনকে এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ কোটি টাকায় ৩ হাজার জনকে পুনর্বাসন করা হয়।
বিগত ১৪ বছরে সরকারের এই প্রকল্পে ৮৭ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে ৫৪ কোটি ১০ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয়ে পুনর্বাসনের সুবিধা পেয়েছে ১৭ হাজার ৭১০ জন। বরাদ্দের প্রায় ২৮ কোটি টাকাই ছিল উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায়। কিন্তু এখানকার বেশ কয়েকটি জেলা ঘুরে ভিক্ষাবৃত্তি কমে যাওয়ার বা এই পেশায় আগতরা ভিন্ন কর্মসংস্থানে স্থায়ী হওয়ার চিত্র দেখা যায়নি।
জেলায় জেলায় অনিয়মের চিত্র: ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় উত্তরের বিভিন্ন জেলায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলায় ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বরাদ্দ করা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। মহিউল ইসলাম মুকুল নামের ওই কর্মকর্তা ভিক্ষুকদের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ সঠিকভাবে বিতরণ করেননি।
ওই এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান এবিএম আবুল হোসেন বলেন, ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান নামের প্রকল্প আছে সেটি আমি জানিই না। কোনো ভিক্ষুক সরকারি টাকা পেয়েছে এমন তথ্য আমার জানা নেই। হয়তো কর্মকর্তারা নিজেরা ডেকে টাকা দিতে পারে।
জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক হুমায়ন কবির বলেন, আমরা সতর্ক রয়েছি সহায়তা যাতে বিফলে না যায়। তবে বিষয়টি বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন।
গাইবান্ধা জেলার ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে স্থানীয় জনগণ ক্ষুব্ধ। স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের কারণে জনগণ ক্ষিপ্ত। তারা এ ব্যাপারে উপকারভোগীদের তালিকা দিতে না পারলেও অনেকে উপকার পেয়েছেন বলে দাবি করেন।
ভিক্ষুকের টানাটানিতে বিরক্ত মানুষ-ছবি জাগো নিউজ
উপ-পরিচালক ফজলুল হক বলেন, এসব তালিকা চাইলেই প্রদান করা যায় না। অনেক তথ্য ভেবে চিন্তে দিতে হয়। কারা সহায়তা নিয়েছে সেটি আমাদের খুঁজে দেখতে হবে।
এদিকে রংপুরে ছয় বছর আগের জরিপের তথ্য অনুসারে, আট উপজেলা ও সিটি করপোরেশনে ১১ হাজার ২৭৬ জন ভিক্ষুক ছিল। এর মধ্যে পীরগঞ্জেই ২ হাজার ৭৩ জন। ২০২০ সালে ১০০ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়। ১ হাজার টাকা করে অনুদান পায় তারা। এছাড়া সমাজসেবা কার্যালয় থেকে ৫০ জনকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দেওয়া হয়। সাহায্য পাওয়া এই ব্যক্তিরা প্রায় সবাই এখন ভিক্ষাবৃত্তিতে রয়েছেন।
বগুড়া জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে শারীরিকভাবে কাজ করতে পারে এমন ব্যক্তিদের হাতে রিকশা-ভ্যান দিয়েছিল সমাজসেবা বিভাগ। আবার অনেককে দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ, প্রদান করা হয়েছে মনোহরি দোকান।
সমাজসেবার দাবি অনুসারে, এরইমধ্যে ৭ হাজার ২৯১ জন ভিক্ষুকের তালিকা করা হয়েছে। এরমধ্যে ছয় শতাধিক ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া চলমান। কিন্তু তাদের মুখের এই তালিকার সঙ্গে মেলেনি নিজস্ব বুলেটিনের তথ্য। সেখানে ৯৩ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের কথা উল্লেখ রয়েছে।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, অনেক নারী ও পুরুষ ভিক্ষুকের ক্ষুদ্র ব্যবসা, গরু-ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি, সেলাই মেশিন প্রদান করে হয়েছে এবং এটি চলমান।
আরও পড়ুন
একটি ঘর ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার নেই ভিক্ষুক জয়নবের রাজধানীতে বেড়েছে মৌসুমী ভিক্ষুকতবে অনুসন্ধানকালে দেখা গেছে, দোকান পাওয়া সদরের শেরেবাংলা নগরের নাজমা বেগম, মালগ্রাম দক্ষিণপাড়ার ফজর আলী, পূর্ব গোদারপাড়ার মমিন হোসেন, আকাশতারার হারুনুর রসিদ, জয়পুরপাড়ার আরিফুল ইসলাম, নামুজার বাবুল মোল্লা, গাবতলী উপজেলার লাংলুহাটের জাহিদুল ইসলাম, জয়ভোগা গ্রামের আছমা, শাজাহানপুরের রানীরহাটের ঈমান আলী, কামারপাড়ার আব্দুল জলিলের মধ্যে ঈমান আলী ছাড়া আর কেউ ভিক্ষুক নন। জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু সাইদ কাওছার রহমান এ ব্যাপারে কোনো সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে স্থানীয় জনগণ ক্ষুব্ধ। স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের কারণে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়েছে।
টাকা গেলো কোথায়: সরকারি নথি বলছে, বরাদ্দের বড় অংশ খরচ হয়েছে জরিপ, প্রশিক্ষণ ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে। জরিপে গেছে ১০ শতাংশ, প্রশিক্ষণে ২৫ শতাংশ আর অবকাঠামো নির্মাণে ৩০ শতাংশ। তবে এই প্রতিষ্ঠানের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে প্রশিক্ষণের নামে এই প্রকল্পে শুধু কাগজে-কলমে কর্মসূচি চলে। বাস্তবে কাজ না জানার কারণে পুনর্বাসিত ভিক্ষুকরা ফিরে যান পুরোনো পেশায়।
পুনর্বাসন পাওয়া জুলফিকার নামের একজন স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘হামাক একটা দোকান দিছিলো। পরে কাগজে-কলমে সই করে লিয়ে কলো আপনারা সগলি লাখপতি হচেন। সেই ট্যাকা কুটি গ্যালো, কে জানে? হামাক যে দোকান দিচে তাও বসলে লড়ভড় করে। ট্যাকার অভাবে এই দোকানটাও হামি চলাবার পারি না।’
সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) বগুড়া জেলা শাখার সম্পাদক কেজিএম ফারুক বলেন, সরকারের উদ্যোগে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য নির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ করা হলেও তার সঠিক ব্যবহারের অভাব এবং প্রয়োজনীয় নজরদারি না থাকায় ফলপ্রসূ হয়নি। যে ভিক্ষুকরা পুরোনো পেশায় ফিরে গেছে তাদের সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা এ প্রকল্পের বেহাল দশার নির্দেশনা করে। এখন প্রতিদিনই বগুড়া, জয়পুরহাট, গাইবান্ধার মতো জেলাগুলোর সড়কে ভিক্ষুক সংখ্যা বাড়ছে। যার কোনো সমাধান নেই। তাই ভিক্ষুক পুনর্বাসনের উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
এলবি/এসএইচএস/এমএস