ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় তিতাস নদীতে বাঁধ দিয়ে কৃষি জমিতে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এতে শুকিয়ে গেছে নদী। এসব রাস্তা দিয়ে রাতে নদী ও কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়। রাত যতো গভীর হয় উপজেলার বনগজ গ্রামে তিতাস নদীর তীরে যেন চলে মাটি কাটার মহোৎসব।
Advertisement
অভিযোগ সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, রাতের বেলা এ জায়গায় চলে মাটি কাটার মহোৎসব। তিতাস নদীর ধরখার সেতু থেকে পূর্ব-উত্তরে তিতাস যেদিকে গেছে সেদিকে এক কিলোমিটারের মধ্যে ৩টি বাঁধ দিয়ে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। মূলত আওয়ামী লীগ আমলে এখান থেকে মাটি কাটার শুরু। কিছুদিন মাটি কাটা বন্ধ থাকলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আবার মাটি কাটা শুরু হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না মাটি খেকোদের। প্রতিদিন রাতে অন্তত ৪০-৫০ ট্রাক মাটি এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নদীতে বাঁধ দিয়ে মাটি কাটার কারণে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি কাজ। নদীতে বাঁধ দিয়ে মাটি লুটপাটের এ মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছেন উজানিসার গ্রামের মীর আরিফুল ওরফে শুটার আরিফ। এ আরিফের বিরুদ্ধে পতিত সরকারের সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের হাতিয়ার বানিয়ে নদীর মাটি লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছেন নুরুজ্জামান শিপন ও আল আমিন নামে আরও দুজন।
এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।
সরজমিনে দেখা যায়, ধরখার সেতুর পাশ দিয়ে যাওয়া বনগজ-আখাউড়া সড়কের পাশে মাটি কাটার মহোৎসব চলে। সড়কটির পাশে দুটি স্থানে ও প্রায় এক কিলোমিটার দূরে আরেকটি বাধা দেওয়া হয়েছে। দুই মাথার দুটি বাধ দেওয়া হয়েছে পানি প্রবাহ বন্ধ রাখার জন্য। আর মাঝের বাঁধটি দেওয়া হয়েছে নির্বিঘ্নে মাটি নিতে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। পাশাপাশি নদী থেকেও বেকু দিয়ে মাটি কেটে বিক্রয় করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে কৃষি জমিতে গিয়ে মীর আরিফের মালিকানাধীন প্রাইভেটকারটি পাওয়া যায়। তবে এর ভেতরে তাকে পাওয়া যায়নি। উপস্থিত কৃষকরা জানান সাংবাদিক আসার খবরে সে গাড়ি রেখে পালিয়ে গেছেন তিনি।
Advertisement
স্থানীয়রা জানান, শুটার আরিফের নেতৃত্বে প্রভাবশালী চক্র এ মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত। বছর খানেক সময়ের আরও আগে এখান থেকে মাটি কাটা শুরু হয়। মাঝে মাটি কাটা বন্ধ ছিল। এখন আবার আগের চক্রটির সঙ্গে নতুন আরেকটি পক্ষ যোগ দিয়ে মাটি কাটা শুরু করেছে। মূলত সন্ধ্যার পর থেকে একাধিক ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হয়। এরপর ট্রাকে করে এসব মাটি নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়।
কৃষি জমিতে থাকা মো. শাহজাহান নামে এক কৃষক বলেন, নদীতে বাধ দেওয়া আমার জমিতে পানি দিতে সমস্যা হয়। মাটি কেটে পুকুরের মতো করে ফেলা একটি জায়গা থেকে এর মালিককে বলে পানি নিতে হয়। আমরা চাই বাধ খুলে দেওয়া হোক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কৃষক বলেন, নদীর কিছু অংশ সরকারিভাবে খনন করা হয়েছিল। আরও কিছু অংশ খনন বাকি রয়েছে। এখানে বাধ দিয়ে নদী ও এর আশেপাশের জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। সময়ের প্রেক্ষিতে মাটি কাটার লোকের পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। কিন্তু আমাদের সুবিধা হয়নি।
পরে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মীর আরিফ ওরফে শুটার আরিফের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। তার বাড়িতে গিয়েও খোঁজ করে সন্ধ্যান মেলেনি।
Advertisement
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. দিদারুল আলম বলেন, আখাউড়া এলাকায় নদীতে বাঁধ একবার কেটে দেওয়া হয়েছিল। আবার প্রয়োজনে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে। কিন্তু খননযন্ত্রের কারণে বাঁধ ভাঙা যাচ্ছে না। দ্রুত এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আবুল হাসনাত মো. রাফি/আরএইচ/জিকেএস