আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের নির্বাসন অভিযানে ছাড় পাচ্ছেন না কেউই

ট্রাম্পের নির্বাসন অভিযানে ছাড় পাচ্ছেন না কেউই

ফ্রাঙ্কো কারাবায়োকে গ্রেফতার করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি অভিবাসন কেন্দ্রে তার নির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট চলাকালে। শার্লি গুয়ার্দাদোকে আটক করা হয় কর্মস্থলে। ক্যামিলা মুনোজকে হানিমুন শেষে বাড়ি ফেরার পথে নেওয়া হয় হেফাজতে।

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসী বিতাড়ন অভিযানে রেহাই পাচ্ছেন না কেউই। সরকারের দাবি, শুধু অপরাধীদেরই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। তবে বাস্তবে পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন।

হাসপাতালে যাওয়ার পথে আটকের পর নির্বাসন

টেক্সাসের একটি চেকপয়েন্টে এক অভিবাসী দম্পতিকে আটক করেন ইমিগ্রেশন এজেন্টরা। তাদের ১০ বছর বয়সী কন্যা ক্যানসারে আক্রান্ত, তারা হিউস্টনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন।

আরও পড়ুন>> 

Advertisement

হাত-পা বেঁধে ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র, ভিডিও ভাইরাল অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের ধাক্কা সামলাতে পারবে আমেরিকা? যুক্তরাষ্ট্রে যেতে যেসব অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে

পরবর্তীতে পরিবারটিকে নির্বাসিত করা হয়, ফলে তাদের পাঁচ সন্তান—যারা সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক—পিতামাতার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

নির্বাসন বাড়ছে, লক্ষ্যবস্তু সাধারণ অভিবাসীরাও

যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) সংস্থার তথ্যমতে, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম ৫০ দিনে ৩২ হাজার ৮০৯ জন অভিবাসীকে আটক করা হয়। তাদের প্রায় অর্ধেকের অপরাধমূলক রেকর্ড থাকলেও বাকিরা শুধু সন্দেহের ভিত্তিতেই আটক হন বলে দাবি করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ২০০-র বেশি অভিবাসীকে এল সালভাদরের একটি কারাগারে পাঠিয়েছে। তাদের বেশিরভাগকেই ভেনিজুয়েলা-ভিত্তিক অপরাধী চক্র ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’র সদস্য হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছে। যদিও এদের মধ্যে নিরপরাধ ব্যক্তিরাও রয়েছেন বলে দাবি উঠেছে।

‘কেবল উলকি থাকায় নির্বাসন’

২৬ বছর বয়সী ভেনিজুয়েলার নরসুন্দর ফ্রাঙ্কো কারাবায়ো ২০২৩ সালে আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। ফেব্রুয়ারিতে ডালাসের আইসিই অফিসে তিনি নিয়মিত অ্যাপয়েন্টমেন্টে গেলে তাকে সেখানেই আটক করা হয়।

Advertisement

আইসিই কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, কারাবায়ো কোনো অপরাধ করেননি। তবে শরীরে থাকা উল্কির জন্য তাকে ট্রেন দে আরাগুয়া গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে সন্দেহ করা হয়।

‘তার হাতে শুধু দুটি উলকি আছে—একটি ঘড়ি, যেখানে ওর প্রথম সন্তানের জন্মের সময় লেখা এবং আরেকটি একটি গোলাপের চিহ্ন,’ বলেন তার স্ত্রী।

আত্মসমর্পণের পরও নির্বাসন

৩৫ বছর বয়সী উলকি শিল্পী জোন চাসিন। ২০২৪ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে পৌঁছে নিজেই অভিবাসন কর্মকর্তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।

ট্রাম্প প্রশাসন তাকেও এল সালভাদরে পাঠিয়ে দেয়, কোনো অপরাধের প্রমাণ ছাড়াই, জানান তার বোন ইউলিয়ানা।

ট্রাম্প সমর্থকের স্ত্রী আটক 

হানিমুন শেষে উইসকনসিনে ফিরছিলেন ২৬ বছর বয়সী পেরুর নাগরিক ক্যামিলা মুনোজ। তাকে পুয়ের্তো রিকোর একটি বিমানবন্দরে আটক করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে তার অভিবাসন সংক্রান্ত কাগজপত্রের নবায়ন প্রক্রিয়াধীন ছিল।

মুনোজের স্বামী ব্র্যাডলি বার্টেল গত নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি পুরোপুরি হতবাক। আমি বলবো না যে, ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া নিয়ে আমার আফসোস আছে, তবে আমি চাই তিনি বিচারব্যবস্থাকে ঠিক করুন।

শ্রমিক সংকটের আশঙ্কা

অভিবাসন আইনজীবী ডেভিড রোজাস বলেন, এটি আমার ২১ বছরের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে ভয়ংকর অভিযান। মানুষ প্রতারিত বোধ করছে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, অভিবাসীরা এই দেশের মেরুদণ্ড। এভাবে চলতে থাকলে আমরা শ্রমিক সংকটে পড়বো।

সেনা সদস্যের স্ত্রীকেও ছাড়া হয়নি

২৭ বছর বয়সী এক হন্ডুরান অভিবাসী শার্লি গুয়ার্দাদোকে কর্মস্থলে থাকাকালে আটক করা হয়। তার স্বামী আইস্যাক কোরেয়া একজন মার্কিন সেনা সদস্য।

গুয়ার্দাদো ১০ বছর আগে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করলেও বর্তমানে তিনি বৈধতার জন্য প্রয়োজনীয় আবেদন প্রক্রিয়াধীন রেখেছিলেন।

কোরেয়া বলেন, আমার ছেলের বয়স মাত্র ১০ মাস, মাকে ছাড়া সে ঘুমাতে পারছে না। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আমার স্ত্রী যদি নির্বাসিত হয়, তাহলে তাকে ফিরিয়ে আনতে তিন থেকে পাঁচ বছর লেগে যাবে।

সূত্র: এএফপিকেএএ/