শ্রীলঙ্কার গাড়ির বাজারে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার করা জাপানের ব্যবহৃত (সেকেন্ড হ্যান্ড) গাড়িগুলো এখন চীনের বৈদ্যুতিক যানবাহনের (ইভি) প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে।
Advertisement
২০২০ সালে আরোপিত আমদানি নিষেধাজ্ঞা গত ফেব্রুয়ারিতে প্রত্যাহার করে নেয় দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটি। এর ফলে দেশটির গাড়ির বাজারে নতুন প্রাণ ফিরে এসেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
শ্রীলঙ্কায় জাপানি গাড়ির জনপ্রিয়তাকলম্বোর রাস্তায় সুজুকি ওয়াগন আর মিনি কার, টয়োটা অ্যাকুয়া হাইব্রিডসহ বিভিন্ন জাপানি মডেলের আধিপত্য স্পষ্ট। দেশটিতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ যাত্রীবাহী গাড়ি জাপানি বলে জানান কলম্বোতে নিযুক্ত জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধি হিরোকি ওই।
তিনি বলেন, এই গাড়িগুলো ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে এবং অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।
Advertisement
আরও পড়ুন>>
শ্রীলঙ্কায় গাড়ি আমদানির নিষেধাজ্ঞা শিথিল, কেনার সামর্থ্য কতজনের? ট্রাম্পের শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি তৈরি করবে হোন্ডা চীনা গাড়ির দখলে যাচ্ছে বিশ্ব, উদ্বেগ পশ্চিমা নির্মাতাদের২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় জাপান থেকে প্রায় ৬৪ হাজার ব্যবহৃত যাত্রীবাহী গাড়ি রপ্তানি হয়েছিল, যার মূল্য ছিল ৫৭২ মিলিয়ন ডলার। দেশটিতে ডান-হাতি ট্র্যাফিক হওয়ায় জাপানি গাড়িগুলোর জন্য এটি সহজ বাজার। ছোট গাড়ির চাহিদাও বেশি।
শ্রীলঙ্কায় তিন বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি আমদানি নিষিদ্ধ। ২০১০-এর দশকে জাপানে নতুন গাড়ির বিক্রি কমে গেলে অতিরিক্ত মজুত গাড়ির অনেকাংশই শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি করা হয়। জাপানি গাড়িগুলো দেশটিতে ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
কিন্তু ২০২০ সালে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমে গেলে সরকার আমদানি নিষিদ্ধ করে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকলে ২০২২ সালে দেশটি ঋণ খেলাপি হয়। পরবর্তীতে অর্থনীতি স্থিতিশীল হলে সরকার ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে এবং গত মাসে তা সম্পূর্ণ তুলে নেয়। তবে নতুন বিধিনিষেধও জারি করা হয়েছে—যেমন, একজন ব্যক্তি বছরে মাত্র একটি গাড়ি আমদানি করতে পারবেন।
Advertisement
এখন জাপানি ব্যবহৃত গাড়িকে প্রতিযোগিতায় ফেলতে শুরু করেছে চীনা বৈদ্যুতিক যানবাহন। চীনে অতিরিক্ত উৎপাদনের ফলে দেশটি ইথিওপিয়া ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে অবিক্রীত ইভি রপ্তানি করছে এবং শ্রীলঙ্কাও এর ব্যতিক্রম নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিওয়াইডি গত বছর কলম্বোতে একটি শোরুম খুলেছে, যা আমদানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আগেই ইভির বাজার সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দেয়। দেশটির সরকারও ইভি ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছে। কর ছাড়ের ফলে বিওয়াইডির সিল মডেল টয়োটা করোলার তুলনায় কয়েক হাজার ডলার সস্তা।
জাপানের ব্যবহৃত গাড়ির বাজার হুমকিতে?জাপানি ব্যবহৃত গাড়ি রপ্তানির বাজার বেশ শক্তিশালী। ২০২৪ সালে দেশটির রপ্তানি ২ শতাংশ বেড়ে ১৫ লাখ ৬৬ হাজার ৬২১ গাড়িতে পৌঁছায়, যা এক বছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড। ব্যবহৃত গাড়ির উচ্চ পুনর্বিক্রয় মূল্য নতুন গাড়ির বিক্রি বাড়াতেও সহায়ক হয়।
বিপরীতে, চীনের ব্যবহৃত গাড়ির রপ্তানি ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে বলে চীনা শিল্প সংস্থাগুলোর অনুমান।
এ অবস্থায় শ্রীলঙ্কার বাজারে চীনা ইভির আগ্রাসী প্রবেশ জাপানি ব্যবহৃত গাড়ির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কেএএ/