উড়োজাহাজে ব্যবহৃত এভিয়েশন ফুয়েলের (জেট এ-১) দাম কিছুটা কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। তবে এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো এই জ্বালানির দাম আরও কমানোর দাবি জানিয়েছে। তাদের দাবি, বিশ্ববাজার থেকে ফুয়েল সংগ্রহ করলে তারা দেশের থেকে কম মূল্যে কেনার অফার পান। দেশে শুধুমাত্র পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড একচেটিয়া ব্যবসা করছে এবং বেশি দাম রাখছে।
Advertisement
রোববার (২৩ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জেট ফুয়েলের দাম পুনর্নির্ধারণ নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কার্যালয়ে শুনানি হয়। শুনানিতে এসব বিষয় উঠে আসে।
এর আগে জেট ফুয়েলের দাম পুনরায় নির্ধারণের জন্য বিপিসি চিঠি পাঠায় বিইআরসির কাছে। পরে বিইআরসি দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্জিন/চার্জ পুনর্নির্ধারণ বিষয়ক প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে। কমিটি একটি প্রতিবেদনও দাখিল করে।
জেট এ-১ জ্বালানির ক্ষেত্রে ২০২৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুল্ক ও করসহ ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা বিক্রয়মূল্য দেশের অভ্যন্তরের ফ্লাইটের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার ১১১ টাকা। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ৭৫ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯১ টাকা ৫০ পয়সা (এক ডলার ১২২ টাকা ধরে)। প্রস্তাবিত মূল্যহরে বিপিসি বলেছে দেশের অভ্যন্তরের ফ্লাইটের ক্ষেত্রে দাম অপরিবর্তিত রেখে ১১১ টাকা এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ৭৩ ডলার নির্ধারণ করা যেতে পারে।
Advertisement
তবে বিইআরসির গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনে দেশের অভ্যন্তরের ফ্লাইটের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার ১০৫ টাকা ৫১ পয়সা এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার শূন্য দশমিক ৬৯০১ ডলার বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির সব ধরনের ইন্টারনেটের দাম কমছে বিআরটি দিয়ে শুধু বের হওয়া যাবে, আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া হবে একমুখীশুনানিতে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (পিওসিএল) তাদের প্রস্তাবে উল্লেখ করে, জেট এ-১ একটি বিশেষায়িত পণ্য। আমদানিকৃত ট্যাংকার থেকে জেট এ-১ খালাস কার্যক্রম শুরু করে উড়োজাহাজে সরবরাহ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে শেল এভিয়েশনের বিশেষ নির্দেশনা প্রতিপালন করে বিভিন্ন ফিলটারিং-টেস্টিংয়ের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। গুণগত মান রক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি, হোসপাইপ যন্ত্রাংশ ক্রয় এবং এভিয়েশন ডিপো-বিমানবন্দর সার্ভিস স্টেশন ও ডেলিভারি ইক্যুইপমেন্ট নিয়মিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ অন্যান্য অতিরিক্ত খরচ কোম্পানিকে বহন করতে হচ্ছে, যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে তেল বিপণন কোম্পানির মার্জিন ও বিমানবন্দর খরচ বাড়ানো প্রয়োজন।
প্রস্তাবে পদ্মা অয়েল উল্লেখ করে, তাদের প্রতি লিটার জেট এ-১ সরবরাহ ও বিপণন খরচ ২ টাকা ১১ পয়সা। এর মধ্যে জেট এ-১ এর বিদ্যমান মূল্য কাঠামো অনুযায়ী জেট এ-১ এর বিপরীতে প্রতি লিটার ৯৫ পয়সা (পিওসিএলের বিপণন মার্জিন ৬০ পয়সা এবং জেট এ-১ এর বিপরীতে বিমানবন্দর খরচ প্রতি লিটারে ৩৫ পয়সা) জেট এ-১ এর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য বিপিসি প্রস্তাবিত অন্যান্য কস্ট এলিমেন্ট ঠিক রেখে কোম্পানি মার্জিন ৯০ পয়সা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
শুনানিতে বিইআরসির করিগরি কমিটি জানায়, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্লাটস রেটের ভিত্তিতে ডিউটি পেইড জেট এ-১ এর মূল্য প্রতি লিটার ১০৫ টাকা ৫১ পয়সা, যা বিদ্যমান মূল্যহারের চেয়ে প্রতি লিটার ৫ টাকা ৪৯ পয়সা কম। বন্ডেড/ডিউটি ফ্রি মূল্যহার প্রতি লিটার শূন্য দশমিক ৬৯০১ মার্কিন ডলার, যা বিদ্যমান মূল্যহারের চেয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ৩৯৯ ডলার কম।
Advertisement
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)- এর জ্বালানি উপদেষ্টা এম. শামসুল আলম বলেন, শুধুমাত্র জেট ফুয়েলে সাড়ে ৫ টাকা যদি কম হয় তাহলে বছরে ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। আমরা জ্বালানির দাম কমানোর জন্য একটা রিভিউ কমিশনের দাবি জানিয়েছি। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যেভাবে বিনা টেন্ডারে এলপিজি কেনা হয়েছে, বেশি দামে কেনা হয়েছে। আবার প্রজেক্ট শেষ করতে বিলম্ব করেছে। বিইআরসি যদি এই ছোট রুমে বসে সারাদেশের জ্বালানি খাত নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাহলে পদ্মা অয়েল কোম্পানি কেন বড় বড় দুইটা বিল্ডিং করতে গেলো! এত বিলাসিতার কি দরকার ছিল?
শুনানিতে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, এটি বিইআরসির জন্য তরল জ্বালানির প্রথম মূল্য নির্ধারণ। এর আগে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ নিয়ে শুনানি হয়েছে। গণশুনানিতে সুবিধা হলো সবার কথা শুনতে পারি। আবার লিখিত বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ আছে।
গণশুনানিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য (অর্থ, প্রশাসন ও আইন) মো. আব্দুর রাজ্জাক, সদস্য (গ্যাস) মো. মিজানুর রহমান, সদস্য পেট্রোলিয়াম ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, সদস্য (বিদ্যুৎ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ শাহিদ সারওয়ার উপস্থিত ছিলেন।
এনএস/কেএসআর/জিকেএস