রাজধানীর পিলখানায় অবস্থিত মুন্সী আবদুর রউফ স্কুলে ছেলেকে নামিয়ে দিয়ে লালবাগের বাসায় ফিরছিলেন ব্যবসায়ী আবু তাহের মন্ডল। বিজিবির তিন নম্বর গেট থেকে নিউমার্কেটের সামনে দুই মিনিটের মধ্যে চলে এলেও নীলক্ষেত চৌরাস্তার সিগন্যালে পড়েন। এক মিনিট, দুই মিনিট করে বিশ মিনিট কেটে গেলেও সিগন্যাল ছাড়লো না। ২০ মিনিটেও সিগন্যাল না ছাড়ায় ড্রাইভারকে ডেকে ব্যাপার কী দেখতে বললেন আবু তাহের। ড্রাইভার রাস্তার ডিভাইডারের ওপর দাঁড়িয়ে দেখেন, মিরপুরগামী বাসগুলোর কয়েকটি থেমে যাত্রী তুলছে, আর কিছু দ্রুতগতিতে সায়েন্স ল্যাবরেটরিরর দিকে ছুটে যাচ্ছে। পাশ থেকে একজন রিকশাচালক হাঁক ছাড়েন, আইজকা যেমন গরম পড়ছে তেমনি যানজট লাগছে। ট্রাফিক পুলিশের তো পোয়া বারো। যত জ্যাম, তত ইনকাম বলে হাসতে লাগলেন রিকশা চালক। জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক রিকশাচালকের কথার সত্যতা যাচাই করতে নীলক্ষেত মোড়ের সিগন্যালে অবস্থান নেন। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, রমজান শুরুর দুই সপ্তাহ বাকি থাকলেও এ রাস্তায় যানজট বেড়ে গেছে। একাধিক পুলিশ সার্জেন্ট ও ট্রাফিক কনস্টেবল যানজট এড়িয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অটোমেটিক মেশিনে লাল, সবুজ ও হলুদ বাতি নির্দিষ্ট সময় পর পর জ্বললেও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে হাতের ইশারাতেই চারদিকের সিগন্যালে অবস্থানরত গাড়ি যাচ্ছে-থামছে।সিগন্যালে বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনের অবস্থানের সময় সুষ্ঠুভাবে বণ্টন হচ্ছে না। সিগন্যাল পড়লে নীলক্ষেত মোড় থেকে মিরপুর, এয়ারপোর্ট ও গাজীপুরগামী কিছু বাসকে এলিফ্যান্ট রোডের দিকে ছুটতে দেখা গেলেও অধিকাংশ বাসকে দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী তুলতে দেখা যায়। যে বাসগুলো দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে সে বাসের হেলপারদের সামনে গিয়ে ট্রাফিক কনস্টেবল দাঁড়ালেই তাদের হাতে টাকা গুঁজে দিতে দেখা যায়। টাকা না দিলে সিগন্যাল ছাড়লেই দৌড়ের ওপর থাকতে হয় বলে জানালেন একাধিক বাসের হেলপার।তারা জানান, এ রুটে অসংখ্য বাস চলাচল করায় স্ট্যান্ডে একটু বেশি সময় দাঁড়ালে প্যাসেঞ্জার পাওয়া যায়। তাই তারা ট্রাফিক কনস্টেবলকে ১০/২০ টাকা উৎকোচ দিয়ে অবস্থান নেন। টাকা দেয়ার ব্যাপারটি এখন ‘ওপেন সিক্রেট।’ আবদুস সালাম নামে এক পথচারী জানান, তিনি নিয়মিত নীলক্ষেত থেকে চাকরির জন্য মিরপুর টেকনিক্যাল যান। প্রায় প্রতিটি সিগন্যালে এ দৃশ্য দেখতে পান। মিলন নামের এক যুবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে রুটে বাস চলাচল বেশি সেদিকে ট্রাফিক পুলিশ বেশি সময় ছেড়ে রাখে। অথচ ওই পাশে যে অসংখ্য লোক দাঁড়িয়ে থাকে সেদিকে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। আজাদ পাটোয়ারী নামে এক পান-সিগারেট বিক্রেতা বলেন, প্রতিটি সিগন্যালে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগালে উৎকোচ বন্ধ হতে পারে। নীলক্ষেত মোড়ে কর্তব্যরত একাধিক পুলিশ সার্জেন্টকে আজ দুপুরে প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে ঘর্মাক্ত অবস্থায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। তাদের একজনের সঙ্গে অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে ওই তিনি কনস্টেবলের এ ‘ছোটখাট’ বিষয় নিয়ে না লেখার জন্য এ প্রতিবেদককে অনুরোধ জানান। এমইউ/এনএফ/এআরএস/এবিএস
Advertisement