ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্র গাঙ্গিনারপাড় এলাকা। এ এলাকার প্রধান সড়কের দুই পাশের ফুটপাত সারাবছর হকারদের দখলে ছিল। বিকিকিনিও হত জমজমাট। তবে হকারদের কারণে যানজটে নাকাল ছিল মানুষ। জনভোগান্তি রোধে বিভিন্ন সময় পুলিশসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে হকারদের উচ্ছেদ করেছে। তবে কিছুক্ষণ পর আবারও দোকান বসানো হত। এভাবে বছরের পর বছর ধরে ইঁদুর বিড়াল মতো খেলা চললে এর সমাপ্তি হয় গত বছরের ডিসেম্বরে।
Advertisement
জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ফুটপাত থেকে হকারদের সরিয়ে স্টেশন রোডের রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বর এলাকায় তাদের জন্য জায়গা দেওয়া হয়। এরপর থেকে সব হকাররা এখানে মালামালের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। আর কোথাও হকার না থাকায় ক্রেতারা এখানে এসে পছন্দের পোশাক কিনতেন।
এদিকে ঈদ উপলক্ষে হকারের সংখ্যা বেড়েছে। এসব হকাররা স্টেশন রোড এলাকায় জায়গা না পেয়ে গাঙ্গিনারপাড় সড়কে দুই পাশের ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে তাদের বিকিকিনিও হচ্ছে জমজমাট। ঈদে তাদের রুটিরুজির কথা চিন্তা করে বাঁধা দিচ্ছে না পুলিশ। তবে স্টেশন রোড এলাকায় হকারদের ব্যবসায় ধস নেমেছে। সড়কের পাশের ফুটপাত থেকে পছন্দের পোশাক কিনতে পারায় স্টেশন রোড এলাকায় ভিড় জমাচ্ছেন না ক্রেতারা।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদের অন্তত একমাস আগে থেকে হকারদের সংখ্যা বেড়ে যায়। এবারও তাই হয়েছে। বিভিন্ন হকাররা সড়কের পাশের ফুটপাতে দেদারসে পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছে। ফুটপাতে বিভিন্ন বয়সী মানুষের পোশাক পাওয়া যাওয়ায় স্টেশন রোড এলাকায় হকারদের কাছ থেকে পোশাক কিনতে কম যাচ্ছেন। ফলে ঢিলেঢালা ভাবে চলছে বিকিকিনি।
Advertisement
স্টেশন রোড এলাকার হকার মো. নয়ন মিয়া নামের বলেন, হকাররা সবসময় কমদামি পোশাক বিক্রি করেন। নিম্ন আয়ের ক্রেতারা যেখানে হকারদের পায়, সেখান থেকে পছন্দের পোশাক কেনেন। ঈদে ফুটপাতে হকারদের কাছ থেকে তারা পছন্দের পোশাক কিনছেন। তাই স্টেশন রোড এলাকার হকারদের অনেকে ফুটপাতে চলে গিয়েছেন। যারা ফুটপাতে জায়গা না পেয়ে স্টেশন রোডে নির্ধারিত জায়গায় আছেন। তাদের ব্যবসা মন্দা।
সাইদুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, স্টেশন রোড এলাকায় আমাদের দেওয়া নির্ধারিত জায়গায় ক্রেতার খুব কম আসছেন। আমাদের অপরিচিত অনেক হকাররা ফুটপাতে বসে ঈদের পোশাক বিক্রি করছেন। তাদের ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে।
গাঙ্গিনারপাড় সড়কের ফুটপাত থেকে ছোট্ট মেয়ের জন্য পোশাক কিনছিলেন আছমা খাতুন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ফুটপাতে সবধরনের পোশাকসহ পণ্য পাওয়া যায়। তাই কষ্ট করে ভেতরে (স্টেশন রোড এলাকা) হকারদের দোকানে যাওয়ার দরকার নেই। সড়কের পাশে থাকা বিভিন্ন দোকান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটা করেছি। এখন ফুটপাত থেকে মেয়ের জন্য কম টাকার মধ্যে একটি জামা কিনছি।
স্টেশন রোড এলাকায় নতুন হকার মার্কেটে পোশাক কিনতে আসেন জওহর লাল। তিনি বলেন, অনেক বিক্রেতা দোকান বন্ধ করে ফুটপাতে চলে গিয়েছেন। যে হকাররা এখানে আছেন তারা ক্রেতা সংকটে ভুগছেন। আমি একপিস শার্ট কিনতে এখানে এসেছি।
Advertisement
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ফুটপাতসহ সড়ক দখল করে হকারটা ব্যবসা করার কারণে সারাবছর গাঙ্গিনারপাড় সড়কে যানজট লেগে থাকত। ফলে তাদের ব্যবসা করার জন্য স্টেশন রোড এলাকায় জায়গা দেওয়া হয়েছে। এটি সড়ক থেকে কিছুটা ভেতরে হওয়ায় ঈদে ক্রেতারা কম যাচ্ছেন। ঈদে হকারদের কথা চিন্তা করে গাঙ্গিনারপাড়ের ফুটপাতে হকারদের ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ঈদের পর ফুটপাতে কোনো হকারকে বসতে দেওয়া হবে না।
কামরুজ্জামান মিন্টু/আরএইচ/এমএস