প্রতি বছরের মতো এবারও ধারাবাহিকভাবে ‘বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ইউকের’ আয়োজনে পূর্ব লন্ডনের রিচ মিক্স সেন্টারে ‘বই-লিট ফেস্টিভ্যাল’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আলোয় ভুবন ভরা’ গানের মধ্য দিয়ে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর সমবেত জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুধীজন ও শিল্পীরা।
Advertisement
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল দ্য সিজন অব বাংলা ড্রামায় পরিবেশিত ক্ষুদে শিল্পীদের লিখিত ও মঞ্চায়িত নাটকের ক্ষুদে লেখক ও শিল্পীদের মধ্যে সার্টিফিকেট বিতরণ। ক্ষুদে শিল্পীদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেন কবি ফাহমিদা মজিদ মঞ্জু। তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শিশুদের গড়ে তোলার প্রতি পরিবারের দায়িত্বশীল হতে গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় স্বরচিত ছড়া আবৃত্তি করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের বই পরিচিতি পর্বে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের তিনজন লেখকের তিনটি বই থেকে পাঠ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় লেখকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। লেখকরা হলেন বুলবুল হাসান, বই ‘অন্তহীন বিতর্কযাত্রা’ আরফুমান চৌধুরী বই ‘উত্তরসূরির গান, এবং আলমগীর শাহরিয়ার, বই ‘রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতা’। পাঠ করেন তৌহিদ শাকীল, ফাহমিদা বেগম ও শালিনা রহমান।
অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে উপস্থাপনায় ছিলেন খাদিজা রহমান, ফাহমিদা বেগম, সৈয়দা সায়মা আহমেদ ও বুলবুল হাসান। কথা সাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান ও কথাকার চন্ত্রিল ভট্টাচার্য সাথে কথোপাথন ছিল অনুষ্ঠানের মূল্য আকর্ষণ।
Advertisement
প্রথমে কথোপকথনে অংশ নেন সৈয়দা সায়মা আহমেদ ও কথা সাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান। বাংলা সাহিত্য ও বাংলা ভাষা নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাবে শাহাদুজ্জামান বলেন, বিশ্ব পরিসরে টিকে থাকতে হলে বিদেশি ভাষার সাথে আমাদের বাংলার চর্চা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশেও বাংলা ভাষার সংকট নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, কেউ কেউ বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা আরবির প্রচলন করার কথা তুলছেন। এটা আমাদের কী বার্তা দিচ্ছে।
পরে বুলবুল হাসানের সঙ্গে কথোপকথনে অংশ নেন চন্দ্রিল ভট্টাচার্য।
চন্দ্রিল ভট্টাচার্য তার আলোচনায় প্রবাসে বাঙালির নতুন প্রজন্মের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, প্রবাসে নতুন প্রজন্মকে বাংলা এমনি এমনিতে শেখানো যাবে না, শেখাতে আনন্দদানের মধ্য দিয়ে তথা সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে তাকে বাংলা শেখাতে হবে। অন্যথায় সে শিখবে না। এই সংকট এখন পশ্চিম বাংলার সন্তানদের বেলায়ও সত্য। পশ্চিম বাংলায় হিন্দি ভাষার প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।
এছাড়া লন্ডনের লেখকদের প্রকাশিত বইয়ের স্টল এবং বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থা ‘বাতিঘর’ তাদের প্রকাশিত বইসম্ভার ছিল স্টলের অন্যতম আয়োজন।
Advertisement
বই প্রদর্শনী ও বিক্রয় স্টলে উল্লেখযোগ্য বইয়ের সমাবেশ ছিল। বিতার্কিক বুলবুল হাসানের সদ্য প্রকাশিত বই ‘অন্তহীন বিতর্কযাত্র’ আত্মজৈবনিক গ্রন্থ, কবি ফাহমিদা মজিদ মঞ্জুর ছড়া কবিতার বই, কবি হামিদ মোহাম্মদের সম্প্রতি একুশে বইমেলায় প্রকাশিত বাছাই ‘প্রেমের কবিতা’, লেখক ও কবি আলমগীর শাহরিয়ারের ‘রবীন্দ্রনাথ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতা’, আরফুমান চৌধুরীর ‘অনুবাদ গ্রন্থ ‘উত্তরসূরির গান’ এবং লেখক চৌধুরী শামসুদ্দিনের গল্পগ্রন্থ ‘পৌষ মাস আর সর্বনাশের গল্প’ ও ‘খই ভাজা’, উর্মিলা আফরোজের ‘জন্ম মৃত্যু পালকি’ গ্রন্থ, গীতিকবি মাহফুজা রহমানের গীতিকবিতা গ্রন্থ ‘নতুন এক বৈরাগী আমি’ ছিল বইয়ের স্টলে অন্যতম প্রকাশনা।
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের উদ্যোগে এই বই সম্ভার উপস্থিত সুধীজনের দৃষ্টি কাড়ে। ‘বাতিঘর’ স্টলের মধ্যে বাঙালি লেখক ও কবিদের লেখা বিস্তর বই এবং অনুবাদ গ্রন্থগুলো পাঠকরা অতি অল্প সময়েই কিনে নিতে দেখা যায়। লেখক বুলবুল হাসানের লেখা ‘অন্তহীন বিতর্কযাত্রা’র শতাধিক কপি পাঠকদের হাতে হাতে চলে যায়। তিনি অটোগ্রাফ দেন আগ্রহী ক্রেতাদের। কবি হামিদ মোহাম্মদের স্টলে রাখা ‘প্রেমের কবিতা’ বই নি:শেষ হয়ে যায় অল্প সময়েই।
এমআরএম/এমএস