১৩ মাস আগে যুদ্ধের মধ্যেই প্রথম সন্তানের জন্ম দেন আফনান আল-গানাম। তখন তার পরিবার গাজা উপত্যকায় নিজেদের বাড়িতে বাস করতেন। চলতি বসন্তে তিনি দ্বিতীয়বার সন্তানসম্ভবা হয়েছেন। এই সময়ে এসে তারা একটি দারিদ্র্যপীড়িত তাঁবুর নিচে বাস করতেন। ১৫ মাস যুদ্ধ শেষে একটি নাজুক যুদ্ধবিরতি তাদের মধ্যে কিছুটা প্রশান্তি এনেছিল।
Advertisement
কিন্তু গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) বিমান হামলায় তাদের তাঁবুটি মাটিতে মিশে যায়। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা আফনান আল-গানাম ও তাদের প্রথম সন্তান মোহাম্মদ—দুজনেই নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন>>
গাজায় ৩৬ ঘণ্টায় ১৮৩ শিশুকে হত্যা করলো ইসরায়েল ট্রাম্পের সঙ্গে পরামর্শ করেই গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল নেতানিয়াহুর গদি বাঁচাতেই গাজায় ফের হামলা?সেদিন সেহরির সময় আকস্মিকভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে যুদ্ধবিমান এসে গাজায় বোমা ফেলতে শুরু করে। এতে চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। জিম্মিদের ছেড়ে দিতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে বাধ্য করতে গাজায় হামলা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
Advertisement
‘তারা আমাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে,’ বলেন আফনানের স্বামী আলা আবু হেলাল। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালে কাপড় দিয়ে ঢাকা ছোট্ট মোহাম্মদের মরদেহ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
আবু হেলাল বলেন, ‘যুদ্ধের এক কঠিন সময়ে সে জন্ম নিয়েছে, যুদ্ধেই শহীদ হয়েছে।’
কথা বলার সময় চোখের পানি ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছিল এই ফিলিস্তিনি তরুণের। তিনি বলেন, ‘তাদের (ইসরায়েল) লক্ষ্যবস্তু নিষ্পাপরা। তারা খুব কমই জীবন দেখেছে।’
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় পারিবারিক বসতি দেখতে গিয়েছিলেন আবু হেলাল। ঠিক তখনই মাওসিতে তাদের তাঁবুতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। খান ইউনিসের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর তাঁবু এই মাউসি এলাকায় অবস্থিত।
Advertisement
যুদ্ধের সময় রাফায় তাদের ঘরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে কোনো কিছু লুট হয়েছে কি না তা দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। ২০ বছর বয়সী এই তরুণ বলছিলেন, ‘আমাকে একা রেখে তারা সবাই চলে গেছেন। অনাগত শিশুটিও নিহত হয়েছে।’
গত বছরের মে মাসে আবু হেলালের পরিবারকে রাফা ছাড়তে বাধ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী। তার কিছুদিন আগে জন্ম নেয় তার প্রথম সন্তান মোহাম্মদ। যুদ্ধে রাফাহ অঞ্চলের বেশিরভাগ বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
‘পরিবার ও শিশুদের নিরাপদ রাখতে আপনি পালিয়ে গেলেন। কিন্তু তারপরও তারা নিহত হলেন। তাদের সবাই নিহত,’ বলেন এই ফিলিস্তিনি এই তরুণ।
সূত্র: এপি, ইউএনবিকেএএ/