ইতেকাফ ইসলামে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা ও আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার উপায়। ইতেকাফের উদ্দেশ্য দুনিয়াবি সব ঝামেলা ও ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ঘরে আল্লাহ কাছে অবস্থান করা এবং শুধু তাঁর ধ্যানে নিজের মনকে নিবিষ্ট করা।
Advertisement
ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ইতেকাফের উদ্দেশ্য হলো অন্তরকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর প্রতি নিবিষ্ট করা এবং শুধু তাঁর দিকে মনোনিবেশ করা। তাঁর সাথে নির্জনে সময় কাটানো। সৃষ্টিকুলের সাথে ব্যস্ততা ত্যাগ করে একমাত্র স্রষ্টা ও মালিকের সাথে ব্যস্ত হওয়া এমনভাবে যেন তাঁর স্মরণ, ভালোবাসা এবং তাঁর দিকে ফিরে আসা অন্তরের মূল চিন্তা ও উদ্বেগের বিষয় হয়। দিন-রাত তাঁর স্মরণে, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন ও তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার উপায় নিয়ে ভেবে অতিবাহিত হয়। ইতেকাফের উদ্দেশ্য সৃষ্টির সংস্পর্শের আনন্দের পরিবর্তে আল্লাহ তাআলার সংস্পর্শের আনন্দ লাভ করা। ইতেকাফ আমাদেরকে কবরের নির্জনতায় আল্লাহর সংস্পর্শ লাভের আনন্দের জন্য প্রস্তুত করে, যখন আর কোনো সঙ্গী থাকবে না এবং তারা আনন্দের কারণও হবে না। (যাদুল মাআদ)
ইমাম ইবনুল কাইয়িমের (রহ.) এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় ইতেকাফ কেমন হওয়া উচিত। আজকের দিনে অনেকের ইতেকাফ দেখে মনে হয়, ইতেকাফের উদ্দেশ্য শুধু মসজিদকে অবস্থান ও ঘুমানোর জায়গা বানানো। ইতেকাফে মসজিদে বসেই গল্পগুজব, হাসি-ঠাট্টা, অনর্থক কথাবার্তা ইত্যাদি চলতে থাকে। এমন কি গিবত, অপবাদ ইত্যাদির মতো গর্হিত গুনাহও ইতেকাফের সময় হয়ে যায়।
রমজানের শেষ দশ দিনের সুন্নত যারা ইতেকাফে বসছেন, তাদের উচিত এসব বিষয়ে সচেতন ও সাবধান থাকা।
Advertisement
ইতেকাফে প্রয়োজন পরিমাণ দুনিয়াবি কাজ তো করতে হবে যেমন খাওয়া, ঘুমানো, প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করা ইত্যাদি। এর বাইরে ইতেকাফকারীর প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর স্মরণ ও ইবাদতে অতিবাহিত হওয়া উচিত। অন্তরকে দুনিয়া থেকে পুরোপুরি বিযুক্ত করে আল্লাহর সাথে যুক্ত করা উচিত।
নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইতিকাফের সময় মসজিদে একটি তাঁবু স্থাপন করার নির্দেশ দিতেন। ইদের দিন পর্যন্ত তিনি সেখানেই অবস্থান করতেন এবং মানুষের সংস্পর্শ থেকে নিজেকে দূরে রাখতেন। নির্জনে শুধু আল্লাহ তাআলার স্মরণ ও ইবাদতে মগ্ন থাকতেন।
ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন, ইতিকাফের সময় যতটা সম্ভব মানুষের সংশ্রব ত্যাগ করা উচিত। এ সময় কাছে কাছে দ্বীনি জ্ঞান অর্জন বা কোরআন শিক্ষার চেয়েও নিজেকে আলাদা রাখা এবং আল্লাহর স্মরণে নির্জনে সময় কাটানোই উত্তম।
রমজানের শেষ দশকের ইতেকাফে রাতের ইবাদতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ এই ইতেকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য লাইলাতুল কদরের ফজিলত লাভ করা। লাইলাতুল কদরে ইবাদতের সৌভাগ্য লাভ করা। বিশেষত বেজোড় রাতগুলোর একটি মুহূর্তও ঘুম বা অন্য অপ্রয়োজনীয় কাজে নষ্ট করা উচিত নয়। নবিজি (সা.) শেষ দশকে এবং বিশেষত বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করার নির্দেশ দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে আপনারা লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করুন। (সহিহ বুখারি)
Advertisement
ওএফএফ/জিকেএস