দেশজুড়ে

সিল্কে আগ্রহ ক্রেতাদের, অর্ধশত কোটি টাকার বেচাকেনার আশা

সিল্কে আগ্রহ ক্রেতাদের, অর্ধশত কোটি টাকার বেচাকেনার আশা

মাহমুদা খাতুন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি শেষ বর্ষের ছাত্রী। পরিবারের সঙ্গে থাকেন রাজশাহী শহরে। তার কাছে ঈদের কেনাকাটা মানেই ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী সিল্ক। তাই পরিবারের সঙ্গে এসেছেন রাজশাহীর সপুরা সিল্ক শোরুমে। ঘুরে ঘুরে দেখছেন ঈদের পোশাক।

Advertisement

মাহমুদা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার একটু দেরিতেই আসা হয়েছে। তবে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার শাড়ির কালেকশন একটু বেশি। দামও একটু বেশি। তবে মাল্টিপল (বিভিন্ন) কালেকশন আছে। মাল্টিপল দামও আছে। সবাই কিনতে পারবেন।’

‘পারসোনালি দেশি কাপড় একটু বেশি পছন্দ করি’ জানিয়ে এই তরুণী বলেন, ‘সিল্ক সবসময় সবার ওপরেই থাকে। সবসময় মনে হয় সিল্ক থেকে একটা কিছু নিতে পারলে ভালো হয়। আর ঈদ এলে এই চাহিদা বেড়ে যায় সবারই। সেই বিবেচনায় আজ এখান থেকে কেনাকাটা করতে এসেছি।’

মাহমুদার মতো অনেকেই ঐতিহ্যবাহী সিল্ক শোরুমগুলোতে ভিড় করছেন। মূলত ঐতিহ্য ও নিজস্বতার কারণের তারা প্রতিবার আসেন এই শোরুমগুলোতে। তাই ঈদ সামনে বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছেন সিল্ক শোরুমের মালিকরা। এরইমধ্যে জমে উঠেছে বেচাকেনা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদে তাদের কেনাকাটা অর্ধশত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

Advertisement

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ছুটির দিন হওয়ায় নগরীর বিসিক এলাকার শোরুমগুলোতে ক্রেতা সমাগমও যথেষ্ট। এমনকি সুযোগ বুঝে অন্য বিভাগ থেকেও এসেছেন ক্রেতারা। ক্রেতা উপস্থিতি ভালো হওয়ায় ফুরফুরে মেজাজে বেচাবিক্রি করছেন দোকানিরা।

নগরীর সিল্ক শোরুমগুলোতে দেখা যায়, রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্কের শাড়ি, পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, থ্রিপিস, শার্ট, হিজাব, ওড়না, স্কার্ফের মতো পোশাক বিক্রি হচ্ছে। নিরিবিলি পরিবেশে ক্রেতারা তাদের পছন্দের পোশাক দেখছেন।

অন্যান্য ঈদের মতো এবারও রাখা হয়েছে শাড়ি, পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, থ্রিপিস, শার্টসহ বিভিন্ন পোশাক। বলাকা, মক্কা, কাতান, ছিপ কাতানসহ বিভিন্ন নামের শাড়ি এক হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। পাঞ্জাবি ১-৭ হাজার, শেরওয়ানি ৮-২৫ হাজার, থ্রিপিস ১-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা।

রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা নাজনীন সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদে সিল্ক শাড়ি ও থ্রিপিস খুব ভালো লাগে। ঈদ এলে এখান থেকেই কেনা হয়। কিন্তু ভালো লাগলেও দাম একটু বেশি।’

Advertisement

বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা রাহাত হোসেন বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই সিল্কের কাপড় পছন্দ করি। এদের কালেকশনগুলো অনন্য। এগুলো পড়ার জন্য খুবই আরামদায়ক।’

কথা হয় রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশন শোরুমের মালিক খুরশিদা খাতুন খুশির সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজশাহী সিল্কের মসলিনের কাপড় এবার আমরা বেশি তৈরি করেছি। মসলিনের পাশাপাশি সফ্ট সিল্ক আছে। এছাড়া কাতান জয়শ্রি সিল্ক, তসর সিল্কও রয়েছে।

খুরশিদা খাতুন বলেন, ‘রাজশাহী সিল্কের সুতার দাম বেড়ে গেছে, তবুও আমরা এগুলো কিছুটা কম দাম রেখেছি। উদ্দেশ্য সব কাস্টমার যেন এটি কিনতে পারেন। কারণ অনেক বড় শোরুম দেখে কাস্টমার হয়তো একটু ভয় পান, বড় দোকান দাম বেশি রাখবে। কিন্তু আমরা দামটা একটু কম রেখেছি।’

রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশন শোরুমের এই মালিক জানান, তাদের শোরুমে মসলিন শাড়ি ১৭৫০ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার, কাতান শাড়ি ৩৫০০ থেকে শুরু করে ১০ হাজারের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। থ্রিপিস ১৪৫০ থেকে শুরু করে ১০ হাজার পর্যন্ত দামের আছে। এবার মসলিন সিল্কের চাহিদা বেশি।

রাজশাহী সপুরা সিল্ক মিল লিমিটেডের পরিচালক আশরাফ আলী বলেন, এবার যেহেতু ঈদ কিছুটা এগিয়ে এসে শীত ও গরমে মাঝামাঝি পড়েছে, সেই চিন্তা থেকেই পোশাক আরামদায়ক করে মসলিন র সিল্ক দিয়েই কাপড় তৈরি করেছি।

তিনি বলেন, যে কোনো উৎসবে সিল্কের বড় চাহিদা থাকে। এখন পর্যন্ত সেই হিসেবে চাহিদা বেশি। সাড়াও বেশি। বর্তমানে চাহিদা বাড়তির দিকে। নতুন করে সিল্ক নিয়ে অনেক কাজ হচ্ছে। কাস্টমারও আগ্রহী।

বাংলাদেশ রেশন শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, আমাদের প্রিপারেশন বেশ ভালো ছিলো। এবার ঢাকাতেও মসলিন কাপড়ের চাহিদা ছিল বেশ ভালো। দুই মাস আগে থেকেই সিল্কের থান কাপড় সিজিন শুরু হয়েছে। এবার থানের প্রোডাকশন বেশি। চাহিদাও অনেক। এগুলো সাপ্লাই দিতে পারেননি অনেকেই।

তিনি বলেন, এখনও পাওয়ার লুমগুলোতে কাপড় তৈরিতে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ চলছে। কিন্তু শোরুমে একটু মন্দাভাব। যেহেতু এবার ঈদে অনেক বড় ছুটি পড়ছে, তাই ছুটিতেও বিক্রি হবে। আশা করছি সিল্কের প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেচাকেনা হবে।

সাখাওয়াত হোসেন/এসআর/জেআইএম